বজ্রপাতের প্রচণ্ড গর্জন এবং আলোর ঝলকানি মহান আল্লাহতায়ালার মহাশক্তির বহিঃপ্রকাশ। বজ্রপাতের গর্জন ও আলোর ঝলকানি মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সতর্কবাণী। বজ্রপাতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান ও সতর্ক করে থাকেন। তিনি চাইলে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে তাঁর অবাধ্য সীমা লঙ্ঘনকারী বান্দাদের শাস্তি প্রদান করতে পারেন। যদিও আল্লাহতায়ালা সব সময় তাঁর বান্দাদের প্রতি শাস্তিদানের মতো কঠোর আচরণ করেন না। কেননা, আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য রাহমান, রাহিম, গাফুর ও গাফ্ফার।
মহান আল্লাহতায়ালা বজ্রপাত প্রসঙ্গে কোরআনে এরশাদ করেন, ‘মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং ফেরেশতারা তাঁর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে তাসবিহ পাঠ করে; তিনি বজ্রপাত করেন এবং (অনেক সময়) তাকে যার ওপর চান, ঠিক সে যখন আল্লাহ সম্পর্কে বিত-ায় লিপ্ত, তখনই নিক্ষেপ করেন। অথচ আল্লাহতায়ালার শক্তি কৌশল ও শক্তি বড়ই জবরদস্ত।’ (সুরা রা’দ : ১৩)।
পথহারা মানুষের জন্য মেঘের গর্জন ও বিদ্যুৎচমক শিক্ষণীয় বিষয়। কারণ মেঘের গর্জন এ কথা প্রকাশ করে যে, আল্লাহতায়ালা যে বায়ু পরিচালিত করেন, বাষ্প ও মেঘমালাকে একত্র করেন। এ বিদ্যুৎকে বৃষ্টির মাধ্যম বা উপলক্ষ্য বানান এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকুলের জন্য তিনি পানির ব্যবস্থা করেন। তিনি যাবতীয় ভুল-ত্রুটি-অভাব মুক্ত। তিনি জ্ঞান ও শক্তির দিক থেকে পূর্ণতার অধিকারী। পশুর মতো নির্বোধ শ্রবণশক্তির অধিকারী তো এ মেঘের মধ্যে শুধুই গর্জনই শুনতে পায়; কিন্তু বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন সজাগ শ্রবণশক্তির অধিকারী ব্যক্তিরা মেঘের গর্জনের মধ্যে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নির্দশন দেখতে পান।
আল্লাহদ্রোহিতা ও জুলুম-অত্যাচার, জেনা-ব্যভিচারসহ যাবতীয় মানবতা বিবর্জিত অন্যায় কাজেই এ বজ্রপাতের মূল কারণ। এসব বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমক থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় পরিত্যাগ করতে হবে। নিজেদের গোনাহ থেকে খাঁটি তওবা করতে হবে। যারা খাঁটি তওবার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার দিকে ফিরে আসবে, তারাই বজ্রপাত থেকে মুক্ত থাকবে।
হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দারা যদি আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম আর সকাল বেলায় সূর্য (আলো) দিতাম এবং কখনও তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ)।
কোরআন এবং হাদিসের বর্ণনায় এ কথা সুস্পষ্ট যে, বজ্রপাত পরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক মহা দুর্যোগ। আল্লাহ প্রদত্ত এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে থাকতে হলে কোরআন-হাদিসের নির্দেশ পালনের বিকল্প নেই।
পত্র-পত্রিকায় দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে। আবার একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে, যা মানুষের জন্য তাদের অবাধ্যতার সতর্কবাণী। কোরআনের বিধান পালন এবং প্রিয়নবী (সা.) এর শেখানো তাসবিহ ও দোয়া পাঠে বজ্রপাতের দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষায় প্রিয়নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া ও তাসবিহ শিখিয়েছেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন- ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্বাবলা জালিকা।’ ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেল না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নাও।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে- হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে- ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।’ তথা ‘আল্লাহ পবিত্র এবং প্রশংসা তারই জন্য’- সে বজ্রপাতের আঘাত থেকে মুক্ত থাকবে। (মুসান্নেফে আবি শায়বা)।
অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এ আয়াত পাঠ করতেন- ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রাদদু বিহামদিহি ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খি-ফাতিহি।’ অর্থ : ‘আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার পবিত্রতা ঘোষণা করছে মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসার সঙ্গে।’ আর ফেরেশতাকুল প্রশংসা করে ভয়ের সঙ্গে। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)।
তাই মেঘের গর্জন তথা বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহতায়ালার বিধান মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি বজ্রপাতের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকতে প্রিয়নবী (সা.) এর শেখানো দোয়া ও তাসবিহগুলো পড়া উচিত। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মেঘের গর্জন তথা বজ্রপাতের সময় আল্লাহর প্রশংসা করা, সব ধরনের অন্যায় ও অবাধ্য আচরণ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং তার বিধান পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।