ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মৌমাছি আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি

মো. জোবাইদুল ইসলাম
মৌমাছি আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি

মৌমাছি আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। আল কোরআনে যেসব কীটপতঙ্গের বর্ণনা এসেছে, তন্মধ্যে মৌমাছি অন্যতম। মৌমাছির নামে একটি সুরার নামকরণও করা হয়েছে তা হলো, সুরা আন নাহল। এ সুরায় আল্লাহ তায়ালা মৌমাছি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমার রব মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়, বৃক্ষ এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। (সুরা আন নাহল : ৬৮)।

পরের আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এরপর প্রত্যেক ফল থেকে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর। ওর উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিষেধক। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সুরা আন নাহল : ৬৯)।

আলোচ্য আয়াত দুটিতে আল্লাহতায়ালা মৌমাছি সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি তাদের দ্বারা সৃষ্ট মধুর গুণাগুণও বর্ণনা করেছেন। মধু সাদা, হলদে, লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। ফল, ফুল ও মাটির রঙের বিভিন্নতার কারণেই মধুর এই বিভিন্ন রং হয়ে থাকে। মধুর বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চমকের সঙ্গে সঙ্গে এর দ্বারা রোগ থেকেও আরোগ্য লাভ হতে থাকে। আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা বহু রোগ থেকে আরোগ্য দান করে থাকেন।

আয়াতে ‘তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর’ দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কোন নতুন বাগান বা ফুলের সন্ধান পাওয়ার পর একটি মৌমাছি আবার মৌচাকে ফিরে যায় এবং মৌমাছিনৃত্য নামক আচরণের মাধ্যমে তার সহকর্মী মৌমাছিদের সেখানে যাওয়ার সঠিক গতিপথ ও মানচিত্র বলে দেয়। অন্যান্য শ্রমিক মৌমাছিকে তথ্য দেওয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের আচরণ আলোকচিত্র ও অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যের কথা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মৌমাছি প্রত্যাবর্তনের সময় সরাসরি নিজেদের মৌচাকে পৌঁছে যায়। উঁচু পাহাড়ের চূড়া হোক, মরু প্রান্তর হোক, বৃক্ষ হোক, লোকালয় হোক, জনশূন্য স্থান- যাই হোক না কেন, ওরা পথ ভোলে না। যত দূরেই গমন করুক না কেন ওরা প্রত্যাবর্তন করে সরাসরি নিজেদের মৌচাকে নিজেদের বাচ্চা, ডিম ও মধুতে পৌঁছে যায়।

আলোচ্য আয়াত দুটিতে মহান আল্লাহতায়ালা মৌমাছিকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন। আগে মানুষ ভাবত কর্মী মৌমাছিরা পুরুষ এবং ঘরে ফিরে এসে তাদের একটি রাজা মৌমাছির কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়। কিন্তু এটা সত্য নয়, কারণ আল্লাহতায়ালা কোরআনে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা প্রমাণ করে, শ্রমিক মৌমাছিরা স্ত্রী এবং তারা রাজা নয় বরং রানি মৌমাছির কাছে জবাবদিহি করে।

আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগের প্রতিষেধক। অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মধুতে মানুষের জন্য আরোগ্য রেখেছেন। এ সম্পর্কে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসুল (সা) এর কাছে এসে বলল, আমার ভাইয়ের পেট ছুটে গিয়েছে। (অর্থাৎ খুব পায়খানা হচ্ছে)। তিনি বলেন, তাকে মধু পান করিয়ে দাও। সে গেল এবং তাকে মধু পান করাল। আবার সে এলো এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা)! তার রোগ তো আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এবারও বললেন, যাও তাকে মধু পান করাও। সে গেল এবং তাকে মধু পান। করাল। পুনরায় এসে সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! তার পায়খানা তো আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বললেন, আল্লাহ সত্যবাদী এবং তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। তুমি যাও এবং তাকে মধু পান করাও। সে গেল এবং তাকে মধু পান করাল। এবার সে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করল। (বোখারি ও মুসলিম)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনটি জিনিসে শিফা বা রোগ মুক্তি রয়েছে। শিঙা লাগানো, মধুপান এবং (গরম লোহা দ্বারা) দাগ দিয়ে নেওয়া। কিন্তু আমার উম্মতকে আমি দাগ নিতে নিষেধ করছি। (বোখারি)।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টি এই ক্ষুদ্র পতঙ্গ মৌমাছির সৃষ্ট ঘরটি দেখলে বিস্মিত হতে হয়। ওটা কতই না মজবুত, কতই না সুন্দর এবং কতই কারুকার্য খচিত!

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত