হাদিস শরিফে আছে, ‘দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের কৃষিক্ষেত্র’। জীবনধারণের জন্য পার্থিব সম্পদ ও উপকরণ আহরণ তা প্রতিপালন এবং সংরক্ষণের সাধারণ নাম কৃষি। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। কৃষি সম্পর্কেও ইসলাম পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। কোরআন মজিদ ও হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় মৌলিক নীতি ঘোষিত হয়েছে এবং কৃষির উন্নয়নের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামের মৌলিক নীতির আলোকে কৃষি ও মানবকর্ম বিষয়ক ধারণা সবার জানা দরকার।
রিজিক
আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিজিকদাতা। মানুষ ও অন্যসব প্রাণীর আহার্যের উপকরণ তারই সৃষ্টি। মহান আল্লাহতায়ালা খাবার বা আহার্যের উপকরণগুলোকে অনুগ্রহ করে মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। এসব বিষয়ের বর্ণনায় কোরআন মজিদে বহু আয়াত নাজিল হয়েছে যেমন- ‘তোমরা কি দেখ না আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহতায়ালা তার সমস্তই তোমাদের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। তোমাদের ওপর তার (আল্লাহর) প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন।’ (সুরা লুকমান : ২০)। পশুপাখি লালন-পালন প্রসঙ্গে, ‘তিনি পশুকুল সৃষ্টি করেছেন। এগুলোতে রয়েছে তোমাদের জন্য শীত নিবারক উপকরণ ও উপকার। আর তা থেকে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক।’ (সুরা আন নাহল : ৫)। মাছ চাষ সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি জলরাশিতে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ আহার করতে পার।’ (সুরা নাহল : ১৪)।
অন্যদিকে মহান আল্লাহতায়ালার ঐশী কুদরতের দ্বারা আমরা মাটি থেকে ফসল ফলাই। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি তো অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অতঃপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষ বিশিষ্ট বাগান, ফলফলাদি ও ঘাস। এসব তোমাদের ও তোমাদের পালিত পশুকুলের জীবনধারণের জন্য।’ (সুরা আবাছা : ২৪-৩২)। কোরআন মজিদে আরও বলা হয়েছে- ‘বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেছেন পানি, অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা-নহল : ৬০)।
ফসল উৎপাদনে মানবীয় পরিশ্রমের ফলে খাদ্য উৎপাদন হয় না বরং বীজ থেকে চারা, ভূগর্ভস্থ থেকে সেচ, শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ, প্রতিটি কাজই হয় আল্লাহতায়ালার কুদরতি ব্যবস্থাপনায়। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা থেকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী? ইচ্ছা করলে, আমি তা খড়কুটা করে দিতে পারি। অতঃপর তোমরা হয়ে যাবে হতভম্ব।’ (সুরা ওয়াক্বিয়া : ৬৩-৬৫)। তাছাড়া ‘তোমরা যে পানি পান কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি। আমি ইচ্ছা করলে তা লোনা করে দিতে পারি। এসত্ত্বেও তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না।’ (সুরা ওয়াক্বিয়া : ৬৮-৭০)।
রিজিক অন্বেষণ
মানুষকে খাদ্যবস্তু ও জীবন নির্বাহের উপকরণ ও উপাদান সংগ্রহ ও সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআন মজিদে এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা রয়েছে। যেমন- ‘তিনিই তোমাদের জন্য মাটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এর দিক দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার দেওয়া রিজিক আহার কর। পুনরুজ্জীবন তারই কাছে হবে।’ (সুরা মূলক : ১৫)। কোরআন মজিদের অন্যত্রে বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অন্বেষণ কর এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর- যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমায়াহ : ১০)। কোরআন মজিদের নির্দেশনার পাশাপাশি হাদিস শরিফে জীবন নির্বাহে কৃষিকর্মের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জমিনের প্রচ্ছন্ন লুকায়িত ভান্ডারে খাদ্য অন্বেষণ কর।’ (তিরমিজি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এটা দুর্ভিক্ষ নয় যে, তোমরা বৃষ্টি পাও না বরং এটা দুর্ভিক্ষ যে, তোমরা বৃষ্টির ওপর বৃষ্টি পাও; অথচ ভূমিতে কিছু জন্মায় না।’ (মুসলিম)। হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘ফজরের নামাজের পর তোমরা জীবিকা অর্জনের কাজে অমনোযোগী হয়ে আবার ঘুমিয়ে যেও না।’ (কানযুল উম্মাল)।
জীবন নির্বাহ
শরিয়তসম্মত ও হালাল রিজিক খাওয়া মোমিনের জন্য আবশ্যক। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘ভালো যা তোমাদের দিয়েছি তা থেকে খাও।’ (সুরা আরাফ : ১৬০)। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হালাল উপার্জনের অন্বেষণ ফরজ ইবাদাতের পরই আরেকটি ফরজ।’ (বায়হাকি)। হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘সৎ পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত খাদ্যই যে কোনো লোকের পবিত্রতম বা সর্বোত্তম হালাল খাদ্য।’ (বোখারি)। এসব উদ্ধৃতি থেকে বিচার করলে কৃষি অর্থাৎ ফসল উৎপাদন, বনায়ন, পশুপালন, মৎস্য চাষ ইত্যাদি কাজকে আমরা মানুষের শ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম জীবিকার উপায় হিসেবে দেখতে পাই।
কৃষি কাজের গুরুত্ব
ইসলামে কৃষি কাজের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষরোপণ করে কিংবা খাদ্যশস্যের বীজ বপন করে, অতঃপর তা থেকে কোনো মানুষ, পাখি অথবা পশু কিছু অংশ খায়, তবে তার জন্য এই কাজ (বীজ বপন) সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ (বোখারি, মুসলিম)। ওই হাদিস থেকে আমরা বিভিন্ন ধারণা পাই- প্রথমত, কৃষিকাজ করা কিংবা গাছ লাগানো জীবিকার একটি স্বাভাবিক মাধ্যম। যার উপকারিতা ও কল্যাণ মানুষ এবং পশুপাখি তথা সব জীবের ওপর সমভাবে পৌঁছে থাকে। দ্বিতীয়ত, কৃষিক্ষেত্র থেকে মানুষ বা পশুপাখি যারই উপকার ও কল্যাণ সাধিত হোক তার বিনিময়ে অবশ্যই সে (কৃষিক্ষেত্র তৈরিকারী) নেকি পেতে থাকে। তৃতীয়ত, কৃষির উন্নতি বিধান করা অবশ্যই জরুরি। কেননা কৃষি ব্যতিরেকে মানুষ কিংবা পশুপাখি সবার জীবন ও জীবিকাই সংকীর্ণ ও রুদ্ধ হয়ে থাকে।
মহানবী (সা.) কোনো আবাদযোগ্য ভূমি কৃষিকাজ ব্যতিরেকে পতিত কিংবা অনাবাদি না রাখার জন্য দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো পতিত ভূমি আবাদ করবে, সে সেই জমির মালিক হবে। এ ঘোষণার প্রতিধ্বনি আরেকটি হাদিস আছে, ‘যে ব্যক্তি এমন অনাবাদি জমি আবাদ করে যা অন্যের নয়, সে ওই জমির মালিকানার ব্যাপারে অর্ধেক দাবিদার।’ (বোখারি)। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘যার জমি আছে সে যেন নিজেই তা চাষ করে। যদি নিজে চাষ না করতে পারে তবে (পতিত না রেখে) কোনো প্রতিদান ছাড়াই যেন অপর ভাইকে তা দান করে।’ (মুসলিম শরিফ)।
কৃষি উন্নয়নমূলক সংস্কারে হজরত ওমর (রা.) এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি সমগ্র বিজিত এলাকায় নদীনালা সংস্কার, বাঁধ নির্মাণ, পুকুর খনন, জলাধার তৈরি ইত্যাদি কাজ করেছেন। স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠাসহ শুধু মিশরেই প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক বার্ষিক ভিত্তিতে এই কৃষি সংস্কার উন্নয়নমূলক কাজে নিযুক্ত ছিল। কোরআন মজিদের বহু স্থানে বৃক্ষ, তরুলতা, বাগান ও উদ্যানের কথা উল্লেখ করে এর নানাবিধ উপকারের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে। ‘যিনি নানা প্রকারের লতা বিশিষ্ট ও কাণ্ডের ওপর দণ্ডায়মান বিশিষ্ট বাগান খেজুর গাছ ও নানা প্রকার খাদ্যের উদ্ভিদ, ভেষজ, ফলফলাদি, জয়তুন ও আনারের গাছ সৃষ্টি করেছেন, যা বাহ্যিক রূপে সাদৃশ্যপূর্ণ; কিন্তু স্বাদে সাদৃশ্যহীন।’ (সুরা আনআম : ১৪১)। কোরআন মজিদে বলা আছে, ‘আমি জলাধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত বর্ষণ করি, যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও পাতাঘন উদ্যানরাজি।’ (সুরা আন নাবা : ১৪-১৬)।
মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রাণিজ আমিষের প্রয়োজন এবং পশুপাখিই এই উৎস। নবীজি আরও বলেছেন, তোমরা ভেড়া পালন কর। কারণ এরা সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তিনি আরও বলেন, দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালার প্রেরিত সব নবীই মেষ চরিয়েছেন। নবীজি নিজেও মেষ পালন করেছেন। সুরা বাকারা ও সুরা আনয়াম- এই দুটি সুরার নামকরণ করা হয়েছে পশুর নামানুসারে। বাকারা শব্দের অর্থ গাভী এবং আনয়াম শব্দের অর্থ পশুসম্পদ। জলরাশিকে মাছ চাষের উপযোগী করে অসংখ্য প্রজাতির বিচিত্র মাছ আল্লাহ তৈরি করেছেন, যাতে মানুষ সাগর-মহাসাগর, নদনদী, পুকুর, হাওর-বাঁওড়, হ্রদ ইত্যাদি থেকে মাছ আহরণ করতে পারে এবং প্রয়োজন মতো পুকুর, ডোবা ও খাল বিলে মাছ চাষ করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘দুটি দরিয়া এক রকম নয়, একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয় এবং অপরটির পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ। তোমরা প্রত্যেকটি থেকে মাছ ধরে এর তাজা গোশত খাও।’ (সুরা ফাতির : ১২)।
সুস্বাদু ফলফলাদি-জ্বালানি ও গৃহসামগ্রী তৈরিতে গাছের তথা বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের ভারসাম্য বজায়, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার অন্যতম হাতিয়ার বনায়ন। মহানবী (সা.) বৃক্ষরোপণের জন্য সাহাবিদের উৎসাহিত করেছেন। তিনি নিজেও বাগানে কাজ করেছেন। তিনি বৃক্ষরোপণ ও ফসল বপনকে সদকায়ে জারিয়ার কাজ বলেছেন। ‘কোনো মুসলমান বৃক্ষরোপণ অথবা শস্য বপন করলে যদি তা থেকে কোনো মানুষ, পাখি অথবা পশু কিছু আহার করে তবে তা তার জন্য সাদাকাস্বরূপ হবে।’ (বোখারি, মুসলিম)। বৃক্ষরাজি, তরুলতা ও উদ্ভিদ আল্লাহতায়ালার নেয়ামত। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে এবং জমিনকে বিদীর্ণ করে আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য এগুলো সৃষ্টি করেছেন। খাবার, ফলমূল, পশুর খাদ্য ইত্যাদি আমরা বিভিন্ন গাছগাছালি থেকে পেয়ে থাকি। এ সম্পর্কে কোরআন মজিদে উল্লেখিত আছে, ‘তিনি আমাদের জন্য বৃষ্টির দ্বারা জন্মান শস্য, জয়তুন খেজুর বৃক্ষ এবং সর্ব প্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা নাহল : ১১)।
প্রতিপালন ও সংরক্ষণ
কৃষি কাজের ওপর গুরুত্বের পাশাপাশি উপকরণগুলোর সদ্ব্যবহার ও উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে বর্ণিত আছে- ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবনধারণের উপকরণ) স্মরণ কর। আর জগতে বিনষ্টকারী ও বিপর্যয়কারী হয়ো না।’ (সুরা আল আরাফ : ৭৪)। এ প্রসঙ্গে হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘নবী করিম (সা.) সম্পদ নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। নবীজি বৃক্ষনিধন এমনকি অকারণে বৃক্ষের পাতা ছিঁড়তেও নিষেধ করেছেন। শস্য ব্যবহারের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রহ করা বা বিক্রয় করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ফলে পরিপক্বতা দেখা না দেওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।’ (বোখারি, মুসলিম)। জগতে সব প্রাণীই আল্লাহর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস শরিফে আছে- ‘সব সৃষ্টি আল্লাহর পরিবারে অন্তর্ভুক্ত। অতএব, যে ব্যক্তি তার সৃষ্টি (প্রাণী ও উদ্ভিদ সব জীব)-এর প্রতি উত্তম আচরণ করবে, সে তার কাছে অধিক প্রিয়।’ (বায়হাকি)। উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণের ধারণা কোরআন মজিদের সুরা ইউসুফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বহু বছর আগে নবী হজরত ইউসুফ (আ.) মিসরের দায়িত্বকালে শস্য সংরক্ষণ রীতি অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে পর পর সাত বছরের দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস থেকে তার দেশবাসী মুক্তি পেয়েছিল। আল্লাহপাক কোরআন মজিদে এ ব্যবস্থাপনার বর্ণনা করেছেন- ‘তিনি (ইউসুফ আ.) বললেন, তোমরা সাত বছর উত্তমরূপে চাষাবাদ করবে। অতঃপর যে ফসল পাওয়া যাবে তার মধ্য থেকে সামান্য পরিমাণ খাবে, অবশিষ্ট শস্য শিষসমেত রেখে দেবে। আর এরপর আসবে দুর্ভিক্ষের সাত বছর। তোমরা এ দিনের জন্য যা সঞ্চিত রেখেছিলে তা খেয়ে যাবে; কিন্তু অল্প পরিমাণ ব্যতীত যা তোমরা তুলে রাখবে।’ (সুরা ইউসুফ : ৪৭-৪৮)। ইসলামের দৃষ্টিতে সংরক্ষণের আরেকটি দিক হলো অপচয় না করা। অপচয় উৎপাদনের সুফল নস্যাৎ করে এবং আর্থিক সচ্ছলতা ধ্বংস করে। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে- ‘তোমরা অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬-২৭)।
অতঃপর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের সম্পদ বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)। শুকরিয়া জানাই নজরুলের অমর বাণীর মাধ্যমে-
‘এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল
মিঠা নদীর পানি, খোদা তোমার মেহেরবানি’।
লেখক : আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি
তথ্য সার্ভিস, সিলেট