প্রতিটি স্বামী-স্ত্রী-ই চায় যে, তাদের সংসার সুখের হোক। ভালোবাসায় ভরে থাকুক পুরো জীবন। দাম্পত্য জীবন সুখময় হোক। এর জন্য একেকজন একেকভাবে চেষ্টা করে থাকে। ক’জনকে পাবেন যে চায়, তার সংসার কোলাহলে ভরে থাকুক। সংসারে অশান্তি আসুক। এরকম পাওয়া যাবে না। এমনিভাবে কোনো মেয়েও কখনও চায় না যে, তার সংসার অসুখী হোক। তাদের বিচ্ছেদ ঘটুক। এজন্যই দাম্পত্য জীবন সুখময় করার ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমের সঙ্গে-সঙ্গে প্রতিটি স্ত্রীর ভূমিকা থাকে অতুলনীয়।
একজন আদর্শবান স্ত্রী-ই পারে একটা সংসারকে অন্যরকমভাবে সাজাতে। সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করতে। এজন্য স্ত্রীকে ঘরের রানি বলা হয়ে থাকে। কোনো পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে রানি বানিয়ে রাখে, তাহলে স্ত্রীও নিজ স্বামীকে ঘরের রাজা বানিয়ে রাখবে। তাই সুখীময় জীবনযাপনে স্বামীর ভূমিকাও কম নয়। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকা অতুলনীয়। প্রতিটি স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি বিশেষ কিছু জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই সব সংসারে সুখ আসবে ইনশাআল্লাহ। তাই প্রতিটি মেয়েকে বলব; অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ করে খেয়াল রাখা।
১. স্বামী ঘুম থেকে ওঠার আগে নিজে উঠে পরিপাটি হয়ে নেওয়া, যাতে স্বামী আপনাকে সকাল বেলাই অপরিপাটি না দেখে। তার সঙ্গে সুগন্ধি ব্যবহার করুন, যাতে সকালে আপনাকে দেখেই আপনার স্বামীর মন ভরে যায়।
২. তার ঘুম যেভাবে ভাঙালে সে পছন্দ করবে, সেভাবে তাকে ঘুম থেকে জেগে তুলুন।
৩. তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে তবেই অন্য কাজে যাবেন এবং সে তার কাজে যাওয়ার সময় কপালে আর বুকে দুইটা ‘সুন্নতি স্পর্শ’ দিয়ে দিন।
৪. সে কখন বাসায় আসতে পারে তা অনুমান করে পরিপাটি হয়ে থেকে তার অপেক্ষা করুন এবং সে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিন, একটা মুচকি হাসি দিয়ে দিন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় সর্বদা হাসি মুখে কথা বলুন।
৫. তার সামনে কখনও গন্ধ নিয়ে যাবেন না। সবসময় একটা সুঘ্রাণ রাখুন নিজের শরীরে।
৬. পরিপূর্ণ পর্দা করুন।
৭. স্বামীকে তাহাজ্জুদ এবং ফজরের নামাজের জন্য ডেকে দিন। আল্লাহর তরফ থেকে স্বামীর হৃদয়ে আপনার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা জন্ম নেবে।
৮. স্বামীর মনে কখনও আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না।
৯. কখনও স্বামীকে নিজের ওপর রাগ হতে দেবেন না বরং স্বামী যে ইশারায় চালাতে চায় সে ইশারায় চলুন (নাফরমানি কাজ ব্যতীত)।
১০. স্বামী কোনো কাজ করতে আদেশ করলে সঙ্গে হাসি-খুশির সঙ্গে কাজ করে দিন।
১১. স্বামীর কাছে থাকাকালীন তার অনুমতি ব্যতীত কোনো নফল ইবাদত করবেন না। স্বামীর খেদমত অন্যান্য নফল ইবাদাত থেকেও উত্তম।
১২. পৃথিবীর কোনো মানুষের গিবত না করা।
১৩. স্বামীর হুকুম ছাড়া স্বামীর মাল থেকে কাউকে দান বা ঋণ না দেওয়া। এটা জায়েজ নেই।
১৪. স্বামীর কোনো দোষের কথা পৃথিবীর কোনো মানুষকে না বলা; বরং স্বামীর মাথা যখন একদম ঠান্ডা থাকবে তখন স্বামীকে হাসিমুখে বিনয়ের সঙ্গে তার ভুল ধরিয়ে ও শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা।
১৫. স্বামীর কোনো কাজ নিজের মতের বিরুদ্ধে হলেও তর্ক না করা।
১৬. স্বামী যা আনুক তা এক টাকার হলেও এমন একটা ভাব করুন যেন এটা আপনার কাছে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এতে পুরুষরা স্বস্তি পায়।
১৭. স্বামীর বাড়িতে যতই কষ্ট থাকুক, স্বামীর সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করুন। তবে হায়হুতাশা করে স্বামীকে কষ্ট দেবেন না।
১৮. স্বামীর মেজাজ বুঝে ব্যবহার। তার মুখে হাসি থাকলে আপনিও হাসুন। আর তার মনে কোনো কারণে খারাপ থাকলে আপনিও তার মন খারাপের ভাগিদার হোন, মন খারাপের সময় হেসে এটা প্রকাশ করবেন না যে, তার মন খারাপে আপনার কিছু যায়-আসে না। আর মেজাজ খারাপ থাকলে একদম চুপ থাকবেন।
১৯. স্বামী আপনাকে যে টাকা দেবে তা ১০০ শতাংশ তাকে হিসাব দিয়ে দিন। আপনার ওপর একটা অন্যরকম বিশ্বাস সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ।
২০. শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করুন এবং শ্বশুরবাড়ির সবাইকে ভালোবাসুন।
২১. স্বামীকে মনের ভুলেও কাজ করতে দেবেন না; বরং তাকে ঠিক কাচের পুতুলের মতো রাখার চেষ্টা করুন।
২২. ঘরের কাজ কারও জন্য ফেলে রাখবেন না।
২৩. স্বামী বাবা-মার কাছে টাকা দিলে তা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। (তাদের ছেলের টাকা তারা নেবে না তো কে নেবে?)
২৪. স্বামী কোনো সফর থেকে ফিরলে তাকে খেদমত করুন, প্রশ্ন করুন পরে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো দেখলে হয়তো একদল নারীবাদী বলে থাকবে- এ তো স্বামীর গোলামি ছাড়া আর কিছুই নয়! আমি বলব এগুলো গোলামি নয়; বরং এগুলো হচ্ছে দাম্পত্য জীবন সুখময় হওয়ার কিছু টিপস। যার অভিজ্ঞতা হাজারো জনের রয়েছে। মনে রাখবেন, আপনি অন্যের জন্য যা করবেন অন্যও আপনার জন্য তা করতে বাধ্য হবে। আপনি উপরোক্ত টিপসগুলো মেনে চলেন, তাহলে দেখবেন অবাধ্য স্বামীটাও একদিন এরকম হবে যে, আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। আপনার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকবে। ভালোবাসাতে কোনো কমতি করবে না। ঝগড়াঝাটি করা বা আপনাকে দু’চোখে দেখতে না পারা শ্বশুর-শাশুড়িও আপনার হাতে খাবার না তুলে দিলে খেতেই চাইবে না। আপনাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না। তাই পরিশেষে বলি, অন্যের জন্য করুন অন্যও আপনার জন্য করবে। ইনশাআল্লাহ। এভাবেই গড়ে উঠবে সুখময় দাম্পত্য জীবন। আল্লাহতায়ালা আমাদের বোনদেরসহ সবাইকে আমল করার ও বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখিক : আলেমা, প্রাবন্ধিক