জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। মানবজাতির এ বিপর্যয়ের পেছনে যতটা না প্রাকৃতিক কারণ তার চেয়ে বেশি দায়ী মানুষের অসতর্কতা। কেননা, মানুষই পৃথিবীর সবুজ গাছপালা কেটে ফেলছে। বনভূমি উজাড় করে ফেলছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
ইসলামে যেমন ইবাদতের তাৎপর্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে পরিবেশের গুরুত্ব। কোনো পরিবেশে বসবাস করলে মানুষের সুবিধা হবে বা মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারবে, ইসলাম তা সুনিশ্চিত করেছে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে; যেমন গাছপালা, বাড়িঘর, মাটি, পানি, বায়ু, জীবজন্তু, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, যানবাহন, কলকারখানা ইত্যাদি নিয়েই পরিবেশ। এগুলো সবই মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এরশাদ হচ্ছে- ‘আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং এতে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি। আমি পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তু সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি। এতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও, তাদের জন্যও। প্রতিটি বস্তু ভা-ার আমার কাছে রয়েছে। আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি। আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি। এরপর আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করি। তা তোমাদের পান করতে দিই। এর ভা-ার তোমাদের কাছে নেই।’ (সুরা হিজর : ১৯-২২)।
মানুষ ও অন্য সৃষ্টিজীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান খুব দরকার। এগুলোর বিনাশ বা ক্ষতিসাধন করা হলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। অথচ ইসলাম তার অনুসারীদের সামগ্রিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখতে চায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং উন্নত জীবনমান পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বতকে ধ্বংস না করার জন্য সতর্কবাণী দিয়ে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। এরপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছে আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছে তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম : ৪৮)।
যেখানে-সেখানে, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা, কফ, থুথু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নোংরা ও দূষণযুক্ত পরিবেশ রোগব্যাধির প্রধান কারণ। তাই এসব দূষণযুক্ত পরিবেশের কবল থেকে পরিবেশ-পরিচ্ছন্ন রাখলে মারাত্মক ও সংক্রামক রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে এসব নোংরা পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার ওপরই নির্ভর করে জনস্বাস্থ্যের সফলতা। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে সবার যথোচিত দায়িত্ব পালন করা উচিত। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ ও রুচিহীনতা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। অথচ ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। সুস্থতা, সৌন্দর্য, মননশীলতা, উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির কথা বলে ইসলাম। সুতরাং ময়লা-আবর্জনা দিয়ে পরিবেশ দূষিত করা ঠিক নয়। নবী (সা.) সাবধান করে বলেছেন ‘তোমরা তোমাদের আঙিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখো।’ (তিরমিজি : ২৭৯৯)। পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার ব্যাপারে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম : ২২৩)।
সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কোনো জীবের অস্তিত্ব দীর্ঘ হতে পারে না। বনভূমি ও বন্য পশুপাখি আল্লাহতায়ালার দান ও প্রকৃতির শোভাবর্ধক। রাসুল (সা.) প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে দিকনির্দেশনা আরোপ করেছেন। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অবশ্যই ইসলামের আলোকে পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন করা বাঞ্ছনীয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য বন-জঙ্গল ও গাছপালা অতীব প্রয়োজনীয়, যা মানুষ নির্বিচারে ধ্বংসে মেতেছে। অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের আরেকটি মৌলিক নীতি হলো, প্রকৃতির অন্য সৃষ্টির কোনোরূপ ধ্বংস, বিনাশ, অপচয় বা অপব্যবহার করা যাবে না।
প্রত্যেকটি সৃষ্টি কোনো না কোনোভাবে মানুষ অথবা অন্য কোনো সৃষ্টিকে সেবা দান করে। পরিবেশ ধ্বংসের যেকোনো ধরনের উদ্যোগ বা চেষ্টা মানুষসহ অন্য সৃষ্টিকে আল্লাহ প্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত করার শামিল। বিনা প্রয়োজনে অযৌক্তিকভাবে কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত করার কোনো নৈতিক অধিকার মানবজাতিকে প্রদান করা হয়নি। প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়, বিনাশ অথবা অপরিমিত ব্যবহার কোনোটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য নয়। ইসলাম পরিবেশ সংকটের অবসান প্রত্যাশা করে।