ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাগ নিয়ন্ত্রণে ইসলামের বিধান

হাফেজ মিজানুর রহমান
রাগ নিয়ন্ত্রণে ইসলামের বিধান

মাত্রাতিরিক্ত রাগে মানুষের মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই রাগ বরাবরই মানুষের ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছুই বয়ে আনে না। এ জন্য যথাসম্ভব রাগকে দমন করা জরুরি। রাগ দমনকারীকে নবীজি (সা.) প্রকৃত বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে এ রাগ দমন বা কমাতে করণীয় সম্পর্কে কী বলেছেন নবীজি? তিনি বলেছেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বোখারি)।

যেহেতু রাগ দমন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর যে ব্যক্তি তা করতে সক্ষম হবে, সেই দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব। রাগ দমনকারীদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে (তারাই মহসিন বা সৎকর্মশীল), বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে-ইমরান : ১৩৪)।

রাগ নিয়ন্ত্রণে প্রিয় নবী (সা.) এর ৪টি পরামর্শ

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। তাই রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রিয় নবী (সা.) এর ৪টি সুন্দর পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। তা হলো-

অজু করা

সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি ঠান্ডা করে দেয়। যদি কারো ক্রোধ বা রাগ আসে তবে তার উচিত ওজু করে নেয়া।’ (বোখারি, মিশকাত)।

চুপ থাকা

রাগের সময় চুপ থাকার কথাটি প্রিয় নবী (সা.) ৩ বার বলেছেন। চুপ থাকলে রাগ দমন হয়। রাগের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন কোরো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

মাটিতে শুয়ে পড়া

প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগান্বিত হয় তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন (মাটিতে) শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)।

আউজুবিল্লাহ ও দোয়া পড়া

যখনই রাগের ঘটনা ঘটে; তখনই আল্লাহর কাছে রাগ নিয়ন্ত্রণে ‘তাউজ’ পড়ার কথা বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.)। সব সময় দোয়ার মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণের কথাও এসেছে হাদিসে। দুই ব্যক্তি নবীজি (সা.) এর পাশে বসে পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তবে তার এ অবস্থা কেটে যাবে।’ সে বাক্যটি হলো- ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম।’ অর্থ- ‘আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম)। হজরত সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(রাগের সময়) এই কথাগুলো বললে রাগান্বিত ব্যক্তির রাগ দূর হয়ে যাবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

রাগ-ক্ষোভ ও সুদণ্ডসন্তুষ্টির অতিরিক্ত আবেগে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে হাদিসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়ার দোয়া শেখানো হয়েছে। আর তাহলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আদলা ফিল গাদাবি ওয়ার রিদা।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই মধ্যম পন্থা কামনা করি।

সুতরাং যাদের রাগের প্রবণতা বেশি, তাদের উচিত বেশি বেশি প্রিয় নবী (সা.)-এর দিকনির্দেশনা মেনে চলা। রাগের মুহূর্তে এবং রাগের মুহূর্ত ছাড়াও এ জিকির ও দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া। সুন্নতের এ আমলগুলো রেগে যাওয়া ব্যক্তির জন্য প্রচণ্ড ক্ষোভের সময়েও মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়। ফলে তখন তারা অতি আনন্দ কিংবা রাগের মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও সামঞ্জস্য বজায় রাখতেও সক্ষম হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সব সময় সুন্নতের আমলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার তৌফিক দান করুন। রাগমুক্ত জীবন গঠনে সুন্নাতের আমলে মনোযোগী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: ইমাম, মসজিদ আল-আনাস (রাঃ) জিজান,সৌদিআরব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত