ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আল কোরআনে ধৈর্যের নির্দেশনা

এইচ. এম. মুহিব্বুল্লাহ
আল কোরআনে ধৈর্যের নির্দেশনা

‘সবর’ আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ ধৈর্য বা সহিষ্ণুতা। মানুষের উত্তম বৈশিষ্ট্যাবলির মধ্যে ধৈর্য অন্যতম একটি উপাদান। যার ধৈর্য আছে, তার সঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ আছেন। ধৈর্যের সরাসরি নির্দেশ দিয়ে আল কোরআনে ২৫টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে। পাশাপাশি হাদিসের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। এ প্রবন্ধে পবিত্র কোরআনে ধৈর্যধারণের ৭টি নির্দেশমূলক আয়াত তুলে ধরা হলো।

শুভ পরিণতির জন্য ধৈর্যধারণ করুন : ধৈর্যশীল ব্যক্তি সব কাজে যখন মহান রবের সিদ্ধান্তের পানে তাকিয়ে থাকেন, তখন আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে ধৈর্যের শুভ পরিণতি দান করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে : ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, শুভ পরিণতি তো মুত্তাকিদের জন্য নির্দিষ্ট।’ (সুরা হুদ : ৪৯)।

উত্তমভাবে ধৈর্যধারণ করুন : আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.)-কে উত্তম ধৈর্যধারণের ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করে বলেন : ‘অতএব আপনি (হে নবী) উত্তম সবর করুন।’ (সুরা মাআরিজ : ৫)।

আল্লাহর সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করুন : আল্লাহ কোরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে মানুষকে যেসব নির্দেশনা প্রদান করেছেন সে বিষয়ে অবিচল থেকে কোন অত্যাচারী কর্তৃক অত্যাচারিত হলে আল্লাহর সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করার নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে : ‘আপনি তো কেবল তাই অনুসরণ করেন, যা ওহির মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে। আর সবর করুন যতক্ষণ না আল্লাহ চূড়ান্ত ফয়সালা করেন।’ (সুরা ইউনুস : ১০৯)।

কর্মফল অক্ষত রাখতে সবর করুন : নির্বোধরা মনে করে যে, শক্তি প্রদর্শন করাই সম্মান বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু মোমিনরা নির্বোধদের এই হীন চিন্তা থেকে বিমুখ থাকেন। কারণ, তারা আল্লাহর এই ঘোষণা সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখেন : ‘আপনি ধৈর্যধারণ করুন। আল্লাহ পুণ্যবানদের কর্মফল বিনষ্ট করেন না।’ (সুরা হুদ : ১১৫)।

চিন্তামুক্ত থাকতে ধৈর্যশীল হোন : কোনো অজ্ঞ ব্যক্তি যখন মোমিনকে কটাক্ষ করে কিংবা হেয় প্রতিপন্ন করে তখন মোমিনরা আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীকে রক্ষাকবচ বলে মনে করেন। এরশাদ হয়েছে : ‘আপনি (হে নবী) সবর করুন, আপনার এই সবরের তৌফিক তো আল্লাহই দিয়েছেন। তাদের জন্য দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।’ (সুরা আন-নাহল : ১২৭)।

কাপুরুষ না হতে সবর করুন : আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ মান্য করা মোমিনের একান্ত কর্তব্য। মোমিনের আরও কর্তব্য হচ্ছে যে, পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হবে না। কারণ, বিবাদে লিপ্ত হলে কাপুরুষতা ভর করবে। আল্লাহ বলেন : ‘তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। যদি তা কর তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সুরা আনফাল : ৪৬)।

বিপদাপদে ধৈর্যশীল হোন : লোকমান (আ.) তার পুত্রকে যে ক’টি বিষয়ে উপদেশ প্রদান করেছিলেন, তন্মধ্যে ধৈর্যধারণ করা ছিল অন্যতম একটি। পবিত্র কোরআনে সুরা লোকমান নামে পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা অবতীর্ণ করে লোকমান হাকিমের সেই উপদেশাবলি আল্লাহ সংরক্ষিত করেছেন। এরশাদ হয়েছে : ‘হে বৎস! নামাজ কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয়ই এটি সাহসিকতার কাজ।’ (সুরা লোকমান : ১৭)।

হজরত আনাস ইবন মালিক (রা.)-এর একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের লেখা সমাপ্তি করব। রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘এমন সব জিনিস জান্নাতকে পরিবেষ্টন করে আছে, যা মানুষের অপছন্দনীয়। আর জাহান্নামকে ঘিরে আছে এমন সব জিনিস যা আকর্ষণীয়।’ (মুসলিম : ২৮২৩)। আলোচ্য কালামেপাকের নির্দেশনাবলির মাধ্যমে ধৈর্যধারণের যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের পার্থিব জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পরকালীন অনন্ত সুখী জীবন লাভ করা প্রত্যেকের একান্ত দায়িত্ব।

লেখক : পিএইচডি গবেষক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত