মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান হ্রাস ও অবাঞ্ছিত পদার্থগুলোর উপস্থিতি যা জীব ও উদ্ভিদজগতের জন্য ক্ষতিকর তাকে মাটি দূষণ বলে। মাটি দূষণ পরিবেশ দূষণের একটি প্রধান অংশ। ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, অর্থনৈতিক প্রয়োজনে রাস্তাঘাট, বাড়ি নির্মাণ, খনিজসম্পদ আহরণের ফলে ভূমিকে সরিয়ে ফেলা, তেল সংগ্রহ, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, তেজষ্ক্রিয়, আবর্জনা, পৌর ও গ্রামীণ আবর্জনা, শিল্প আবর্জনা, খনিজ আবর্জনা মাটি দূষণের অন্যতম কারণ।
মাটি, পানি, বায়ু প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুই একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। কাজেই বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ও মাটি দূষণ একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। যা বায়ুকে দূষিত করে তা পানিকেও দূষিত করে, দূষণযুক্ত বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়ে পড়ে।
ইসলাম মাটি দূষণকে নিন্দা করে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন সে প্রস্থান করে, তখন সে জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণী ধ্বংসের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ ফ্যাঁসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা : ২০৫)।
আয়াতে কৃষিক্ষেত্র ও প্রাণীর ধ্বংসকে বিপর্যয় সৃষ্টির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়, ভূমি দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি কারণ। শুধু কারখানা, বসত-বাড়ি, কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য দ্বারাই মাটি দূষিত হচ্ছে না বরং আধুনিক চাষ পদ্ধতিও অনেকাংশে দায়ী। মাটির বুননে অনেক বিষয়ও উৎপাদন ও মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাসের জন্য দায়ী, যা মাটিকে ধ্বংস করছে। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত এখানে অনুধাবনযোগ্য, ‘যে শহর উৎকৃষ্ট, তার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফসল উৎপন্ন হয়। এমনিভাবে আমি আয়াতগুলো কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্য ঘূর্ণায়মান করি।’ (সুরা আরাফ : ৫৮)।
জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইসলাম মানুষকে যেসব কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে তার অন্যতম হলো কৃষিকাজ, যা পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় মৌলিক উৎস এবং শিল্প বিপ্লবের জোয়ারে কৃষিবিমুখ জাতির অনাগত খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের একমাত্র সমাধানও এ কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন। ইসলাম একে গুরুত্ব দিয়েছে এবং একে ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাগ্রহে কৃষিকাজ ও বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যাতে উদ্ভিদ সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হয়। যেমন আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে আর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তবে তা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বোখারি : ৩৮২৯)।
অপর হাদিসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মৃত (অনাবাদী) ভূমিকে জীবিত (চাষযোগ্য) করবে, তা তারই জন্য।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৩০৬৩)।
উপরোক্ত কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলো দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত নিয়মনীতি মেনে চলা প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুর জন্য জরুরি। কোনো একটি দূষিত হলে প্রকারান্তরে গোটা সৃষ্টিতে বিপর্যয় ডেকে আনে।