দোয়া আল্লাহতায়ালার অশেষ নেয়ামত ও মহৎ ইবাদত, দোয়া নবীগণ ও মুত্তাকিদের সবচেয়ে বিশিষ্ট গুণাবলির অন্যতম। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, (হে নবী!) যখন আমার বান্দাগণ আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদের বলুন) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি। সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৬)।
আল্লাহতায়ালা সর্বদা তাঁর বান্দাদের দোয়া-আর্তনাদ শোনেন ও কবুল করেন। তবে কিছু বিশেষ সময় মুহূর্ত রয়েছে- যখন দোয়া খুব দ্রুত কবুল হয়, বিশেষ করে জুমার দিন। সেই সময় কোনো মুসলমান দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা তা কবুল করেন। হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহতায়ালার কাছে যা কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে তা দান করবেন। কাজেই তোমরা আসরের পর দিনের শেষ মুহূর্তে সে সময়টা তালাশ করো। (আবু দাউদ : ১০৪৮)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দিনগুলোয় সূর্য উদিত হয়, তন্মধ্যে সর্বোত্তম জুমার দিন, যেদিন হজরত আদম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেদিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল, যেদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করানো হয়েছিল। এই দিনে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা দান করবেন। হজরত আবু হুরায়রা বলেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং হাদিসটি বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, এই বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি বললাম, এ সম্পর্কে আমাকে খুলে বলুন, কৃপণতা করবেন না। তিনি বললেন, এই বিশেষ মুহূর্তটি হচ্ছে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আমি বললাম, এটা কীভাবে সম্ভব? অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা দেবেন। আসরের পর তো নামাজ পড়া যায় না! হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি একথা বলেননি? যে ব্যক্তি কোথাও বসে নামাজের জন্য অপেক্ষা করবে, সে যেন নামাজে আছে। আমি বললাম, অবশ্যই বলেছেন, তিনি বললেন, এটাই বুঝানো হয়েছে। (নাসাঈ : ১৪৩২, আবু দাউদ : ১০৪৬)।
হজরত আবু বুরদা ইবনে আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, হজরত ইবনে ওমর (রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতার কাছ থেকে জুমার প্রহরের মহিমা সম্পর্কে কোনো হাদিস শুনেছ? আমি বললাম হ্যাঁ শুনেছি, তিনি বলেছেন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জুমার দিন মহিমান্বিত মুহূর্তটি হচ্ছে ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম শরিফ : ১৯৭৫)।
এসব হাদিসের আলোকে আলেমগণ জুমার দিন মহিমান্বিত প্রহর ও গ্রহণযোগ্য মুহূর্ত দুটি নির্ধারণ করেছেন, ১. খুতবা শুরু ও নামাজ শেষ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়। ২.আছরের পর সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে। তাই অন্তরে কবুলের দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করলে, আল্লাহতায়ালা সবার দোয়াই কবুল করেন। তবে দোয়া কবুলের পদ্ধতি-রূপরেখা ভিন্ন, কখনো যা চাওয়া হয় তাই দেন, কখনো কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদাপদ দূর করে দেন, আবার কখনো নিজ অভিপ্রায়-কর্মকুশলতায় বান্দার পরকালের জন্য স্টোরেজে রেখে দেন। মনে দৃঢ়বিশ্বাস-প্রত্যয় নিয়ে ক্রন্দন করে, আগে-পরে দরুদ শরিফ পাঠ করে, দোয়ার আদব ও কবুলের বিশেষ সময় মুহূর্ত বিবেচনা করে গোলামের মতো আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করলে আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও নিরঙ্কুশ শাসক, তিনি যেভাবে ইচ্ছা গ্রহণ করবেন।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা, বসুন্ধরা, ঢাকা