ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কেয়ামত দিবসের ভয়াবহ মুহূর্ত

আবদুর রশীদ
কেয়ামত দিবসের ভয়াবহ মুহূর্ত

পৃথিবীর মাঝে ভালোবাসা আর ঘৃণার একটা দিক থাকলেও ভালোবাসার দিকটা অন্যরকম। সামান্য ভালোবাসার কারণে পৃথিবীতে পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের জন্য জীবন বাজি রাখে। কাছের কিংবা দূরের অনেকে অনেক মানুষের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার অবসান ঘটে না সহজে। এমনকি এ ভালোবাসার জন্য অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই ভালোবাসা মুহূর্তের মাঝে বিলীন হয়ে যাবে সেই দিন! কখনও যে এই ভালোবাসার অস্তিত্ব ছিল, তার কোনো প্রমাণ মিলবে না। সেই দিনের একটি মুহূর্ত কতই না দুর্বিষহ হবে, তা কল্পনাতীত! আর সে মুহূর্তটা হলো কেয়ামতের দিনের ভয়াবহ মুহূর্ত! আর ওই দিনের ভয়াবহ মুহূর্তের কথা পবিত্র কোরআন মাজিদে এসেছে এইভাবে- ‘কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।’ (সুরা নাজম : ৩৮; সুরা যুমার: ০৭; সুরা ফাতির: ১৮)। সেই দিন বোঝা বহন বলতে কোনো জিনিসপত্র নয়; বরং পাপ-পুণ্যের বোঝা। কারও পাপের ভার কেউ গ্রহণ করবে না এবং কারও পুণ্য কাউকে দেবে না। আর সেখানে হক আদায়ের সিস্টেম হলো পুণ্যের বিনিময়। কারও প্রতি কোনো আন্তরিকতা প্রকাশ পাবে না সেই দিন। শুধু নিজ নিজ কর্মপ্রতিফল নিয়ে চিন্তা-দুশ্চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। কতই না ভয়াবহ হবে সেই দিন!

সেই দিনের ভয়াবহতার কিছু বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘না, পিতা পুত্রের কোনো উপকারে আসবে এবং না পুত্র পিতার কোনো উপকারে লাগবে।’ (সুরা লুকমান : ৩৩)। তিনি আরও বলেন, ‘সেই দিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভ্রাতা হতে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। সেই দিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা, যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।’ (সুরা আবাসা : ৩৪-৩৭)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত ইকরামা (রা.) বলেছেন, প্রতিবেশী প্রতিবেশীর পেছনে লেগে যাবে। সে আল্লাহতায়ালার কাছে আরজ করবে- হে আল্লাহ! আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন, কেন সে আমার হতে তার দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল? কাফের মোমিনের পেছনে লেগে যাবে এবং যে ইহসান সে দুনিয়ায় তার ওপর করেছিল, তা সে তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং বলবে- আজ আমি তোমার মুখাপেক্ষী। মোমিনও তার জন্য সুপারিশ করবে এবং হতে পারে যে তার শাস্তিও কিছু কম হবে, যদিও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ অসম্ভব। পিতা পুত্রকে তার প্রতি তার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবে- হে আমার প্রিয় বৎস! সরিষা পরিমাণ পুণ্য আজ তুমি আমাকে দাও। পুত্র বলবে- আব্বা! আপনি জিনিস তো অল্পই চাচ্ছেন। কিন্তু যে ভয়ে আপনি ভীত রয়েছেন, সেই ভয়ে আমিও ভীত রয়েছি। সুতরাং, আজ তো আমি আপনাকে কিছুই দিতে পারছি না। তখন সে তার স্ত্রীর কাছে যাবে এবং বলবে- দুনিয়ায় আমি তোমার প্রতি যে সদ্ব্যবহার করেছিলাম, তা তো অজানা নেই? উত্তরে স্ত্রী বলবে- আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। কিন্তু এখন আপনার কথা কী? সে বলবে- আজ আমি তোমার মুখাপেক্ষী। আমাকে একটি নেকি দিয়ে দাও, যাতে আমি আজ এই কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেতে পারি। স্ত্রী জবাবে বলবে- আপনার আবেদন ও চাহিদা তো খুবই হালকা বটে; কিন্তু যে ভয়ে আপনি রয়েছেন, সে ভয় আমারও কোনো অংশে কম নয়। সুতরাং, আজ তো আমি আপনার কোনো উপকার করতে পারব না। (আল-হাদিস)।

কেমন হবে সেই মুহূর্তটা, যখন সবচেয়ে প্রিয়জন পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নেবে; এমনকি দেখলে পরিচয় না দিয়ে পলায়ন করবে! কেয়ামতের দিন কেউ তার বোঝা অন্যের ওপর চাপাতে চাইলে তা পূর্ণ হবে না। এমন কেউ সেখানে থাকবে না যে, তার বোঝা বহন করবে। বন্ধু-বান্ধব ও নিকটতম আত্মীয়রা সবাই সেই দিন মুখ ফিরিয়ে নেবে। অতএব, সেই দিনের একমাত্র সঙ্গী হবে নিজেদের সৎ আমলগুলো। আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হলে সেই দিনের দুশ্চিন্তা আর জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি মিলবে। তাই, প্রকৃত বুদ্ধিমানরা কখনও দুনিয়ার ভালোবাসায় ডুবে না গিয়ে পরকালের সামান জোগানোর ভালোবাসায় বেশি ডুবে থাকে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সৎ আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত