মামদানির জয়ে যত বার্তা

আফফান লাবীব

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সম্প্রতি নিউইয়র্কের সর্বশেষ মেয়র নির্বাচনে তুমুল জনপ্রিয়তা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করেছেন মুসলিম বামপন্থি রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। ডেমোক্রেটিক এ তরুণ নেতার জয়লাভ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। একদিকে যেমন অদৃশ্যভাবে তার বিরোধীপ্রার্থী ছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে ছিল বিভিন্ন বিলিয়নিয়ারদের প্রচারণা। এ সবকিছুকেই ছাপিয়ে জোহরান আমেরিকার আকাশে আপন বিজয়-কেতন উড্ডীন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিজয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লক্ষ্যে পৌঁছানোর রহস্য : বিরোধী দলীয়দের পক্ষে এমনকি স্বয়ং ট্রাম্পেরও বিরোধিতা সত্ত্বেও কীভাবে এ তরুণ নেতা নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হলেন, সেই পথটা অবশ্যই বিশ্ব দরবারে অনুসরণীয়। বিশেষত আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তো সেই পদ্ধতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সামনেও কড়া নাড়ছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। নিজ দলীয় প্রার্থী ঘোষণাসহ নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই এহেন পরিস্থিতিতে মামদানির নির্বাচন-পূর্ব পদক্ষেপগুলোকে সামনে রাখলে ফলাফলের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে আশা করি।

মামদানির বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল : বামপন্থি মুসলিম রাজনীতিবিদ হয়ে নিউইয়র্কের মাটিতে মেয়র নির্বাচিত হওয়া কখনোই সহজ ছিল না। এর জন্য যেমন প্রয়োজন ছিল অসীম সাহসের, তেমনই জরুরি ছিল বুদ্ধিদীপ্ত জনমুখী কর্মপন্থা। মামদানির এ দুটো দিককে অনুসরণ করলে আমাদের ঘরোয়া রাজনীতিতেও অনেক তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসবে। প্রথমত তিনি নিজের অবস্থান নিয়ে কখনোই হীনমন্যতা বা সংকোচ করেননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে নানাভাবে সমালোচনা এবং তিরস্কারের শিকার হয়েছেন। তবে সবসময়ই সেসব প্রশ্নের সরাসরি বলিষ্ঠ জবাব দিয়েছেন। মুখোমুখি বিতর্ক করেছেন। ফলে জনমানুষের মনে তার প্রতি কোনো সন্দেহ সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়নি।

শৈল্পিক নির্বাচনি প্রচারণা : দ্বিতীয়ত মামদানির যে বিষয়টা তার বিজয়ের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে, তা হলো তার ‘শৈল্পিক’ নির্বাচনি প্রচারণা। এটা অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তেমন নতুন কিছু নয়, তবু জোহরানের এ বিষয়টি ছিল অনুসরণীয়। বিশেষত আমাদের দেশে, যেখানে নির্বাচনি প্রচারণা বলতে আমরা শুধু বুঝি- পোস্টারে পোস্টারে শহর-নগর ছেয়ে যাওয়া, বিলবোর্ড কিংবা ব্যনারের ছায়ায় মহাসড়কগুলো আচ্ছাদিত হওয়া, মাইকিংয়ের শব্দে এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তোলা কিংবা মিছিলে মিছিলে রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি করা ইত্যাদি। এমন প্রচারণার ফলে অনেক সময় সেটা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। মানুষজন আগ্রহী হওয়ার বিপরীতে আরও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ফলে শেষ রাতে স্বভাবতই আশ্রয় নিতে হয় নানান উপায়-উত্তরণের পথে। পরিশেষে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশবাসী সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বাদ আর গ্রহণ করতে পারে না।

প্রচারণায় অনুসরণযোগ্য পদক্ষেপ : বিপরীতে যদি আমরা নির্বাচনি প্রচারণায় অনুসরণ করি জোহরান মামদানির পদ্ধতি, রাজ্যের সর্বশ্রেণির পেশাদার মানুষদের কাছে আলাদাভাবে নিজে উপস্থিত হয়ে তাদের সমস্যা সমাধানের আলাপ করি, যুবকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালু করি, অযথা মাইকিং বা পোস্টারিং না করে জায়গায় জায়গায় প্রশ্নোত্তরপর্ব কিংবা কনফারেন্স আয়োজন করি, তাহলে আমাদের জন্য তা আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জনমানুষের জন্য নিজেদের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিক ফলপ্রসূ হবে।