প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
মানুষ মানুষের সহযোগী। বিপদাপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়াবে, এমনটাই মানবতার দাবি। ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর মানবিকতা ও ঈমানের মধ্যে বন্ধুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি : ১৮৪৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৫৭৮৭)। এমনই একজন সমাজসেবক ও পরোপকারী শ্রেষ্ঠ মানব হলেন মাওলানা শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান ইসলামাবাদী। সমাজসেবা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা আর দানশীলতার কারণে সারা দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। উদার মনে দান করে যাচ্ছেন দু’হাতে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, বা খ্রিষ্টান; ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বর্তমানে তাকে যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তার শুরুটা এত মসৃণ ও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। জীবনের বাঁকে-বাঁকে নানা যুদ্ধ-সংগ্রাম আর সাধনা করে এ স্থানে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে তাকে।
বেড়ে ওঠার গল্প : ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি ভূজপুর থানার পশ্চিম ভূজপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। বাবার নাম আবুল কালাম সওদাগর। মায়ের নাম চেমন আরা চৌধুরী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। গ্রামের মক্তবে তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। এরপর বড়বিল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও যথাক্রমে কাজিরহাট এমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসা এবং নানুপুর ওবায়দিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী, মেধাবী ও ধীশক্তির অধিকারী।
ফলে শিক্ষকগণ তাকে খুব স্নেহ করতেন। তেমনি তার সহপাঠীদের মাঝে ছিল তার সমান গ্রহণযোগ্যতা। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন পরোপকারী ও জনহিতৈষী। যখনই কারো বিপদের কথা শুনতেন, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেতেন। সাধ্যমতো তাদের সাহায্য-সহযোগিতার চেষ্টা করতেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি দাওরায়ে হাদিস তথা মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবন থেকে কঠোর পরিশ্রমী হওয়া, সংগ্রাম-সাধনায় অভ্যস্ত হওয়া এবং পরোপকারের মাধ্যমেই তিনি এতটা বড় হতে পেরেছেন। লাখো মানুষের দোয়ায় তিনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও বেশ সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য হতে পেরেছেন।
কর্মজীবনে পদার্পণ : ফটিকছড়ির আজাদীবাজার মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে শিক্ষক হিসেবে দরসে নেজামির বিভিন্ন জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির পাঠদান করেন। খুব অল্প সময়ে তিনি সেখানকার ছাত্র-শিক্ষক সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর জীবিকার তাগিদে তিনি ২০০৫ সালে কুয়েতে পাড়ি জমান। সুযোগ্য, সুদক্ষ ও আরবি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জনকারী এ আলেম সেখানে গিয়েও আরবিদের কাছে সমাদৃত হন। ধীরে ধীরে তিনি সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। কর্মঠ, উদ্যমী, বিচক্ষণ, সুন্দর আচরণ, উত্তম চরিত্র ও মার্জিত আখলাকের কারণে তিনি সবার প্রিয় ও আস্থাভাজন হন। বর্তমানে তিনি কুয়েতে ‘হেদায়া ইসলাম প্রেজেন্টেশন সেন্টার’-এর দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া তিনি একাধিক সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। পাশাপাশি তিনি মসজিদভিত্তিক দাওয়াতি কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার দাওয়াতি কাজের প্রতি মুগ্ধ হয়ে অনেক বিধর্মী তার হাত ধরে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া তিনি কুয়েতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মসজিদে খণ্ডকালীন ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
সমাজসেবামূলক কার্যক্রম : ছোটকাল থেকেই তার মনে সমাজসেবা ও মানুষের উপকার করার প্রবল আগ্রহ ও উদ্দীপনা ছিল। আল্লাহতায়ালা যেন তার সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করলেন। দেশ ও দশের সেবা করার জন্য, ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণে কাজ করার জন্য তিনি ১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে ‘এহইয়াউস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অরাজনৈতিক সমাজসেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির চেয়ারম্যান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বহু প্রতিষ্ঠান ও জনতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্থাপন করেছেন ৭০ হাজার টিউবওয়েল, ৫ হাজার অজুখানা, ১২৮৫-এর অধিক মসজিদণ্ডমাদ্রাসা নির্মাণ ও নির্মাণকাজে সহযোগিতা। সারাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন শতাধিক মাদ্রাসা। এ ছাড়া অসংখ্য স্কুল-কলেজ, মন্দির-গির্জার জন্য টিউবয়েলসহ আর্থিক সহায়তা করেছেন। সেলাই মেশিন বিতরণ করেছেন হাজারের অধিক। ১০ লাখ কোরআন ও ৫ হাজার হুইল চেয়ার বিতরণ করেছেন। গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন ১০০টি। গবাদি পশু দান করেছেন ১০০টি। এতিম লালনপালনের দায়িত্ব নিয়েছেন ১ হাজারের মতো। এ ছাড়াও মানবকল্যাণে তার নজির রয়েছে দেশের সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
শিক্ষার আলো ছড়াতে অবদান : মাওলানা শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান একজন শিক্ষাপাগল মানুষ। তিনি যখন দেখতে পেলেন, তার এলাকায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, তখন তিনি তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে, মূর্খতার অন্ধকার দূর করে শিশুদের মনে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া ও আদর্শবান সুযোগ্য নাগরিক সৃষ্টি এবং বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পশ্চিম ভূজপুর কালাবীপাড়ায় ২০০৬ সালে কওমি ও সরকারি সিলেবাসের সমন্বয়ে আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আজকের দিনে যা ‘জামিয়া আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আল-ইসলামিয়া’ নামে প্রসিদ্ধ। এ জামিয়া প্রতিষ্ঠার পর খুব অল্প সময়ে দেশের আনাচে-কানাচে এর সুনাম, সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মাওলানা শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহানের হাত ধরে খুব অল্প সময়ে এ জামিয়ার শিক্ষাদীক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক উন্নতি হয়। দেশ-বিদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী এসে এ জামিয়া পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
যেসব দায়িত্ব পালনে অনন্য : মাওলানা শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান দেশ-বিদেশে যেসব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে করছেন, তা হলো- ১. হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক; ২. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক; ৩. ফটিকছড়ি প্রেসক্লাবের আজীবন দাতা সদস্য; ৪. হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ফটিকছড়ি উত্তর জোনের আমির; ৪. বৃহত্তর ভূজপুর থানা ওলামা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক; ৫. ভূজপুর ইসলামি সম্মেলন সংস্থার উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক; ৬. ভূজপুর ইসলামি গণপাঠাগারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক; ৭. ভূজপুর পাবলিক হাইস্কুলের সাবেক সফল সভাপতি; ৮. হেদায়া ইসলাম প্রেজেন্টান্স সেন্টার কুয়েতের দাঈ ও অনুবাদক; ৯. উত্তর ফটিকছড়ি ওলামা পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক; ১০. ভূজপুর ক্লাবের আজীবন দাতা সদস্য; ১১. ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটি ফটিকছড়ি শাখার সহ-সভাপতি; ১২. হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কুয়েত শাখার সভাপতি।
ব্যক্তিজীবন ও আগামীর পরিকল্পনা : মাওলানা শায়খ হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান অত্যন্ত সহজ-সরল; তবে অনেক বিচক্ষণ, কর্মোদ্যোমী ও কর্মতৎপর একজন মানুষ। পাশাপাশি তিনি অনেক মিশুক প্রকৃতির। খুব সহজেই যে কারো সঙ্গে মিশে যাওয়ার গুণ রয়েছে তার। এজন্য তিনি ছোটদের শ্রদ্ধাভাজন, সহকর্মীদের প্রিয়ভাজন ও আস্থাভাজন এবং বড়দের স্নেহভাজন। ২০০৭ সালে দাম্পত্যজীবনে পদার্পণ করে বর্তমানে দুই ছেলে ও চার কন্যার জনক তিনি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি মনোনীত সংসদ সদস্যপ্রার্থী। দেশ ও মানবতার কল্যাণে তার নির্বাচনী প্রতীক ‘বই মার্কা’র ভরপুর সাফল্য কামনা করছি।
লেখক : সম্পাদক, মাসিক তাকবীর, চট্টগ্রাম