বিদা আলবিদা মাহে রমজান

প্রকাশ : ১২ মে ২০২১, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

বিদায় শব্দটির সঙ্গে কষ্ট জড়িয়ে আছে। যে কোনো বিদায় অনুভূতিতে নাড়া দেয়। আর রমজান তো এসেছিল রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের প্রাচুর্য নিয়ে। এ থেকে আমরা বঞ্চিত হবো, এরকম ভাবতেই কষ্ট হয়। রমজান আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমরা কি পেরেছি রহমতের বৃষ্টিতে অবগাহন করতে, মাগফিরাতের সাগরে ভাসতে, আমরা কি পেয়েছি নাজাতের সুসংবাদ। রমজান তো তাকওয়া অর্জনের মাস, খোদাভীতি লাভের মাস। আমরা কি পেরেছি খোদাভীতি অর্জন করতে। আল্লাহর ভয়ে সব রকম অন্যায়, অপকর্ম, লোভ ছাড়তে পেরেছি কি? তবে রমজান থেকে আমাদের অর্জন কী? রমজান তো সহনশীল ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি, না রমজান আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল। নিজেকে শুধরে নেওয়ার সময় ছিল রমজান। আমরা কি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। লোভ-লালসা, গিবত, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, আত্মঅহঙ্কার, মিথ্যা বলা, কার্পণ্য ইত্যাদি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি?

এই রমজানে কোরআন এসেছে আমাদের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য। কোরআনকে কতটুকু ভালোবাসতে পেরেছি। এ থেকে কতটুকু আমলে এর আলোকে নিজেকে কতটুকু আলোকিত করতে পেরেছি? আল্লাহকে পাওয়ার আরেকটি মাধ্যম হলো দান। দান হলো পুণ্যের কাজ। অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে এক পুণ্যে ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি সওয়াব। এর থেকে আমরা কী লাভ করেছি। টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি সবই তো আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া। তার সন্তুষ্টির জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করলাম। আর মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘ ১১টি মাস পবিত্র মাহে রামাজানের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন, সে মাস বিদায়ের পথে। মোমিনের মনের গহিনে শব্দবিহীন কান্না হচ্ছে। ঈমানদান রমজানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকে। হায়! রহমতের মাস থেকে কতটুকু ‘রহমত’ অর্জন করতে পারলাম? মাগফিরাতের মাস থেকে কতটুকু ‘মাগফিরাত’ লাভ করতে পারলাম? নাজাতের মাস থেকে কতটুকু ‘নাজাত’ লাভ করতে পারলাম? লাইলাতুল কদর থেকে কতটুকু ‘বরকত’ নিতে পারলাম? এ এক বিয়োগ বেদনা। এ এক চাপা কান্না।

সাহাবিয়ে রাসুল হজরত কাব বিন উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘একবার নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিঁড়িতে পরপর পা রাখলেন ও তিনবার ‘আমিন’ বললেন। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা আজ এমন কিছু শুনলাম, যা এর আগে কোনো সময়ে শুনিনি। তখন নবীজি বললেন, ফেরেশতা জিবরাইল আমার কাছে আগমন করেছিলেন। যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পেল, তবুও তার গোনাহ মাফ হলো না। তখন আমি বললাম আমিন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য যার সামনে আপনার নাম উচ্চারণ করা হলো; কিন্তু সে আপনার ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করল না। তখন আমি বললাম আমিন। আর যখন আমি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস ওই ব্যক্তির যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে হায়াতে পেল, অথচ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি আমিন বললাম।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)।

মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিবস, সপ্তাহ, মাস ও বছর কীভাবে অতিবাহিত হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। তাই আমাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সচেতন হয়ে সব কাজ শরয়ি পদ্ধিতিতে সম্পাদন করতে হবে। আমাদের সব কাজের পেছনে আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আসুন রমজানের যতটুকু সময় বাকি আছে এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। কল্যাণকামী হই এবং আল্লাহর কৃপা লাভ করি।

লেখক : কামিল হাদিস ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

কো-চেয়ারম্যান, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র