নারীর সুগন্ধি ব্যবহার ইসলাম কী বলে

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. নাহিদ হোসেন নাঈম

ইসলামে মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তেমনিভাবে সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে দিকনির্দেশনা। মহান আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। ইসলাম সৌন্দর্যচর্চার অনুমোদনও দিয়েছে। তবে এর একটি সীমারেখা নির্ধারিত আছে, যেন তা পাপে পরিণত না হয়। (মুসলিম : ৯১)। যেসব সাজসামগ্রী হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি, যা দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি করা গঠনে কোনো বিকৃতি ঘটে না, তা ব্যবহার করা জায়েজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা ইসলামি জীবনরীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলাম নির্দেশ দেয় যে, স্ত্রী যেন ঘরেও স্বামীর জন্য সর্বোত্তম সাজসজ্জা করে থাকে। স্বামীর উদ্দেশে সাজসজ্জা করা একটি ইবাদত। ‘আজীবনের সঙ্গী’ অথবা ‘সব সময় দেখছে’ বলে তার সামনে একেবারে অগোছালো থাকা ইসলামি শিক্ষাবিরোধী। (আলমুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৪৮)।

পারফিউম তথা সুগন্ধি ব্যবহার করা আসলে সুন্নত। ইসলামে নারীদের জন্য পর্দার বিধান আর সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান পরস্পরের পরিপূরক অর্থাৎ একই বিধান। অনেক বোন বাইরে বের হওয়ার সময় পর্দা করে বের হন বটে; কিন্তু সঙ্গে পারফিউম বা অন্য সুগন্ধি ব্যবহার করেন। নারীদের বাইরে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েজ। এতে পর্দা লঙ্ঘন হয়। শরয়ি পর্দা আদায় হয় না। হাদিস শরিফে ওইসব নারীর ওপর অভিসম্পাত করা হয়েছে, যারা সুগন্ধি মেখে বের হয়। পর্দার সঙ্গে হলেও নারীরা পারফিউম বা সেন্ট জাতীয় কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যেতে পারবে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর কোনো নারী যদি (কোনো ধরনের) সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তবে সে ব্যভিচারিণী।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহুল জামে, ৪৫৪০ নং)। এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদত করার উদ্দেশ্যে মসজিদে যেতেও সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তারা যেন খোশবু ব্যবহার না করে সাধাসিধাভাবে আসে।’ (আহমাদ, আবু দাউদ, সহিহ জামে ৭৪৫৭)।

সুগন্ধির ব্যবহার সম্পর্কে রয়েছে হাদিসের অনেক বর্ণনা-হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুনিয়ায় সুগন্ধি আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে আর নামাজের ভেতর রাখা হয়েছে আমার চোখের শীতলতা।’ (নাসাঈ)। বোখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি তা গ্রহণ করতেন, ফিরিয়ে দিতেন না। আবার কেউ সুগন্ধি দিলে ফিরিয়ে দিতেও তিনি নিষেধ করেছেন।’ (বোখারি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ১০ বছরের খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরভির চেয়ে হৃদয়কাড়া কোনো ঘ্রাণ (অন্য কোথাও) কখনও গ্রহণ করিনি।’ (মুসলিম)। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, উত্তম সুগন্ধি হলো মেশক (তিরমিজি)। আল্লাহর রাসুল (সা.) সাধ্যমতো অন্য মানুষকে সুগন্ধি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, জুমার দিন যথাসম্ভব তোমরা সুগন্ধি ব্যবহার করো। (নাসাঈ)।

আমাদের দেশে উৎসব-অনুষ্ঠানে বিশেষত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। যেটা হয় দুই ঈদ, শবেবরাত, শবেকদরসহ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে। ইসলামি বিধান অনুযায়ী নারীরা তার স্বামীর উপস্থিতিতে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন রকমের পারফিউম ব্যবহার করে থাকে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো, যেসব পারফিউমে অ্যালকোহল আছে অথবা শরিয়ত সমর্থন করে না, এমন বস্তু দ্বারা তৈরি পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না।

ইসলামে অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি বডি স্প্রে ব্যবহারের জন্য বারণ করা হয়েছে। মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম।’ (বোখারি : ৪৩৪৩)। যেসব সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলো শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, সেগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। (জাদিদ ফিকহি মাসাইল : ১/৩৮)।

অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন, আর অনেকেই তো এ বিষয়টিকে খুব হালকাভাবে গ্রহণ করে। যে সব নারী সেজেগুজে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সঙ্গে গাড়িতে চলাফেরা করছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে, তারা শরিয়তের নিষেধাজ্ঞার দিকে সামান্যতমও খেয়াল করে না। মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামি শরিয়ত এমন কঠোর বিধান আরোপ করেছে যে, বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মেয়েরা সুগন্ধি মেখে থাকলে ওই সুগন্ধিকে নাপাকি মনে করে ফরজ গোসলের মতো ওই নারীকে গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো মেয়ের শরীর থেকে যদি কোনো দুর্গন্ধ প্রকাশিত হওয়ার সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে সুগন্ধি ব্যবহার ছাড়া নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন। প্রয়োজনে প্রতি ঘণ্টা অন্তর অন্তর নিজেকে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। সমস্যা খানিকটা জটিল হলে তিনি একজন চর্মবিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো বৈধ কিছু ব্যবহার করতে পারেন। আসলে আল-কোরআন কিংবা হাদিসের কোথাও বডি স্প্রের কথা উল্লেখ নেই।

তবে বলা আছে, নাপাক অবস্থায় নামাজ হবে না। অর্থাৎ পাক-পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করতে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে সব হুকুমণ্ডআহকাম মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা