বর্তমান সময়ে স্বামী বা স্বামীর স্বজনদের দ্বারা অসংখ্য স্ত্রী নির্যাতন ও জুলুমের শিকার। এই ভয়াবহ ব্যাধি এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহুসংখ্যক মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করছে। তারা উচ্চ এবং নিম্ন উভয় শ্রেণিরই। মানুষের মধ্যে এ মানবিক অবক্ষয়ের কারণ কী! কেন একজন নারী তার পরিবারের কাছে নির্যাতিত, নিপীড়িত! এ প্রশ্নেগুলোর সমাধান ও উত্তরণের পথ উদ্ঘাটন করা আমাদের জন্য আবশ্যক।
বৈবাহিক মাধ্যমে একজন নারী তার পিতামাতা ও আপনজনের স্নেহ-ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে নতুন একটি পরিবারে আগমন করে এবং সেই পরিবারকে আপন করে নেয়। এটি সব নারীর জন্য?ই কষ্টসাধ্য এবং বিশাল কোরবানি। সেক্ষেত্রে একজন নারী যখন নতুন পরিবার অর্থাৎ শ্বশুরালয় আগমন করে। তার নিজেকে নতুন একটি পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। সেখানে সবকিছু তার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে হয় না। একটু নতুনত্ব ও ভিন্নতা থাকে। সমস্যার সূচনা হয় এখান থেকেই। শ্বশুরালয় চায় নববধূ যেন একদিনেই তাদের মতো হয়ে যায়। সবকিছু যেন তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী?ই হয়। কিন্তু তা নববধূর জন্য হয়ে ওঠে অত্যন্ত কষ্ট ও পীড়াদায়ক এবং সূচনালগ্নে?ই শ্বশুরালয়ের প্রতি তার চলে আসে বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা। এর ধারাবাহিকতায়?ই শুরু হয় স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য এবং চূর্ণ হতে শুরু করে একটি সুখময়, সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন। অথচ শুরুতে পুরুষ যদি কিঞ্চিত ধৈর্য্য ধারণ করে এবং স্ত্রীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে। তাহলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম্পত্য জীবনটা হয়ে ওঠে দুনিয়ার স্বর্গ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণের আদেশ দিয়ে বলেন : ‘তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। কিন্তু যদি তাদের অপছন্দ করো তাহলে এমন?ও হতে পারে যে, তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করছ, আল্লাহতায়ালা তার মাঝে প্রচুর কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’ (সুরা: নিসা : ১৯)। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। (তিরমিজি : ১১৬২)।
স্ত্রী নির্যাতন বা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের যে রেওয়াজ আমাদের সমাজে বিস্তার লাভ করেছে, তা থেকে মুক্তির পথ হলো ‘রাসুলের আদর্শ।’ তিনি স্ত্রীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছেন! কীভাবে তাদের ভালোবাসা দিয়েছেন! এগুলো আমাদের জানতে এবং অনুসরণ করতে হবে। ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিয়ে বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (সুনানে আবু দাউদ : ২৫৭৮)।
রাসুল (সা.) মহামানব হয়েও তার স্ত্রী সঙ্গে কী উত্তম আচরণের বহিঃপ্রকাশ করলেন। অথচ আমাদের সমাজে স্বামী যদি স্ত্রী থেকে সামান্য উচ্চ শ্রেণির হয়, তাহলে স্ত্রীর সঙ্গে তার আচরণ হয় কঠোর। অনেকটা রাজা প্রজার ন্যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন : মুসলিম ব্যক্তির সব ক্রীড়া-কৌতুকই বৃথা। তবে তীর নিক্ষেপ, ঘোড়ার প্রশিক্ষণ এবং নিজ স্ত্রীর সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুক বৃথা নয়। (কারণ) এগুলো হলো উপকারী ও বিধিসম্মত। (জামে আত-তিরমিজি : ১৬৩৭)। রাসুল (সা.) এর কথার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত যে, স্ত্রীর সঙ্গে কঠোর আচরণ নয় বরং কোমল আচরণের মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হবে।
নারীদের (অধিকাংশ) আল্লাহ একটু ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করছেন। তারা খুব সহজে কিছু বুঝতে চাইবে না। তরা আপনাকে অনেক আক্রমণাত্মক কথা বলবে, কষ্ট দিবে। তবু?ও আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। কারণ আপনি পুরুষ। আপনার দায়িত্ব বেশি। আপনাকে নিজের পরিবার-পরিজনের বোঝাতে হবে, যেন স্ত্রীর ওপর কোনো দুর্ব্যবহার মাধ্যমে জুলুম না হয়ে যায়। কারণ হাদিসে রাসুল (সা.) বললেন : জুলুম-কেয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে। (সহিহ বোখারি : ২৪৪৭)
আপনাকে প্রতিকূলতা পদদলিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। স্ত্রীর মানসিক তা পরিবর্তন করে বিজয় লাভ করতে হবে। তাহলে?ই আমাদের সমাজের অবক্ষয় রোধ হবে। সুন্দর সাবলীল হয়ে ওঠবে দাম্পত্য জীবন। এই সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি পাব আমরা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষার্থী : (আরবি ভাষা-সাহিত্য) জামিয়াতুল উস্তাজ শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী (রহ.) মুহাম্মদপুর, ঢাকা।