ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন। তার স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়ি বাঙালির জাতিসত্তার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তির ঠিকানা। এ বাড়ি থেকে বাঙালি জাতি পেয়েছিল মুক্তির দিকনির্দেশনা ও স্বাধীনতার ঘোষণা। এ বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড ও লাল-সবুজের পতাকা। লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজ
ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িটি বাঙালির জাতিসত্তার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তির ঠিকানা। এ বাড়ি থেকেই বাঙালি জাতি পেয়েছিল মুক্তির দিকনির্দেশনা ও স্বাধীনতার ঘোষণা। এ বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড ও লাল-সবুজের পতাকা। আর এ বাড়িতেই তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সপরিবারে শহীদ হন। তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এ বাড়িটিকে তার নামানুসারে জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। জাদুঘরটির নাম- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অপারেশন ‘সার্চলাইট’ নামে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে হত্যা ও গণহত্যা চালায়। এ খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু এ বাড়ির নিচতলায় তার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার থেকে টেলিফোনে রাত সাড়ে ১২টায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। তার স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রামের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এ বাড়ি থেকেই ২৫ মার্চ রাত দেড়টা তথা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে ঢাকা সেনানিবাস ও পরে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মিওয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দি করে রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাড়িটি দখল করে রাখে। অন্যদিকে ধানমন্ডির ১৮নং সড়কের ২৬ নম্বর বাড়িতে মুজিব পরিবারকে বন্দি করে রাখা হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার পরিবার নিয়ে সরকারি বাসায় না উঠে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে থেকে এ বাড়িতে বসবাস করতে লাগলেন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর ঘাতকচক্র এ বাড়িটি সিল করে রাখে ও বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার কাছে এ বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে।

১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট এ ঐতিহাসিক বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়।

নিচতলা, দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলা মিলে জাদুঘরের গ্যালারিগুলো সাজানো। জাদুঘরটির প্রথম তলায় দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন আলোকচিত্র। এসব আলোকচিত্রের মধ্যে আছে, সে সময়কার বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলাপচারিতা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের দৃশ্য। প্রথম তলার কক্ষটি ছিল বঙ্গবন্ধুর ড্রইংরুম। এখানে বসে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ কক্ষের পাশের কক্ষটি ছিল তার পড়ার ঘর। এখানে বসে তিনি লেখালেখিও করেছেন।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় দেখা যাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের ভয়াবহতার কিছু নিদর্শন। বঙ্গবন্ধু ওপর তলা থেকে নিচতলায় এ সিঁড়ি বেয়ে নামার সময়ই ঘাতকরা তাকে গুলি করে। গুলি খেয়ে বঙ্গবন্ধু এ সিঁড়িতেই পড়ে যান। এখানে শিল্পীর তুলিতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি প্রতিকৃতি আছে। দোতলার প্রথমে যে কক্ষটি আছে এটি বঙ্গবন্ধুর বাসকক্ষ। এর পরের প্রথমে কক্ষটি তার শোবার ঘর, তার পরের কক্ষটি শেখ রেহানার শোবার ঘর। এ কক্ষগুলোতে এখন দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের নানা স্মৃতিচিহ্ন।

এ কক্ষগুলোয় থাকা নিদর্শনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পাইপ, চশমাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র, শেখ রাসেলের খেলার সামগ্রী- বল, হিকস্টিক, ব্যাট, হেলমেট, সুলতানা কামালের সঙ্গে তার ছবিসহ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা নিদর্শন। এভাবে বাড়িটির প্রতিটি তলায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়ির নানা নিদর্শন।

২০১১ সালের ২০ আগস্ট এ বাড়িটির উত্তরে জাদুঘরের সম্প্রসারিত ভবন উদ্বোধন করা হয়। ষষ্ঠ তলা এ ভবনে ২৬টি পর্বে বঙ্গবন্ধুর তথ্য ও সচিত্র ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রসারিত ভবনের পঞ্চম তলায় একটি লাইব্রেরি আছে। শৈশব থেকে ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত চতুর্থ তলায় তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় তলায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে ১৯৭৩ সালের দেশ পুনর্গঠন পর্যন্ত সচিত্র তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। পারিবারিক জীবন থেকে জীবনাবসানের মর্মান্তিক ঘটনাবলি দ্বিতীয় তলায় সন্নিবেশিত। দর্শক চতুর্থ তলা থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নামতে পারেন। নিচতলা অডিটোরিয়াম, সভা, সেমিনারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এরপর মূল ভবনে যেতে পারেন।

এছাড়া জাদুঘরটির সামনে একটি বিক্রয় কেন্দ্র আছে। এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইসহ নানা স্মারক পাওয়া যাবে। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘরটি। প্রবেশমূল্য প্রতিজন ৫ টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত