বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত ৯ অক্টোবর প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। আর মধ্যবর্তী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী পূর্বাভাস থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্ট কম। এর আগে, বিশ্বব্যাংক এ বছরের এপ্রিল মাসে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং বন্যার কারণে উৎপাদনে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় এই পূর্বাভাস সংশোধন করা হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের, যা এখন বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস করতে পারে, যার ফলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের গতি শ্লথ করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, অর্থনীতির আরো সঠিক পথে এগোতে নীতি নির্ধারকদের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যার কারণে বাংলাদেশের কৃষি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে, যা সামগ্রিক খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। ফলে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এবং কৃষি-নির্ভর জনসংখ্যার জন্য তা আরো সংকট তৈরি করতে পারে।

কৃষি উৎপাদনে এই ক্ষতি দেশের খাদ্য সরবরাহ এবং মূল্যস্ফীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছর (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, সেই সময়ের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে ছিল। এর আগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা নিম্নমুখী সংশোধন করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থাৎ, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসগুলো সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক শুধু বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গেও কথা বলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, সরবরাহ চেইনের বিঘ্ন, এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি অনেক দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশও সেই ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে। দেশটির রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি, যা মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল, বর্তমানে বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস ও ক্রয়াদেশের সংকটের মুখোমুখি। পাশাপাশি, আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলার সংকট অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, দেশটি যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা না করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরো সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।