শুরু হলো ওয়ালটনের একক বৃহৎ শিল্পমেলা ‘এটিএস এক্সপো-২০২৪’

ওয়ালটন বাংলাদেশকে গর্বিত ও সম্মানিত করেছে

এনবিআর চেয়ারম্যান

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী ‘অ্যাডভান্সড টেকনোলজি সল্যুশন বা এটিএস এক্সপো-২০২৪’। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘এটিএস এক্সপো-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, এফসিএমএ। দ্বিতীয়বারের মতো একক এই বৃহৎ শিল্পমেলা আয়োজন করেছে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। মেলায় একই ছাদের নিচে ওয়ালটনের সর্বাধুনিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টস এ উৎপাদিত আন্তর্জাতিকমানের ৫০ হাজারেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস, সার্ভিসেস ও টেস্টিং সল্যুশনস প্রদর্শন করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি হল-৩ এ মেলা শুরু হয়ে চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘এটিএস এক্সপো-২০২৪’ এর উদ্বোধন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, এফসিএমএ।

সে সময় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান, উরি ব্যাংকের কান্ট্রি হেড জিন হুর, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি’র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নাজিথমীওয়ানাগে, ফরেন ডিপ্লোম্যাট সামের আবদেরাজ্জাক এবং টউম সোফিয়ানে, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান এসএম আশরাফুল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনবিআর এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ওয়ালটন বাংলাদেশকে গর্বিত ও সম্মানিত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করছে ওয়ালটন। বিশ্বে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছে ওয়ালটন। তিনি আরো বলেন, এটিএস এক্সপোতে এসে শুধু ওয়ালটন সম্পর্কেই নয়; বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়েও দারুণ ধারণা পেয়েছি। প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। ওয়ালটন শুধু নিজেরাই এগিয়ে যাচ্ছে না; দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে নিতে কাজ করছে।

বৈশ্বিক বাজারে ওয়ালটন পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অফিসিয়াল কাজে বেশ কিছুদিন পূর্ব তিমুরে ছিলাম। সেখানকার বাজারে ওয়ালটন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা দেখেছি। ওয়ালটন পণ্যের উচ্চ গুণগতমান দেশটির ক্রেতাদের আস্থা জয় করে নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম বলেন, ওয়ালটনের নিজস্ব প্রোডাকশন প্ল্যান্টে ফিনিশড প্রোডাক্টস, কাঁচামাল, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, প্যাকেজিংসহ সব ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস ও কম্পোনেন্টস উৎপাদিত হচ্ছে। এ সব পণ্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করতে সক্ষম ওয়ালটন। দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের নিকট ওয়ালটনের এই সক্ষমতা তুলে ধরে দেশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যেই এটিএস এক্সপো আয়োজনের উদ্যোগ।

তিনি জানান, স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় শিল্পজাত উপকরণ এখন দেশেই তৈরি করছে ওয়ালটন। এসব পণ্য এখন আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। এতে করে স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উপকরণ ক্রয়ের খরচ এবং সময়ও যেমন কমবে, তেমনি দেশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

সরকারকে দেশীয় শিল্পে প্রদত্ত নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে ওয়ালটনের এমডি বলেন, অ্যাসেম্বলার ও ম্যানুফ্যাকচার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইনগত পার্থক্য করা প্রয়োজন। ওয়ালটনের ভাইস-চেয়ারম্যান এসএম আশরাফুল আলম বলেন, এটিএস এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে ভিন্নভাবে পরিচিত করিয়ে দিতে চাই আমরা। বিশ্বের সেরা সব পণ্য আমরা এখন দেশে তৈরি করতে সক্ষম। লাস ভেগাস, ক্যান্টন ফেয়ার এবং ফ্র্যাঙ্কফুটের মতো বিশ্ব মেলা মঞ্চে আমরা ওয়ালটন পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা সেখানে দেখিয়েছি, বাংলাদেশ কোথায় আছে। এখন বৈশ্বিক ক্রেতাদের এখানে এসে দেখে যেতে হবে। সারাবিশ্ব অচিরেই বাংলাদেশকে প্রযুক্তি পণ্যের হাব হিসেবে চিনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এটিএস এক্সপো আয়োজন কমিটির সূত্রমতে, মেলায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী নতুন মডেলের পণ্য উদ্বোধন করা হবে। পাশাপাশি মেলা চলাকালীন দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্পের অগ্রগতি; ইলেকট্রনিক্স পণ্যে উদ্ভাবনী, এনার্জি সেভিং এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কয়েকটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সভাগুলোতে বিভিন্ন শিল্পখাতের প্রতিনিধি, স্বনামধন্য গবেষক, চিন্তাবিদ, শিক্ষক এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিবেন।

জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে গড়ে তোলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার এবং নাসদাত-ইউটিএস এর মতো বেশকিছু আন্তর্জাতিকমানের টেস্টিং ল্যাব। সেখানে নিয়োজিত অত্যন্ত দক্ষ ৬ শতাধিক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং ফিচারের পণ্য উৎপাদন করছে। তারা ফিনিশড গুডস এর পাশাপাশি ৫০ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, সার্ভিসেস ও কম্পোনেন্টস উৎপাদন করছে। এগুলোর অধিকাংশই দেশের প্রায় সব প্রকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপে প্রধান কাঁচামাল ও কম্পোনেন্টস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তাই ওয়ালটনের উৎপাদিত যাবতীয় পণ্য সামগ্রী দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের নিকট তুলে ধরার মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গতবছর প্রথমবারের মতো এটিএস এক্সপো আয়োজন করেছিল ওয়ালটন। দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তা, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল ওয়ালটনের এ শিল্পমেলা। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর আবারো এটিএস এক্সপো আয়োজন করেছে ওয়ালটন।

নিজস্ব চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস ও কম্পোনেন্টস সরবরাহের মাধ্যমে দেশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস ও শিল্পোন্নয়নে অবদান রাখছে ওয়ালটন। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মাধ্যমে আয় করছে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।