এডিপির ব্যয় কমল ৪৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রেকর্ডে কাটছাঁট উন্নয়ন বাজেট। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বাদ গেল ৪৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ। গত ৫০ বছরের মধ্যে এত বেশি বরাদ্দ কমাতে হয়নি কখনও। এমনকি করোনা মহামারির সময়ও কমাতে হয়েছে এর চেয়ে অনেক কম। এ অবস্থার নেপথ্যে রয়েছে প্রধানত ৫টি কারণ। এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় না করা, অন্তর্বর্তী সরকারের কড়াকড়ি, অদক্ষতায় সময়মতো কাজ করতে না পারা, পুরোনো সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক। গতকাল সোমবার আরএডিপি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও এনইসি চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, চলতি অর্থবছর আমরা চাইছি আরএডিপি ছোট থাকুক। কেননা অনেক বড় বরাদ্দ দিয়ে ব্যয় করতে না পারলে সেটি ভালো দেখায় না। সেই সঙ্গে এবার বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসছে। আগে থেকেই রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় ঘাটতি বেশি রেখে বরাদ্দ দেয়া হবে না। তিনি বলেন, সব প্রকল্প ইএমআইএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে থাকলে কোনটার কী অবস্থা তার আপডেট জানাতে হবে। যদি কোনো প্রকল্পের আপডেট না থাকে তাহলে অর্থমন্ত্রণালয় অর্থছাড় করবে না। এছাড়া প্রকল্প গ্রহণের পরিবেশের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আগে কীভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের না মতকে হ্যাঁ করা হতো সেটি আমরা সবাই জানি। এমনটি বাড়ি করতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দিতে অনিয়ম হয়েছে। সেগুলো এখন কঠোরভাবে দেখা হবে। এ সময় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ছাড়া)। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ কাঁটছাট হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেয়া হবে ১লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপিতে চলমান প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩৫২ প্রকল্পটি। এখন সংশোধিত এডিপিতে বেড়ে প্রকল্প সংখা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৭টি। এছাড়া অননুমোদিত নতুন প্রকল্প কমে হয়েছে ৭৭০টি। যা মূল এডিপিতে ছিল ৯১০টি। সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ৫টি খাত হলো- পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৪৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, শিক্ষায় ২০ হাজার ৩৪৯ হাজার কোটি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে ১৯ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (৩৬ হাজার ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ (২১ হাজার ৪৭৫ কোটি ১১ লাখ টাকা) এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে (১৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা)। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানায়, গত অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এসে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কাটছাঁট করে মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ২লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দ কমিয়ে যা দেওয়া হয়েছিল তার ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। অর্থবছরের মাঝপথে এসে ১৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বাদ দিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল এরও কম ২ লাখ ১হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ বরাদ্দের ৮৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ছিল ২লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এরপর ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বাদ দিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দেয়া হয় ২লাখ ১০ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ২লাখ ৩হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল এডিপি বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা কাটছাঁট সংশোধিত বরাদ্দ দেয়া হয় ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ।