চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগ

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চবি প্রতিনিধি

যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীর লিখিত, প্রেজেন্টেশন ও মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রশাসন। এরইমধ্যে তিন বিভাগে এ নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার এ তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। চবি উপাচার্য ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে এসে অনুধাবন করি শিক্ষক নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না। এবং শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যোগ্য শিক্ষক নিযুক্ত হচ্ছে না। ফলে আমরা কোয়ালিটি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে পারছি না। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নেই যোগ্য শিক্ষক দিবো। সেজন্য সরকারি শিক্ষা সংস্কারের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ৫৫৮তম সিন্ডিকেটে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় রদবদল করেছি।

চবি উপাচার্য বলেন, এ রদবদল করার আগে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রভাষক নিয়োগ করা হত। সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে এসে লিখিত, প্রেজেন্টেশন এবং মৌখিক পরীক্ষা এ তিনরকম পরীক্ষা স্তরের মধ্য দিয়ে যারা ভালো করবে, তাদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে পাস করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আজ শনিবার (গতকাল) পর্যন্ত তিনটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। এর আগে গত ২৪ ও ২৫ তারিখ দুটি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও যদি যোগ্য শিক্ষক না পাই। তাহলে আমরা পুনরায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করবো।

শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা রদবদলের কারণ সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘আমরা এমন সিদ্ধান্ত এ কারণে নিয়েছি যে, প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন স্তরে পরীক্ষা দিতে হয়। অন্যান্য পরীক্ষায় এমন নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে আমরা অনার্স-মাস্টার্স এবং এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছি। সেখানে শুধু একটি মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া আমরা যৌক্তিক মনে করি না। এটার অভিজ্ঞতাও একবারে ভালো না। আগে এসব পরীক্ষায় আর্থিক লেনদেন হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে।

সেখানে যোগ্যরা অনেক ক্ষেত্রেই উঠে আসতে পারিনি। এমন রেকর্ড ডকুমেন্টেড রয়েছে। টিআইবির রিপোর্টও আছে। পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা আবেদন করবেন তাদের নির্দিষ্ট তারিখে প্রথমে লিখিত পরীক্ষা হবে। লিখিত পরীক্ষা ৫০ নম্বর এবং এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। এতে যারা ৬০ শতাংশ মার্ক পাবে। তাদের আমরা প্রেজেন্টেশন এবং মৌখিক পরীক্ষায় ডাকছি। প্রেজেন্টেশন ও মৌখিক পরীক্ষা যুক্ত করার কারণ হচ্ছে, শুধু মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ দিলে প্রার্থীর আর্ট অব ডেলিভারি, তার অ্যানালিটিক্যাল স্কিল এসব পরীক্ষা করা যেত না। সে হয়ত ভালো করে পড়াশোনা করেছে, ভালো ফলাফল করেছে কিন্তু সে ভালো শিক্ষক হবে এ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

চবি উপাচার্য বলেন, এখন আমি শুনে আনন্দিত হয়েছি যে, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লিখিত পরীক্ষায় ফিরে এসেছেন। অন্যরা আসবেন কি না সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এ নতুন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার প্রশংসা করে এক শিক্ষক নিয়োগ প্রার্থী বলেন, আগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে একজন প্রার্থীর সমস্ত যোগ্যতা যাচাই করে শিক্ষক দেওয়াটা আমার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হত। এ জিনিসটা যখন ফর্মালে নিয়ে এসে লিখিত, প্রেজেন্টেশন ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি চালু করা আমাদের জন্য ভালো খবর। এ পদ্ধতি যেন চালু থাকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নতুন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার। এদিন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ইংরেজি বিষয়ে নিয়োগ পেতে চারজন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এছাড়া গত শুক্রবার আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি বিষয়ে নিয়োগ পেতে পরীক্ষায় অংশ নেন ২৯ জন প্রার্থী। গতকাল শনিবার ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অংশ নেন ৪২ প্রার্থী।