শুল্ক পরিবর্তনে বিদেশে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ মার্কিন কোম্পানির
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বেন নেপলার কম্বোডিয়ার তার কোম্পানির আউটডোর ফার্নিচার উৎপাদনকারী কারখানার সাথে যোগাযোগ করে উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়। ট্রাম্পের ঘোষণায় বেশিরভাগ অংশীদার থেকে আমদানির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। অনেকের জন্য তা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিস্ময়করভাবে কম্বোডিয়ার জন্য পরিকল্পিত এ শুল্ক ছিল ৪৯ শতাংশ। নেপলার এএফপিকে বলেন, সেদিন রাতেই আমরা আমাদের কারখানার সাথে কথা বলেছি। আমরা আক্ষরিক অর্থেই এই ধরণের শুল্ক দিয়ে আমাদের নিজস্ব পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনার সামর্থ্য রাখি না। নেপলার ও তার পেনসিলভানিয়া-ভিত্তিক কোম্পানি, ট্রু প্লেস-এর জন্য এই সিদ্ধান্ত আরও বেশি বেদনাদায়ক। কারণ, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনা আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে উৎপাদন চীন থেকে কম্বোডিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পর এবার আবারও বড় আঘাত পেলেন ক্নেপলার। চীনে যেখানে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেখানে কম্বোডিয়ায় তখন শুল্ক ছিল শূন্য শতাংশ। বিশাল সরঞ্জাম এবং ছাঁচগুলো কম্বোডিয়ায় স্থানান্তর করতে তার এক বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু তারপরে আবারও উচ্চ শুল্ক দেখতে হল। গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের “পারস্পরিক” শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে, কম্বোডিয়ায় তৈরি এই চেয়ারগুলো ১৯ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হয়েছে। নেপলারের মতই অভিজ্ঞতা অনেক মার্কিন কোম্পানির। তারা ইয়ো-ইয়ো থেকে শুরু করে পোশাক পর্যন্ত সবকিছু বিদেশে উৎপাদন করে।
শুল্ক মোকাবেলা করার জন্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। কেউ কেউ গ্রাহকদের উপর সারচার্জ হিসাবে নতুন খরচ চাপিয়ে দেয়। শুল্ক চরম পর্যায়ে পৌঁছালে তারা আমদানি বন্ধ করে দেয়। তারা, আশা করে ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর না করে তাদের ব্যবসাকে আবারও টেকসই করে তুলবেন। ট্রাম্প অন্যান্য দেশের প্রদত্ত হিসাবে তার শুল্ক নির্ধারণ করে এই বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার রাজস্বের দাবি করেন। কিন্তু সংস্থগুলো এই বর্ণনার বিরোধিতা করছে। নেপলার বলেন, যে পণ্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময় আমরা শুল্ক পরিশোধ করি, এটি বিক্রি করার আগে সেই শুল্ক পরিশোধ করা হয়। এখন কোম্পানির উৎপাদন কম্বোডিয়ায় স্থানান্তর করার জন্য তিনি যে লক্ষ লক্ষ ডলার ঋণ নিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে তার ব্যবসা টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে বেশ চিন্তিত নেপলার। তিনি দ্রুত নীতিগত পরিবর্তনগুলোক “দুর্ভাগ্যের চাকা” ঘোরানোর সাথে তুলনা করেন, যার ফলে প্রতিবার নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়। তিনি বলন, এই বছরের চার মাসেরও বেশি সময় ধরে, কম্বোডিয়ার রপ্তানির উপর পরিকল্পিত শুল্ক হার ০ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ, ১৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, তিন বা চার মাসের মধ্যে এই হার কী হবে তা নিয়ে কোনও ধরণের আস্থা রাখা অসম্ভব।” অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে শুল্ক মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে। ইওয়াই-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ডাকো বলেন, বৃহস্পতিবার কার্যকর শুল্কগুলো গড় শুল্ক হারকে বছরের শুরুতে ২.৮ শতাংশ থেকে ১৭.৬ শতাংশে উন্নীত করে - ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকের পর এটি সর্বোচ্চ স্তর। ট্রাম্প যদিও মার্কিন দামের উপর তার শুল্কের সীমিত প্রভাবের প্রশংসা করেছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে শুল্কগুলো ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগে। ট্রাম্পের অনেক সুদূরপ্রসারী শুল্ক তার জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহারের কারণে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
মূল্যবৃদ্ধি: বিশ্বব্যাপী শুল্ক এড়ানো বিশেষভাবে কঠিন। বার্টন ও’ব্রায়েন বলেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে তিনি উৎপাদন ত্বরান্বিত করেছিলেন এবং যতটা সম্ভব মজুদ আনার জন্য অর্থ ধার করেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়, রিপাবলিকান নেতা চীন থেকে আমদানির উপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যেখানে বার্টন ও ‘ব্রায়েন তার বেশিরভাগ পণ্য তৈরি করেন।
মেরিল্যান্ড-ভিত্তিক এই অভিজ্ঞ ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, যিনি ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব পণ্য পাঠানোর জন্য একটি কন্টেইনার ভাড়া করতেন। তিনি বলেন, তুলনামূলক ভাবে আমেরিকায় তৈরি একই পণ্য এর খুচরা মূল্যের প্রায় ছয়গুণ দামে বিক্রি হয়। তিনি ভারত এবং ভিয়েতনামেও কিছু পণ্য তৈরি করেন। কিন্তু চীনা পণ্যগুলোতে এই বছর অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এমনকি নভেম্বরে শেষ হওয়া বর্ধিত যুদ্ধবিরতির অধীনেও। ভারত এবং ভিয়েতনামের জন্য হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ। “আমি যেসব ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতা করি তাদের দিকে যদি তাকান, আমাদের সবারই পণ্য একই দেশে তৈরি। আমাদের সকলকে একসাথে দাম বাড়াতে হবে,” বলেন ও ’ব্রায়েন ।
