‘ইসরায়েলি বন্ডে আর বিনিয়োগ নয়’

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি মনে করেন, এ শহরের পেনশন তহবিল ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভাঙছে। গত সপ্তাহে সিবিএস নিউইয়র্কের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকার দেন মামদানি। সেখানে সাংবাদিক মারসিয়া ক্রেমারের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মারসিয়া ক্রেমার মামদানিকে জিজ্ঞাসা করেন, মেয়র হলে তিনি কি শহরের পেনশন তহবিলের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে বলবেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠান বা ইসরায়েলি বন্ড থেকে বিনিয়োগ সরাতে? নিউইয়র্ক সিটি ঐতিহাসিকভাবে এ দুই ক্ষেত্রেই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে আসছে। মামদানি জবাবে বলেন, ‘আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক আইনভঙ্গের কাজে আমাদের কোনো তহবিলের জড়িত থাকা উচিত নয়।’

মামদানি আরও বলেন, বর্তমান সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার ইসরায়েলি বন্ড নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। ‘আমি মনে করি, ইসরায়েলি বন্ড নিয়ে বর্তমান কম্পট্রোলারের যে অবস্থান, সেটাই সঠিক পথ’, বলেন তিনি। তবে ক্রেমার প্রশ্ন ঘুরিয়ে আবার জানতে চান, ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ সরানো নিয়ে তার অবস্থান কী। ‘আর বাকি কোম্পানিগুলো কী হবে, যেগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করছে? বিডিএস?’ প্রশ্ন করেন ক্রেমার। মামদানি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, এ শহরের সম্পৃক্ততা কোথায় সবচেয়ে স্পষ্ট, সেটা আগে বোঝা জরুরি। ‘সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, আমরা কোথায় সরাসরি জড়িত, সেটা চিহ্নিত করা। শহরের পেনশন তহবিলে ইসরায়েলি বন্ড কেনা আসলে আমাদের মূল্যবোধের স্পষ্ট প্রকাশ। আর আমরা জানি, আমাদের মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে রয়েছে,’ বলেন মামদানি। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ‘নিউইয়র্ক স্টেট কমন রিটায়ারমেন্ট ফান্ড’ এ প্রায় ৩৫২ মিলিয়ন (৩৫ কোটি ২০ লাখ) ডলারের ইসরায়েলি বন্ড ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব প্রতিষ্ঠান বা ফান্ড ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করে, সেসবের অন্যতম এটি। মামদানি ক্রেমারকে আরও বলেন, তিনি তার প্রচারাভিযান চলাকালে বারবারই বলেছেন, বর্তমান প্রশাসন যেসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে, সেসব ক্ষেত্রে আইন মেনে চলায় ফিরতে হবে। নিউইয়র্ক সিটির পেনশন তহবিল পাঁচটি আলাদা তহবিল নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে রয়েছে নিউইয়র্ক এমপ্লয়িজ রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম, নিউইয়র্ক সিটি ফায়ার পেনশন ফান্ড, নিউইয়র্ক পুলিশ পেনশন ফান্ড, নিউইয়র্ক সিটি টিচার্স রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম ও নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব এডুকেশন রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম। এই পেনশন তহবিলগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮৯ বিলিয়ন (২৮ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। এগুলো তত্ত্বাবধান করেন সিটির কম্পট্রোলার। প্রায় ৫০ বছর ধরে নিউইয়র্ক সিটির পেনশন তহবিল ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করে আসছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে বর্তমান কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার নীতি পরিবর্তন করেন। ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ল্যান্ডার সিদ্ধান্ত নেন, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের পুরোনো বন্ডের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর আর নতুন কোনো ইসরায়েলি বন্ড কেনা হবে না। কারণ হিসেবে তিনি শহরের নীতি অনুযায়ী বিদেশি সরকারের ঋণ এড়িয়ে চলার কথা জানান।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, অন্য দেশগুলোর তুলনায় ইসরায়েলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়াও উচিত নয়। গত জুলাইয়ে ল্যান্ডারের এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর বিতর্ক শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস (বিডিএস)’ আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। তবে ল্যান্ডার দাবি করেন, তার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ছিল না। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির পেনশন তহবিলের প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন (৩১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার ইসরায়েলি কোম্পানি ও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ রয়েছে।