কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সুশাসন, কার্যকর মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন এবং জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা এখন অপরিহার্য। রাজধানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জুলাই-আগস্ট সংস্করণে ‘মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব মতামত দেন। কর্মসূচিটি আয়োজন করে পিআরআইয়ের সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) এবং অস্ট্রেলিয়া সরকারের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ (ডিএফএটি)।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও কারিগরি সক্ষমতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যার ফলে এক শ্রেণির অর্থনৈতিক অলিগার্কের উত্থান হয়েছে যারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো অবৈধভাবে সুবিধা ভোগ করছে। এতে ব্যাংকিং খাত প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়ে, জনআস্থা নষ্ট হয়েছে এবং অর্থনীতির ভিত দুর্বল হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি কর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘প্রতি বছর ২০ লাখ নতুন করদাতাকে করের আওতায় আনতে হবে যাতে করে করের বোঝা কেবল যারা এরইমধ্যে কর দিচ্ছেন তাদের উপরই অপ্রয়োজনীয়ভাবে না পড়ে। একই সঙ্গে, সরকারকে অবশ্যই অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ড. ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্য ছোট উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বল্পসুদে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বকালে পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এটাই নির্দেশ করে যে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে বাধার কারণে প্রবৃদ্ধি আটকে আছে। এখন প্রশ্ন হলো-আমরা কি স্থিতিশীল ও টেকসই প্রবৃদ্ধি চাই, নাকি অস্থায়ী ও অস্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি? টেকসই প্রবৃদ্ধি চাইলে গভীর ও ব্যাপক সংস্কার অপরিহার্য।’ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় পিআরআই এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘কঠোর মুদ্রানীতি এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার কঠিন পদক্ষেপের মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে কেবল তখনই, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।’
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বিশেষ অতিথি এবং ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হেড অফ মিশন ক্লিনটন পবকে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। সরকার, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।’ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পবকে বলেন, ব্যাংকিং, কর ব্যবস্থা ও বিচার বিভাগের সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এর সাফল্য নির্ভর করছে আগামী সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। পবকে একটি আসন্ন উন্নয়ন অংশীদারিত্ব পরিকল্পনা এবং গভীর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কারে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
