পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত

অর্থ উপদেষ্টা-গভর্নর পদত্যাগ না করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘেরাও

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশেষে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি গতকাল বৃহস্পতিবার এসব ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল সকালে লেনদেন শুরুর আগেই এ সিদ্ধান্তের কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে। ব্যাংক পাঁচটি হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে। লেনদেন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ডিএসই থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর ধারা ১৫ অনুসারে ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে অ-কার্যকর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিএসই আরও জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ নভেম্বর চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকগুলো এখন থেকে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি চিঠির মাধ্যমে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে। এদিকে গত বুধবার এই পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে তাদের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরপরই ব্যাংকগুলোয় প্রশাসকও নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করেন। তিনি এ-ও জানান, ব্যাংকগুলোর বর্তমান যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে শেয়ারধারীরা অর্থ পাবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই ঘোষণার পর গতকাল বিকাল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। গতকাল লেনদেন শুরুর আগেই এই ব্যাংক পাঁচটির লেনদেন স্থগিতের কথা জানায় বিএসইসি। যদিও শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসি বেশ বিলম্ব করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যখন এসব ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তখন বিএসইসি ব্যাংকগুলোর লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলে নতুন করে কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।

অর্থ উপদেষ্টা-গভর্নর পদত্যাগ না করলে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও : একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বানারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একাংশ। মানববন্ধন থেকে আগামী শনিবার রাত ১২টার মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তারা এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আগামী মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মানববন্ধনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী, সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. আজাদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইশতেয়াক উপস্থিত ছিলেন।

এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে মার্জার প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। যে প্রক্রিয়ার ব্যাংকগুলো মার্জ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভূল প্রক্রিয়া বলে জানানো হয়। যদি মার্জ করতেই হয়, তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নিক। দুই দিনের এই সরকার শেয়ারহোল্ডারদের ধ্বংস করে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার সিদ্ধান্ত নিলে পুঁজিবাজার আর কখনও বিনিয়োগকারীর আস্থার জায়গাতে ফিরতে পারবে না। তখন অনেক অনেক প্রণোদনা দিয়েও বাজারে কোনো উন্নতি করা যাবে না। সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস করতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে চলে না। এই ব্যাংকগুলোকে ভালো ভালো তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর এগুলোর দুর্বলতা সামনে এসেছে। ততদিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বেড়িয়ে গেছে। যাদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই সাধারণ ও স্বল্প মূলধনী বিনিয়োগকারী। তারা যদি, তাদের বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত না পায়, তাহলে সারাজীবনের জন্য পুঁজিবাজার ত্যাগ করবে।’ সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক বলেন, এই সরকার অল্প কিছুদিনের জন্য গঠিত হয়েছে। যদি তারা মার্জারের এত বড় একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যায়, সেটির ভুক্তভোগী পরবর্তী সব সরকারকে ভোগ করতে হবে। আমরা চাই এই মার্জারের এই সিদ্ধান্ত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দূত সরে আসুক।

তিনি বলেন, পাঁচ ব্যাংকের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের শেয়ার শূন্য ঘোষণা করায় আমরা অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আগামী শনিবার রাত ১২টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। যদি এই তিনজন ব্যক্তি ওই সময়ে মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে আমরা আগামী মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের সারাদেশের সব আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবও। ওই পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরাও আমাদের সঙ্গে আন্দোলনের যুক্ত হবেন বলে অনেকেই আমাদেরকে জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামী রোববারই কর্মসূচি ঘোষণা করতাম, তবে সারা দেশের বিনিয়োগকারী বিচ্ছিন্ন, এই বিনিয়োগের একাকিত্ব করতে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি আগামী মঙ্গলবার যে আন্দোলন হবে তা ২০১০ সালের আন্দোলনকেও হার মানাবে।’