চীনে নভেম্বর মাসে খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বরে চীনের খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে এ কথা বলা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ভোগ্য ব্যয় চাঙা করতে, চীনা নেতৃত্বের সামনে থাকা কঠিন বাস্তবতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
দেশটির বিশাল আবাসন খাতে দীর্ঘ দিনের ঋণ সংকট, দেশটির অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক আস্থাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে, আর এই স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা এখন চীনা নেতৃত্বের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার। এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন বৈশ্বিক বাজারে চীনের রপ্তানি তুলনামূলকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) গতকাল সোমবার জানায়, নভেম্বরে খুচরা বিক্রি বছরওয়ারি ভিত্তিতে মাত্র ১.৩ শতাংশ বেড়েছে। এটি কঠোর ‘জিরো-কোভিড’ নীতি প্রত্যাহারের পর ২০২২-এর ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এই হার ব্লুমবার্গের ২.৯ শতাংশ পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক কম এবং অক্টোবরে থাকা একই ২.৯ শতাংশ থেকেও নিচে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জিচুন হুয়াং এক নোটে লেখেন, গতকাল সোমবারের তথ্যগুলো দেশীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, নীতিগত সহায়তা আগামী মাসগুলোতে আংশিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে, তবে ২০২৬ সালজুড়ে চীনের প্রবৃদ্ধি দুর্বলই থেকে যাওয়া ঠেকাতে তা সম্ভবত যথেষ্ট হবে না।
ব্যয় কমে গেলেও চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী রপ্তানির সহায়তা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলতি বছরের তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধ সত্ত্বেও তাদের রপ্তানি স্থিতিশীল রয়েছে। রপ্তানি প্রবাহের এই জোয়ারে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রয়েছে, আর এ বছর চীন এরইমধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ঐতিহাসিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অর্জন করেছে। তবে গতকাল সোমবারের সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, কারখানা কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি গত মাসে দুর্বল হয়েছে। শিল্প উৎপাদন বছরওয়ারি ভিত্তিতে ৪.৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই হার ব্লুমবার্গের পাঁচ শতাংশ পূর্বাভাসের সামান্য নিচে এবং অক্টোবরে ৪.৯ শতাংশ থেকে কম।
হুয়াং লেখেন, চীনা পণ্যের জন্য বহির্বিশ্বের চাহিদা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু দেশীয় চাহিদার দুর্বলতা তা সামলে দিয়েছে। অন্যদিকে এ বছর চাপের আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ২.৬ শতাংশ কমেছে বলে এনবিএস জানিয়েছে। গত সপ্তাহে চীনা নেতৃত্ব অর্থনীতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী বৈঠক করে, যেখানে ভোগ ব্যয় বাড়ানো, আবাসন বাজার স্থিতিশীল করা এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয় বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এই বার্ষিক রুদ্ধদ্বার বৈঠকগুলোতে সাধারণত পরবর্তী বছরের অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হলেও নির্দিষ্ট নীতিগত ঘোষণা খুব কমই আসে।
দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদরা বেইজিংকে রপ্তানি ও উৎপাদননির্ভর পুরোনো প্রবৃদ্ধি মডেল থেকে সরে এসে দেশীয় ভোগব্যয় নির্ভর অর্থনীতির দিকে এগোনোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে গতকাল সোমবারের পরিসংখ্যান বলছে, সাধারণ ভোক্তারা এখনও ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক।
চীনা পরিবারের সম্পদের অন্যতম প্রধান ভিত্তি আবাসন খাতেও মন্দা অব্যাহত রয়েছে। এনবিএস-এর জরিপ অনুযায়ী, ৭০টি বড় শহরের মধ্যে ৬৪টিতে নভেম্বরে নতুন আবাসিক বাড়ির দাম বছরওয়ারি ভিত্তিতে কমেছে। পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিওয়েই ঝাং বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগের সংকোচন ও আবাসন মূল্যের পতন সরাসরি ভোক্তা আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক গতি ধরে রাখতে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে আর্থিক ও মুদ্রানীতি কিছুটা শিথিল করা হতে পারে বলে আমি আশা করছি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে চীনের জরিপভিত্তিক বেকারত্বের হার ছিল ৫.১ শতাংশ, যা আগের মাসের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।
