অর্থনৈতিক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অবদান অবিস্মরণীয়
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত। ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি অর্থনীতিকে বাজারমুখী করতে নীতিগত সংস্কার গ্রহণ করেন। বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বীমা খাত, শেয়ারবাজার ও তৈরি পোশাকশিল্পে তার সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
ব্যাংক খাতে সংস্কার ও বেসরকারি ব্যাংকিংয়ের প্রসার : ১৯৯১ সালে সরকার গঠনের পর বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ব্যাংকিং খাতে সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেওয়া হয়। এই সময় নতুন বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ে, ফলে আর্থিক সেবার পরিধি বিস্তৃত হয়। ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার, ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।
বীমা খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ : খালেদা জিয়ার শাসনামলে বীমা খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ে। এর ফলে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা খাতে নতুন কোম্পানি গড়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বীমা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ার ফলে গ্রাহকসেবা উন্নত হয় এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে।
শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ : ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে শেয়ারবাজারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যক্রম জোরদার করা হয় এবং বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নীতিগত সহায়তা দেওয়া হয়, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হয়।
তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যাপক বিকাশ : বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে তৈরি পোশাকশিল্প (জগএ) দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হয়। রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে পোশাক খাতকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিশেষ করে শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে এ খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে শুল্ক ও কর ছাড়ের পাশাপাশি বন্ড সুবিধা ও রপ্তানি প্রণোদনা দেন তিনি। এর ফলে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ে এবং লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান : পোশাকশিল্পের বিকাশের ফলে রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে রপ্তানি অর্থ দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ হয়।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ব্যাংক, বীমা ও পুঁজিবাজারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়, যা অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নেয়। তবে সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল বলেও মত দেন তারা।
সব মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বীমা ও শেয়ারবাজারে বেসরকারি খাতের বিকাশ এবং তৈরি পোশাকশিল্পকে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আজ দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ বিজিএমইএর : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে পোশাক মালিকদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। গতকাল মঙ্গলবার পোশাক মালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।
চিঠিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএ-এর সদস্যভুক্ত সব পোশাক শিল্প কারখানায় আজ বুধবার এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এদিকে, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় বিজিএমইএ জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা সমগ্র পোশাক শিল্প পরিবার গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। দেশ একজন অভিভাবক ও কালজয়ী দেশপ্রেমিক নেতাকে হারাল। জাতীয় জীবনে এই অপূরণীয় শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রসারে তার আন্তরিকতা এবং সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্তগুলো আমাদের এই শিল্পের অগ্রযাত্রায় চিরকাল মাইলফলক হয়ে থাকবে। দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের ইতিহাসে তার অর্থনৈতিক দর্শন ও কর্মময় জীবন অম্লান হয়ে থাকবে।
বিজিএমইএ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে এবং আধুনিক শিল্পায়নের পথ সুগম করতে বেগম খালেদা জিয়া অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তার সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ পথচলা শুরু হয়, যা বেসরকারি খাতকে বিকাশের অবারিত সুযোগ করে দেয়।
এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআইয়ের শোক : দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে সারা দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ঢাকার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই দুই সংগঠন থেকে পাঠানো পৃথক দুটি শোক বার্তায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। গতকাল ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়। এফবিসিসিআই শোক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ও দীর্ঘ সংগ্রাম জাতি কৃতজ্ঞতচিত্তে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে জাতি একজন সৎ ও দেশপ্রেমিক নেত্রীকে হারাল। তার দীর্ঘ সংগ্রাম ও আপসহীন নেতৃত্বে জাতি সবসময় মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ব্যবসায়ী সমাজ তাকে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে পাশে পেয়েছে। এফবিসিসিআই বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছে। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশত নসিব করুন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি ও সাহস দান করুন। এদিকে, ডিসিসিআই এক শোক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের আর্থ-সামজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন, যা জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শোক বার্তায় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন।
আইবিসিসিআই’র শোক : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)।
গতকাল এক শোকবার্তায় সংগঠনটি জানায়, জনসেবায় তার অদম্য নিবেদন ও গণতন্ত্রের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি দেশের ইতিহাসে এক চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছেন এবং নেতৃত্বে নারীর পথ সুগম করেছেন। তার সাহস ও ধৈর্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। শোকবার্তায় আরও বলা হয়, রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে খালেদা জিয়া অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে দৃঢ় সংকল্প ও বিশ্বাসের সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন।
তিনি নিরলসভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। তার নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আইবিসিসিআই বেগম খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করে এবং তার পরিবার, অনুসারী এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন জানিয়েছে।
বিমসটেকের শোকবার্তা : বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন)। গতকাল মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় বিমসটেক সচিবালয় জানায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিমসটেক সচিবালয় গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। বিমসটেক তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছে।
