ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সা ক্ষা ৎ কা র

বড়দের নির্দেশনা ছাড়া অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়

খ্যাতনামা মুফতি, প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বীন, বিদগ্ধ মুহাদ্দিস, ইসলামবিষয়ক প্রথিতযশা লেখক,রিজালশাস্ত্রের বরেণ্য গবেষক এবং কর্ম ও সৃষ্টিশীলতায় অনন্য ব্যক্তি মুফতি হিফজুর রহমান।অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন রাজধানীর জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়ার প্রধান মুফতি হিসেবে। এ ছাড়া পাঠদান করেন আল মারকাজুল ইসলামি পরিচালনাধীন জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া কেরানীগঞ্জ ঢাকা, জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ মুহাম্মদপুর ঢাকা, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মুহাম্মদপুর ঢাকা ও জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল আমান আদাবর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন মুহাদ্দিস হিসেবে। একান্ত নিভৃতচারী এ মনীষী নিজেকে আড়াল করে রাখলেও ক্ষুরধার লেখনী ও গবেষণার মাধ্যমে এরই মধ্যে কালজয়ী হয়ে উঠেছেন। জীবনের ৬৪টি বসন্ত পেরিয়ে আসা এ বিশিষ্ট লেখকের আরবি ভাষায় রচিত গ্রন্থগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে তার রচিত গ্রন্থগুলো আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭২টি। এ ছাড়া আরবি ভাষায় তার রচিত ২০টি গ্রন্থ রয়েছে। ইসলামে নারীর মূল্যায়ন, অপসংস্কৃতির আগ্রাসন, মাজহাব ও তাকলিদ প্রসঙ্গ, কবর ও মাজারে শিরক, সুদ : ধ্বংস ও শোষণের হাতিয়ার, ইসলামের দৃষ্টিতে ধ্বংসাত্মক অপরাধ, সেবার আড়ালে এনজিওরা কী করছে, ইসলামে মুরতাদের শাস্তি এবং কাদিয়ানি মতবাদ ও উলামায়ে ইসলাম বাংলা ভাষায় রচিত তার অসামান্য রচনা। ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত ‘আল বুদুরুল মুযিআ আলা তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ’ পাঠকমহলে তার সবচেয়ে সমাদৃত গ্রন্থ। আরবি ভাষায় তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে আল ইয়াওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহের ফি তারাজিমি নুবালা-ই বাঙ্গাল ওয়াল আকাবির,যাদুল মুহতাজ, আল ফকিহু ওয়াল মুতাফাক্কিহ, মা ইয়ানবাগি বিহিল ইনায়া লি মান উতলিউল হিদায়া। কওমিপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষের পথে। তাদের মধ্যে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপনকারী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন-সম্ভাবনার আগামী কী হতে পারে? সে বিষয়ে বরেণ্য এ গবেষক আলেমে দ্বীনের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সহসম্পাদক মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ। সাক্ষাৎকারটি শ্রুতলিখন করেছেন জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়ার ইফতা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের আফিফ
বড়দের নির্দেশনা ছাড়া অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়

দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা সমাপন (ফারেগ) হওয়ার পর একজন শিক্ষার্থীর প্রধানতম কাজ কী?

শিক্ষা সমাপনের পর প্রথমে শিক্ষকতার জীবন শুরু করবে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজেকে তাতে সুচারুরূপে নিবেদিত রাখবে। যেসব বিষয়ে নিজের জানার পরিধি কম, সেগুলোর পেছনে সময় ব্যয় করে অজানা বিষয়গুলো কাটিয়ে তুলবে। এমনটি করতে পারলে প্রতিটি শিক্ষা সমাপনকারী সমাজে একজন যোগ্য সেবক হিসেবে দ্বীনের প্রচার করতে পারবে। প্রধানত, শিক্ষা সমাপনের পর পড়াশোনার সঙ্গে থাকা চাই। সেই সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর একজন যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজের মাঝে আরও যেসব গুণ থাকা দরকার, সেগুলোও অর্জন করা আবশ্যক। লেখালেখির অঙ্গনে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে। একজন যোগ্যতাসম্পন্ন লেখক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে। চাই বাংলায় হোক কিংবা আরবিতে, উর্দুতে কিংবা ফার্সিতে। মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্ররা সাধারণত চারটি ভাষার জ্ঞান রাখে। লেখালেখি করতে হলে তাকে ভালো লেখক হতে হবে। মানসম্মত লেখা তাকে লিখতে হবে। মানুষকে দ্বীনের পথে আহ্বানের জন্য ভাষার সাবলীলতা ও বক্তৃতার মাধুর্যতা জানতে হবে। তাই যার বক্তৃতার ক্ষেত্রে ভালো পারদর্শিতা রয়েছে, সে একজন আদর্শ বাগ্মী ও বয়ানকারী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তার বক্তব্য যেন এমন হয়, যা মানুষের মনে রেখাপাত করে; দ্বীনের জন্য তাদের হৃদয়কে নরম ও অনুগত করে দেয়। সে মিম্বরে যখন লোকদের দাওয়াত দেবে, তখন মানুষ তার দাওয়াত গ্রহণ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে।

চাকরি পাওয়া বা করার ক্ষেত্রে তরুণদের কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন? যারা চাকরির অভাবে বেকার জীবনযাপন করে, তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দ্বীনের খেদমত কীভাবে হতে পারে?

চাকরি পাওয়ার জন্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় যেসব দক্ষতা প্রয়োজন, সেসব অর্জন করতে হবে। এটা পূর্বশর্ত। এটা অর্জন করা হলে তার মধ্যে বিশেষত সততা, কর্মস্পৃহা, কর্মতৎপরতা ও চৌকষের গুণ থাকা আবশ্যক। চাকরিতে যোগদানের আগে অবশ্যই নিজে নিজে দৃঢ় সংকল্প করবে, আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব; কখনও খেয়ানত করব না। আমি অসত্যের সঙ্গে মিশব না। অন্যায় কাজে নিজেকে জড়াব না। সত্য ও সততাই আমার একমাত্র বৈশিষ্ট্য ও পরিচয় হবে। আরও যাবতীয় উত্তম গুণাবলির সমষ্টি তার মধ্যে থাকা চাই। এককথায় যদি বলতে চাই, তাহলে তার মধ্যে সেসব গুণ থাকতে হবে, যা একজন আদর্শ কর্মচারী ধারণ করে থাকে। আর অর্থনৈতিকভাবে একজন আলেমকে অবশ্যই স্বাবলম্বী হতে হবে। হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, ‘আলেমদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া চাই।’ হাদিসে এসেছে, ‘মানুষের মধ্যে দরিদ্রতা থাকলে মানুষ যেকোনো সময় আল্লাহদ্রোহী হয়ে যেতে পারে।’ দরিদ্রতার কারণে সে ইসলামের গ-ি থেকে বেরিয়ে যাবে। বিশেষ করে, এ যুগের মানুষের ঈমান-আমল খুবই দুর্বল। শয়তান চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে রাখে। চাকরি না থাকলে, দারিদ্র্যের কারণে দুর্বিষহ জীবনে পতিত হলে, সে যেকোনো সময় আল্লাহর ওপর অপবাদ রটাতেও ভয় করবে না। এ জন্য আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রত্যেককে সচেষ্ট হওয়া দরকার। বিশেষভাবে আলেমদের এ ক্ষেত্রে অধিক দৃষ্টি রাখা দরকার বলে মনে করি। সেজন্য হালাল পথে অর্থ উপার্জন করবে। আর হালাল রিজিক অন্বেষণ করা সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম হালাল হলো, নিজ হাতে উপার্জিত সম্পদ।’ অর্থাৎ পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করা হয়, সেটাই হালাল। প্রত্যেকে নিজের যোগ্যতা অনুসারে আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার জন্য সচেষ্ট হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মুসলিমের জন্য দ্বীন থাকা প্রয়োজন। মাছ যেমন পানি ছাড়া চলতে পারে না, তেমন মোমিন-মুসলমান দ্বীন ছাড়া চলতে পারে না। তাই দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা সমাপনকারী প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলব, দ্বীনের সঙ্গে নিজেকে নিযুক্ত রেখে হালাল পথে উপার্জন করুন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলুন।

দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা সমাপনকারীদের অনেকেই বিভিন্ন মাদ্রাসায় চাকরিতে (খেদমতে) যোগ দেন। সিনিয়র সহকর্মীর তুলনায় কম অভিজ্ঞতা কিংবা পড়াশোনায় দক্ষ হওয়ায় সহকর্মী বা প্রতিষ্ঠানের অন্য কারও ঈর্ষার পাত্র হতে দেখা যায় তাকে। রেশারেশির সূত্রপাত ঘটে এখান থেকেই। এসব কেন হয় এবং এগুলো নিরসনে করণীয় কী?

নতুন শিক্ষা সমাপনকারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেদমতে যোগদান-পরবর্তী যদি ভালো কাজ করেন, তাহলে সিনিয়রদের কাছে তারা ঈর্ষার পাত্র হয়ে থাকেন। কখনও ভালো করার ফলে রেশারেশিরও সূত্রপাত ঘটে। সেটাও অবশ্যই ঠিক। কেউ ভালো করার ফলে তার সঙ্গে রেশারেশি করা একটি মন্দ স্বভাব। রেশারেশি আর হিংসা একই জিনিস। হাদিসে রেশারেশি ও হিংসা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে। তবে হাদিসে হিংসার বিপরীতে আরেকটি গুণের কথা বর্ণিত হয়েছে; তা হলো, গিবতা বা ঈর্ষা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুটি বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথমত, সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ কোরআনের জ্ঞানদান করেছেন, আর সে তা দিনরাত অধ্যয়ন করে; দ্বিতীয়ত, ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা সে সকাল-সন্ধ্যা দান করে।’ (বোখারি : ৭৫২৯, মুসলিম : ৮১৫)। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো, এ দুই ক্ষেত্রেই ঈর্ষার অবকাশ রয়েছে। সুতরাং পরস্পর রেশারেশি করা যাবে না। কিছু দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে রেশারেশির ঘটনা পরিলক্ষিত হয়, তা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কেউ করে থাকেন। যারা দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেদমত করবেন, তাদের উচিত প্রথমে নিজেদের নিয়ত শুদ্ধ করে নেওয়া। দ্বীনের কাজগুলো আল্লাহর জন্য ইখলাসের সঙ্গে করা। কারণ ইখলাসের সঙ্গে যদি কাজ করা হয়, তাহলে যে তার হিংসা করছে, তার হিংসা করার সুযোগ নেই। তারপরও মানুষ যেহেতু মানবিক দুর্বলতার ঊর্ধ্বে নয়, তাই শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কখনও তার কাছ থেকে এহেন নিন্দনীয় কাজ প্রকাশ পেতে পারে। তখন কর্তব্য হলো, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা; নিজের বদস্বভাবগুলো শোধরানো, নিজেকে তিরস্কার করা ও আত্মসমালোচনা করাÑ কেন আমি এমন কাজ করলাম! সামনে এমন মন্দ কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। আমি মনে করি, এমনটি করলে কোনো সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে রেশারেশির তুচ্ছ কা- ঘটবে না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমালোচনার ঝড়ে কওমি তরুণ কোনো বিষয়ে উপেক্ষিত হন। সে ক্ষেত্রে সমালোচক বা সমালোচিত ব্যক্তির কার কী করণীয়?

কওমি তরুণ যদি কোনো বিষয়ে সমালোচনার ঝড়ে উপেক্ষিত হয়, তাহলে দেখতে হবে, সেটা প্রয়োজনীয় কি-না। সমালোচনা প্রয়োজনীয় হলে এক কথা, আর অপ্রয়োজনীয় হলে ভিন্ন কথা। অপ্রয়োজনীয় হলে সমালোচনার দিকে তাকিয়ে কাজ ছেড়ে থেমে থাকা যাবে না। পৃথিবীতে রাসুল (সা.)-ও কাফেরদের কাছে সমালোচিত হয়েছেন। তারা তাকে পাগল বলেছে। বিভিন্নভাবে গালাগাল করেছে। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, সাহাবাদের সমালোচনাকারী একটি দল এখনও পৃথিবীতে আছে। তারা হলো, শিয়া সম্প্রদায়। তারা রাসুল (সা.)-এর সাহাবাদের নিয়ে কত মারাত্মক ও জঘন্য ধরনের সমালোচনা করে থাকে। যুগে যুগে এ রকম একটি গোষ্ঠী ছিল, তারা তখনকার দ্বীনি আলেমদের নিয়ে বিভিন্ন কটূক্তি ও উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে বেড়াত। কিন্তু সে আলেমরা তাদের সেসব সমালোচনার দিকে ফিরেও তাকাননি। কে কী বলল, সেদিকে তাকানোর দরকার নেই। মর্দে মুজাহিদ তো সে-ই, যে পেছনের দিকে তাকায় না। দুর্বার গতিতে সামনের পথে এগিয়ে চলে। তবে যাবতীয় সমালোচনা যদি ন্যায়সঙ্গত হয়, তাহলে সেগুলো অবশ্যই লক্ষ্য রেখে চলতে হবে। সেগুলো নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে।

কওমি তরুণ লেখকদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

একসময় আমাদের কওমি আলেমদের মধ্যে বাংলা ভাষায় লেখালেখি খুব কমই হয়েছে। আরবিতেও তেমন লেখালেখি চোখে পড়েনি। উর্দুতেও না, ফার্সিতেও না। বাংলায় যতটুকু হয়েছে, তা অতি সামান্য। মুজাহিদে আজম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (সদর সাহেব হুজুর রহ.) বাংলায় প্রচুর লিখেছেন। তার সময় মুফতিয়ে আজম ফয়জুল্লাহ (রহ.) আরবি, উর্দু, ফার্সি ভাষায় লিখেছেন। তারা লেখালেখির ক্ষেত্রে তাদের সময়কালে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তখন অন্যান্য আলেমরা দ্বীনের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে তারা এদিকে তেমন বেশি কাজ করেননি। কিন্তু বর্তমানে কওমি আলেমরা (মাশাআল্লাহ) এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। তাদের এভাবে গড়ে তোলাও হয়েছে। আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে মাসিক বাংলা ও আরবি বিভিন্ন পত্রিকা বের করা হয়। দেওয়াল পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। তাদের লেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়। লেখালেখি করার জন্য তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের লেখাগুলো সাজিয়ে বার্ষিক স্মারক বের করা হয়। আমাদের ছেলেরা মাতৃভাষা চর্চায় নিজেদের প্রতিভা অসম্ভব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলছে। তাদের দেখে আমাদের হৃদয় আনন্দে ভরে যায়। তারা শুদ্ধ ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছে। বিভিন্ন সেমিনারে সুমিষ্ট ভাষায় শুদ্ধ উচ্চারণে উপস্থাপন করছে। তাদের এ ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ জন্য বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদের খতিব কওমি মাদ্রাসাপড়ুয়া। আর লেখালেখির অঙ্গনে বিগত দুই দশক ধরে কওমি তরুণরা এগিয়ে। তারা খুব সুন্দর সুন্দর বই জাতিকে উপহার দিচ্ছে। তাদের বই দেশের বড় বড় ডক্টরের কাছে গেলে তারা হতবাক হয়ে বলেন, ‘আলেমরা কীভাবে এত সুন্দর লেখে!’ কওমি তরুণদের লেখা পড়ে তারা ভূয়সী প্রশংসা করেন। আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমাদের জন্য আশার আলো। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আলেমদের লেখায় মুখরিত হবে বাংলা ভাষা; সমৃদ্ধ হবে বাঙালি মুসলিম। তরুণদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের শক্তি আছে, তাদের অদম্য স্পৃহা ও সাহস আছে। তাই এটাকে কাজে পরিণত করে আরও অধিক পরিমাণে লেখালেখিতে বেগবান হওয়া দরকার।

তরুণদের যারা লেখালেখিতে আসতে চান বা নতুন এসেছেন, তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?

যেকোনো বিষয়ে একজন রাহবার প্রয়োজন। একজন মুরব্বি বা অভিভাবকের ছায়া থাকা দরকার। তাই আজ যারা তরুণ, তারা তাদের উস্তাদের মাধ্যমে যাবতীয় বিষয়গুলো সমাধান করবে। শিক্ষা সমাপনের পর তারা যে প্রতিষ্ঠানে খেদমতে যোগদান করবে, সেখানকার বড় কোনো আলেমের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলবে। কারণ কোনো তরুণ যখন অভিভাবক বা শিক্ষকের পথনির্দেশনার বাইরে চলে যায়, তাদের দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, তখনই সে শয়তানের খপ্পরে পড়ে। এমনকি একজন বড় লেখক হলেও কারও পরামর্শে চলা চাই। জীবনের বাঁকে বাঁকে কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে তাদের শরণাপন্ন হতে হবে। বড়দের থেকে দূরে সরিয়ে নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলা ছাড়া আর কী হতে পারে! বড়দের রাহনুমা ছাড়া অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এতে বরং বিপথগামী হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা সমাপনের পর অনেক কওমি তরুণ ১ বছরের জন্য তাবলিগের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

শিক্ষকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা শিক্ষা সমাপনের পর যেকোনো মেধার ছাত্রের উচিত। নইলে দীর্ঘ এতদিন যা অর্জন করেছে, তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য শিক্ষা সমাপনের পর দু’চার বছর শিক্ষকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে অতীতের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা চাই। এ ক্ষেত্রে শক্তি সঞ্চয় করা উচিত। এরপর তাবলিগে ১ বছর বা ১ চিল্লায় সময় লাগালে অসুবিধা নেই। একটি বছর বিরতি দিলে তার অতীতের পড়াশোনা আরও দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত