আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মেহেরবান। বান্দার কল্যাণকামিতা এবং আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের জন্য বিশেষ বিশেষ সময় নির্ধারণ করেছেন। সে সময়ের ইবাদতের প্রতিদান কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা এ সুযোগগুলো কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সময়ের সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং তাঁর আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জনে অগ্রগামী হও।’ (সুরা মায়িদা : ৪৮)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন; যা আল্লাহভীরুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৩)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কখনও কখনও বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিশেষ সময় আসে। তখন যদি কেউ আল্লাহর এ বিশেষ রহমতের মাধ্যমে নিজেকে ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে, তাহলে বাকি জীবনে তার দুশ্চিন্তা ঘুচে যাবে।’ (তাবারানি : ২৩৯৮)।
শাবান মাসে ইবাদতের ফজিলত
শাবান মাস আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও ইবাদত করার অন্যতম একটি বরকতময় মাস। এ মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি বড় উপহার। এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা চাই। গোনাহের বোঝা হালকা করা উচিত। কৃত অন্যায়ের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। রমজান মাস রোজা ও কিয়ামুল লাইল তথা (তারাবি, তাহাজ্জুদ) আদায়ের মাস। শাবান মাস ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ রমজানের আগের মাস। এ মাসের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক হলো, ফরজ নামাজের আগে সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজের মতো, যা আদায়ের মাধ্যমে মূলত ফরজের ত্রুটি সংশোধিত ও ঘাটতি পূর্ণ হয়। শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির মাস। আত্মা ও দেহের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুত করার মাস। অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো কিছুর আগাম চর্চা সেই কাজের কষ্ট দূর করে সহজ করে দেয়। কার্যকলাপ এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। আনুগত্যের মাধুর্য ও আনন্দের স্বাদ নিতে সাহায্য করে। শাবান মাসে ভালো কাজ করার চর্চা রমজান মাসের কাজকে অনেক সহজ করে দেয়। শাবান এমন একটি মাস, যার আমল আল্লাহর কাছে উত্থাপিত হয়। তাই আল্লাহর কাছে উত্থাপিত হওয়ার আগে নিজের আমল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক বেশি ইবাদত করতে হবে। এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতে হবে। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন যে, অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি যখন রোজা রাখা শুরু করেন, তখন মনে হয়, আপনি কখনোই আর রোজা ছাড়বেন না। আবার যখন দেখি, আপনি রোজা রাখছেন না, তখন মনে হয়, সপ্তাহে দু’দিন ছাড়া কখনোই আর রোজা রাখবেন না। আর আপনার রোজার মধ্যে যখন এ দু’দিন সামনে চলে আসে, তখন আপনি এ দু’দিন রোজা রাখেন।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘কোন দু’দিন?’ আমি বললাম, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘এ দু’দিন ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে বান্দার আমলনামা উপস্থাপন করেন। আর আল্লাহর কাছে আমার আমল উপস্থাপন করার সময় আমার পছন্দ হলো, আমি রোজা অবস্থায় থাকব।’ আমি বললাম, ‘আপনি তো শাবান মাস ছাড়া কখনও এত বেশি রোজা রাখেন না।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘শাবান মাস রমজান ও রজব মাসের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস, যখন অধিকাংশ মানুষ ইবাদত থেকে উদাসীন থাকে। অথচ এ মাসেই আল্লাহর কাছে আমাদের আমলনামা উপস্থাপন করা হয়। আর আল্লাহর কাছে আমার আমল উপস্থাপন করার সময় আমার পছন্দ হলো, রোজা অবস্থায় থাকব।’ (সুনানে নাসাঈ : ২৩৫৭)। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে এ মাসের তুলনায় অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। কয়েকটি দিন ছাড়া প্রায় পুরো শাবান মাসই রাসুল (সা.) রোজা রাখতেন।’ (মুসলিম : ১১৫৬)।
অলসতা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়
অলসতা আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। অলস ব্যক্তি তার অন্যায় অনুভব করে না। গোনাহ থেকে ফিরে আসে না। নিজের কৃত অন্যায়ের প্রতি অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে না। সে সবকিছু দেখে; কিন্তু অনুভব করতে পারে না। তাকে উপদেশ দেওয়া হয়; কিন্তু সে অন্যায় থেকে ফিরে আসে না। শাবান মাসে রাসুল (সা.) বেশি বেশি রোজা রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা, তিনি বলেন, ‘শাবান মাস রমজান ও রজব মাসের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস, যখন অধিকাংশ মানুষ ইবাদত থেকে উদাসীন থাকে। অথচ এ মাসেই আল্লাহর কাছে আমাদের আমলনামা উপস্থাপন করা হয়। আর আল্লাহর কাছে আমার আমল উপস্থাপন করার সময় আমার পছন্দ হলো, রোজা অবস্থায় থাকব।’ (সুনানে নাসাঈ : ২৩৫৭)।
রমজানের জন্য প্রস্তুতি
রমজান মাসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। এটি আনুগত্য ও ইবাদতের মাস। এ মাসের হক আদায়ের জন্য প্রয়োজন সময়ের সদ্ব্যবহার। আত্মাকে প্রস্তুত করা চাই। একাগ্রতা এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে এ ব্যাপারে যে, আমি রমজানের সব হক আদায় করে আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করব। বেশি বেশি আমল কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করা চাই। আনুগত্য প্রাপ্তিতে ব্যবহৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো, আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হওয়া এবং অনুশোচনা করা, অধিকার ও পরিণতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া, অস্পষ্টতা ও আকাক্সক্ষা এড়ানো এবং পাপ ও ভুল থেকে ক্ষমা চাওয়া। রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির অন্যতম হলো, আল্লাহর আনুগত্যের অনুশীলন করা। আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য আমলের ধারাবাহিকতা, প্রাথমিক চর্চা, প্রয়োজনীয় সহযোগী এবং ধাপগুলোর ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ, ধারাবাহিকতার অভাব আত্মার উদাসীনতা এবং অবিশ্বাসের কারণ হতে পারে। ইবাদতের আনন্দকে বঞ্চিত করতে পারে। একজন ব্যক্তির আমল ও ইবাদত যখন ধারাবাহিক না হবে, তখন সে অনেক কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হবে।
বিগত রমজানের কাজা আদায়
যাদের বিগত রমজানের রোজার কাজা আছে, তাদের আসন্ন রমজান শুরু হওয়ার আগেই কাজা রোজাগুলো আদায় করে নিতে হবে। কেননা, শরিয়তসম্মত বৈধ কারণ ছাড়া কাজা রোজা আদায়ে বিলম্ব করা জায়েজ নেই। আবশ্যকীয় আমল এবং আল্লাহর আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়া প্রয়োজন।
১৫ শাবান ১৪৪৩ হিজরি মোতাবেক ১৮ মার্চ ২০২২ মদিনার মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষেপিত ভাষান্তর আল মামুন নূর