পাশ্চাত্যের বিশ্ববিখ্যাত মনীষী মাইকেল এইচ হার্টস তার ‘দ্য হানড্রেড’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) মানব জাতির ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় ও জাগতিক উভয় দিক থেকে সমানভাবে সবচেয়ে সফলতম ব্যক্তি।’ এ জন্য তিনি মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বকালের সেরা ১০০ জন মনীষীর মধ্যে প্রথম স্থান দিয়েছেন। মহানবী (সা.) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হয়েও তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, সমরনায়ক ও প্রতিরক্ষা বিশারাদ, যা কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। ড. শেখ উসাইমিনের মতে, ‘Not only has Islam developed physically but also spiritually because Muslims have sincerely adopted all aspects of Hijrah’. মূলত মদিনায় হিজরত ও মদিনা সনদের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তা তথা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ফলে ইসলাম ও মুসলিমরা সমগ্র পৃথিবীর সব তাগুতি শক্তির জন্য হয়ে ওঠে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন যুদ্ধ ও অভিযানের।
যুদ্ধের অনুমতি : হিজরত ও মদিনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাষ্ট্র গঠন মক্কার কাফের, মুশরিকদের জন্য ছিল তাদের মূর্তিপূজা, জাতীয়তাবাদ, রাজনৈতিক প্রতিপত্তি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এক পর্বত সমান চ্যালেঞ্জ। প্রতিনিয়ত কাফের-মুশরিকদের পক্ষ থেকে ভয়ভীতি ও বিপজ্জনক হুমকি মদিনার মুসলিমদের অস্তিত্বের জন্য ছিল এক মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। সর্বশেষ যখন তারা চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, তখন আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের যুদ্ধের অনুমতি দেন। কোরআনের ঘোষণা, ‘যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো তাদের, যারা আক্রান্ত হয়েছে। কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের সাহায্য করতে সক্ষম।’ (সুরা হজ : ৩৯)।
প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে সংঘটিত অধিকাংশ যুদ্ধ ছিল প্রতিরক্ষামূলক। এছাড়া তার প্রেরিত অভিযানগুলোও পরোক্ষভাবে ছিল প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ। আরবিতে দিফাইয়্যুন ও ইংরেজিতে Defensive war বলা হয়।
সমরনীতির বিভিন্ন দিক
১. সামরিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা :
(ক) সেনানায়করা (উমারা আল সারিয়া) : হিজরতের ৫ মাস পর ৬২৩ খ্রি. প্রথম হি. রমজান মাসে একটি সারিয়ায় প্রথম সামরিক অধিনায়ক নিয়োগ করা হয় এবং সর্বশেষ সেনা অধিনায়ক নিয়োগ করা হয় ১১শ’ হি./৬৩২ খ্রি. জুন মাসে। মোট ৭২ জন অধিনায়ককে নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বাধীনভাবে কোনো অভিযানের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, এরূপ সামরিক অধিনায়কদের সংখ্যা ছিল ৭৪টি। কিন্তু ৭৪টি সেনা অভিযানে ৪৯ জন অধিনায়ক নিয়োগ লাভ করে, যা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সুষম বণ্টন করা হয়।
(খ) পতাকা বহনকারীরা (সাহিব আল লিওয়া ওয়া আর রায়াহ) : ড. মুহাম্মদ ইয়সিন মাযাহার সিদ্দিকী তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মুসলিম সেনাবাহিনীর পতাকাবাহীরা ছিলেন মোট ৯০ জন। তন্মধ্যে আলী বিন আবি তালিব, জুবায়র ইবনুল আওয়াম, হামজাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, মুস’আব বিন উমায়র, সাদ বিন উবাদাহ, হুবাব ইবনুল মুনজির, যায়দ বিন সাবিত ও সা’দ বিন মু’আজ উল্লেখযোগ্য।
(গ) স্কাউট : তালিয়াহ বা স্কাউট ছিল পর্যবেক্ষণের উদ্দেশে নিয়োজিত ক্ষুদ্র সেনাদল। তালিয়াহ ছিল বিশিষ্ট দল, যারা প্রকাশ্যে দিনে কাজ করত। শত্রুদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য অভিযানকালে তালিয়াহ প্রেরণ করা হতো। যুবায়র ইবনুল আওয়াম, আলী বিন আবি তালিব, আব্বাদ বিন বিশর, উসায়দ ইবনুল হুজায়র তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
(ঘ) গুপ্তচর (উয়ুন) : রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন অভিযান, যুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ, শত্রু বাহিনীর অবস্থান ও নানাবিধি কাজে দক্ষ গুপ্তচর নিয়োগ দিতেন ও পাঠাতেন। আমর ইবন উমাইয়া যামুরি ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তাদের সংখ্যা ছিল ১৮ জন।
(ঙ) পথপ্রদর্শক (দালিল) : মহানবী (সা.) বিভিন্ন সারিয়্যাহ ও গাযওয়াহয় পথপ্রদর্শক বা দালিল নিয়োগ দিতেন। এদের সংখ্যা ১৪। তন্মধ্যে আবু হামসাহ আল হারিসি, সাবিত ইবনুয যাহহাক, মাযকুর, মাসউদ ইবন হুনায়দাহ আসলাম, আমর ইবনে আবদ নাম উল্লেখযোগ্য।
(চ) যুদ্ধলব্ধ সামগ্রী ও যুদ্ধবন্দির দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মকর্তা (আসহাবুল মাগানিম ওয়াল আসারা) : গাযওয়া এবং সারিয়া উভয় প্রকার যুদ্ধভিযানে গনিমত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হতো। এদের সংখ্যা ৩২-৩৩ জন ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে কাব, মহাম্মদ ইবন আসলামাহ, উবাদাহ ইবনে সাবিত, আব্দুল্লাহ ইবনে সাল্লাম, শুকরান তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
(ছ) যুদ্ধাস্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আসহাবুস্-সিলাহ ওয়াল ফারস) : আল কোরআনে অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা কাফেরদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে যা দ্বারা আল্লাহর শক্র ও তোমাদের শত্রুদের ভীত-সন্ত্রস্ত করবে, এছাড়া অন্যদেরও যাদের তোমরা জানো না; কিন্তু আল্লাহ জানেন।’ (সুরা আনফাল : ৬০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) অশ্বসহ যুদ্ধসামগ্রী সংগ্রহে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, বদর যুদ্ধের কিছু আগে মহানবী (সা.) ৩টি অশ্ব সংগ্রহ করেন এবং তা সা’দ ইবনে আসাদ বিন যুরারাহ খাজরাজির তত্ত্বাবধানে রাখেন।
২. অস্ত্র ভান্ডার : রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা সমরাস্ত্র মজুত রাখার ও বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। সমরাস্ত্রের অধিকাংশ ছিল যুদ্ধপ্রাপ্ত গনিমত, যার খুমুস বা ১/৫ ভাগ ছিল রাষ্ট্রের জন্য। তাছাড়া তাৎক্ষণিক যুদ্ধের জন্য যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করা হতো। অস্ত্র ও যুদ্ধসামগ্রীর মধ্যে ছিল চামড়ার পোশাক (আনতা), অস্ত্রের (সিলাহ) যার মধ্যে ছিল- তলোয়ার (সাইফ), লৌহবর্ম (দিরা), লৌহ শিরস্ত্রাণ (বায়যাহ), বল্লম (রুম), নিক্ষেপযোগ্য ছোট বর্শা (আনজাহ), বর্শা (কানার), লৌহ ও চামড়া তৈরি (তুরমা ওয়া হাজাফা), মিনজানিক যন্ত্র (ক্ষেপণাস্ত্র), দাবাবাহ (যুদ্ধের কল), খায়েল (যুদ্ধের ঘোড়া), উট ইত্যাদি। যুদ্ধসামগ্রীর একটি বড় অংশ মুসলিমরা দান করতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের থেকে ক্রয়ও করা হতো।
৩. গাযওয়া ও সারিয়া : যেসব যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং অংশগ্রহণ করতেন, সেগুলোকে ‘গাযওয়া’ এবং যেগুলোতে স্বয়ং তিনি অংশগ্রহণ করেননি, বরং অন্যদের নেতৃত্বে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করিয়েছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। মোট ৯০টি যুদ্ধ ও অভিযানের মধ্যে ইবনু হিশাম ২৭টি গাযওয়া ও ৩৮টি সারিয়ারসহ ৬৫টি যুদ্ধের কথা বলেছেন। আল্লামা মানছুরপুরী ৮২টি, আল্লামা মুবারকপুরী ও মানছুরপুরীর যৌথ হিসাব মতে ৮৬টি। তাছাড়া হাদিস ও ইতিহাস থেকে আরও চারটিসহ মোট ৯০টি হয়েছে।
৪. সেনাবাহিনীর বিন্যাস : রিউবেন লেভি ইবন খালদুনের বরাত দিয়ে বলেন, মহানবী (সা.)-এর সময় পঞ্চবিন্যাস পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যাকে ‘আল খামিস’ বলা হয়। এগুলো হলো : ১. কালব (কেন্দ্র-আমির), ২. মায়মানাহ (দক্ষিণভাগ-সোনানায়ক), ৩. মায়সারাহ (উত্তরভাগ-সোনানায়ক), ৪. মুকাদ্দামা (অগ্রবর্তী বাহিনী-সম্মুখ বাহিনী+পতাকা বাহিনী), ৫. সাবাহ (পশ্চাত বাহিনী-মালামাল, অস্ত্রশস্ত্র ও ভারি সরঞ্জামের বাহন)।
৫. সৈনিকদের গণনা : রাসুলুল্লাহ (সা.) সৈন্যদের অভিযানে যাওয়ার আগে বা যুদ্ধের আগে সৈন্য গণনা সমাধা করতেন। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ থেকেই সেনা সংগ্রহ ও গণনার ব্যাপারটি চালু হয়।
৬. অপ্রাপ্তদের যুদ্ধের না নেওয়া : ইবন সা’দ বলেন, রাজধানী থেকে এক মাইল যাওয়ার পর সৈন্য গণনা করে যাদের বয়স কম, তাদের ফেরত পাঠানো হয়। উদাহরণ স্বরূপ উমামা বিন যায়েদ (রা.)।
৭. সেনাবাহিনীর বিভাগ : সেনাবাহিনী ছিল ৫টি বিভাগে বিভক্ত। (ক) পদাতিক (মুশাত) (খ) অশ্বারোহী (আল-খায়ল) (গ) তিরন্দাজ (রুমাত) (ঘ) বর্মধারী (আহলুস সিলাহ) (ঙ) রসদবাহী (রিসসাহ)।
৮. প্রাদেশিক সামরিক সংগঠন : প্রাদেশিক সমর প্রশাসনকে ‘বিলায়াত’ বলা হতো। এটি গভর্নর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
৯. মুসলিম নারী সৈনিকদের সেবামূলক কাজে নিয়োগ : অনেক গাযওয়াতে নারীরা আহত সৈন্যদের সেবার কাজে নিয়োজিত থাকতেন। আয়েশা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
১০. আল-হারাস তথা মদিনা রক্ষা : মহানবী (সা.) যখনই রাজধানীর বাইরে যেতেন, তার অনুপস্থিতিতে তিনি রাজধানী রক্ষা ও বাইরের হামলা প্রতিরোধে একটি অস্থায়ী সরকার ও সেনাবাহিনী রেখে যেতেন। যেমন- বনু কুরাইযাহর অভিযানে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মু মাকতুমকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।
১১. পর্যায়ক্রমিক সেনাপ্রধান নিয়োগ : এটি ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম নীতি। মুতাহর যুদ্ধে জায়েদ বিন হারিসা, জাফর বিন আবি তালিব ও আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহার সেনাপতি নিয়োগ তার প্রমাণ।
১২. যুদ্ধ-পূর্ব ইসলামের দাওয়াত : এটি ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম নীতি। যুদ্ধের আগে তিনি শত্রু বাহিনীকে ইসলাম কবুলের আহ্বান জানাতেন। খায়বারের দুর্গ আক্রমণের আগে তিনি আলী (রা.)-কে বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙিনায় উপনীত হয়ে তাদের ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের ওপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে, তাও তাদের জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমাদের দ্বারা যদি একটি মানুষও হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম। (বোখারি : ৩৭০১)।
১৩. বেসামরিক নাগরিক হত্যা নিষিদ্ধকরণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস না করা ও উপাসনালয় ধ্বংস না করার নির্দেশ : এক্ষেত্রে তার নীতি ছিল নারী, শিশু, বয়স্কসহ সব বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া। গাছপালা কর্তন নিষিদ্ধ করতেন ও ইবাদতগৃহগুলোতে হামলা না করতে বিশেষভাবে উপদেশ দিতেন। সম্পদ লুণ্ঠন নিষিদ্ধ করতেন।
১৪. যুদ্ধবন্দি ও দূত হত্যা নিষিদ্ধ : এক্ষেত্রে তার নীতি ছিল- আহতদের আক্রমণ করো না, পলাতককে ধাওয়া করো না এবং কোনো বন্দিকে হত্যা করো না।
১৫. যুদ্ধবন্দি মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) মুক্তিপণ, শিক্ষা প্রদানের বিনিময় ও বিনাশর্তে বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। বদরযুদ্ধের বন্দিদের ক্ষেত্রে এটি পরিলক্ষিত হয়।
১৬. জিহাদের ময়দানে দোয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের আগে সফলতার জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া করতেন।
প্রতিরক্ষা কৌশল
১. পানির উৎস নিয়ন্ত্রণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের সময় যেখানে পানির ব্যবস্থা থাকত, সেখানে শিবির স্থাপন করতেন। বদরযুদ্ধের দিন বিখ্যাত সাহাবি হুবাব ইবনুল মুনযির (রা)-এর পরামর্শে তিনি পানির প্রস্রবণটির কাছে তাঁবু স্থাপন করেন।
২. যুদ্ধের প্রতীক চিহ্নের ব্যবহার : রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধে বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করতে সাহাবিদের নির্দেশ দিতেন। তিনি বদরে (আহাদ আহাদ), উহুদে (আমিত, আমিত), খন্দকে (হামিম, লা ইউনসারুন বুন), মুছত্বালিকে (ইয়া মানছুর, আমিত), মক্কা বিজয়ে (ইয়া বানি আবদির রহমান) এসব প্রতীকী শব্দ ব্যবহার করতেন।
৩. শত্রু শিবিরের সংখ্যা গণনা কৌশল : বদরের যুদ্ধের সময়ে কাফিরদের দৈনিক উট জবাইয়ের হিসেবে তিনি তাদের সৈন্য সংখ্যা নির্ণয় করেন।
৪. যুদ্ধ শেষ হয়েছে কি-না তা জানার কৌশল : উহুদ যুদ্ধের শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন সৈন্য পাঠালেন আর বললেন, দেখবে, যদি তারা ঘোড়ায় আরোহণ করে উট হাকিয়ে নেয়, তাহলে তারা মদিনার পথে আসছে। আর যদি তারা উটের পিঠে চড়ে, তবে তারা মক্কার দিকে যাবে। বাস্তবেও তাই হলো।
৫. দিনের বেলায় আত্মগোপন ও রাতের বেলায় পথ চলা : মূলত : শত্রুদের আকস্মিক আক্রমণ, ধোকা ও ভুল বার্তা দেওয়ার জন্য তিনি এ কৌশল নিতেন। গাযওয়ায়ে দুমাতুল জানদালের ঘটনা তার উদাহরণ।
৬. প্রত্যুষে আক্রমণ : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ম ছিল, কোনো সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করতে চাইলে সেখানে রাত্রিযাপন করতেন এবং সকাল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ পরিচালনা করতেন না।
৭. ভাষণ প্রদান : রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের আগে সাহাবিদের উদ্দেশে জ্বালাময়ী ভাষণ দিতেন, যা তাদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রেরণা জোগাত।
৮. আল্লাহর রহমত ও সাহায্য প্রার্থনা : ওহির জ্ঞানে সমৃদ্ধ রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালা কর্তৃক পরিচালিত হন বিধায় সর্বোপরি সব সিদ্ধান্ত, নীতি ও কৌশল মূলত আল্লাহর বিশেষ রহমত।
পরিশেষে বলা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমরনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশল ছিল আল্লাহ প্রদত্ত, যা সব যুগের, সব রাষ্ট্রনায়ক, সেনানায়ক, প্রতিরক্ষা কৌশলবিদ ও সব মানুষের জন্য অনুকরণীয়।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা