ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বায়তুল মোকাররমের জুমার বয়ান

আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন

মুফতি রুহুল আমিন
আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন

আল্লাহতায়ালা আমাদের অগণিত নেয়ামত দান করেছেন। মেধা-মস্তিষ্ক ও সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর অন্যতম। তাই আমরা তাঁর কাছে দায়বদ্ধ। আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুক, ভালো লাগুক বা না লাগুক, তাঁর সৃষ্টির রহস্য ও তাৎপর্য বোধগম্য হোক বা না হোক, সবকিছু আমাদের মানতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে। আমরা যেহেতু তাঁর কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তাই দোয়া করব, হে আল্লাহ! আমরা আপনার হুকুম যথাযথভাবে মানব এবং সাধ্য অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করব। হে আল্লাহ! আপনিই তো আমাদের ব্যাপারে বলে দিয়েছেন, আপনি আমাদের দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআন সাক্ষী, ‘আল্লাহ তোমাদের ভার লাঘব করতে চান। মানুষকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা : ২৮)। আমরা যেহেতু দুর্বল, তাই আমাদের ভুল, পদস্খলন ও ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে। উদাসীনতা আসা উচিত নয়, তাও আসতে পারে। তারপরও আমরা নিরাশ নই। কারণ, নিরাশ হতে আপনি বারণ করেছেন। আপনি আপনার নবীকে বলেছেন, ‘বলে দাও, হে আমার বান্দারা! যারা নিজ সত্তার ওপর সীমা লঙ্ঘন করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : ৫৩)।

তিনিই একমাত্র ক্ষমাশীল

আমরা আপনার প্রতি আশাবাদী, আমাদের মৃত্যুর চূড়ান্ত আলামত আসার আগ পর্যন্ত যত গোনাহ করি, সবই আপনি ক্ষমা করে দেবেন। কারণ, আপনি তওবা-ইস্তেগফারের দরজা খুলে রেখেছেন। আমাদের সুযোগ দিয়েছেন। আমরা যদি তওবা করি, তাহলে আমাদের সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। এমনই সুসংবাদ দিয়েছেন আপনার প্রিয় হাবিব (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘গোনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২৫০)। আল্লাহতায়ালা পাপীদের শুধু মাফ করেন না, বরং মাফ করতে ভালোবাসেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে, তাদের পছন্দ করেন।’ (সুরা বাকারা : ২২২)। পাপীরা পাপ বর্জন করে অনুতপ্ত হলে তাদের মাফ করেন। কারণ, তাদের কাছে পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলবে, ‘আমরা তো ভুলে গেছি, ভুল হয়ে গেছে। এখন অনুতপ্ত হচ্ছি, ক্ষমা চাচ্ছি।’ আল্লাহতায়ালা এদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘তারা সেসব লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা অন্য কোনোভাবে নিজেদের প্রতি জুলুম করলে, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে। কৃত গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে-ই বা আছে, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৫)।

আল্লাহ বান্দার গোনাহ ঢেকে রাখেন

প্রবৃত্তির তাড়নায় হোক, শয়তানের ধোঁকায় হোক, পারিবারিক বা সামাজিক যেকোনো কারণেই হোক বা কেউ ইচ্ছে করেই গোনাহ করুক, আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তার বান্দার গোনাহ ঢেকে রাখবেন। তিনি বান্দার গোনাহ গোপন রাখতে পছন্দ করেন। তাই যারা? মুসলমানদের দোষ প্রকাশ না করে গোপন রাখে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালের সুসংবাদ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি অত্যাচার করে না। তাকে দুশমনের হাতে সোপর্দও করে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব-অনটন পূরণ করবে, আল্লাহ তার অভাব-অনটন দূর করবেন। আর যে কোনো মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহতায়ালা তার প্রতিদানে কেয়ামত দিবসে তাকে বিপদ থেকে পরিত্রাণ দেবেন। আর যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামত দিবসে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন।’ (মুসলিম : ৬৪৭২)।

অন্যের দোষচর্চা করা যাবে না

কাউকে দোষী মনে করা বা কারও দোষ অনুসন্ধান করা নিষেধ। এমনকি দোষী ব্যক্তির সংশোধনের নিয়ত ছাড়া যারা কারও দোষ প্রচার করে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে, ‘হে মোমিনরা! অধিকাংশ অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোনো কোনো অনুমান গোনাহ। তোমরা কারও গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না। তোমাদের একে অন্যের গিবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত : ১২)। গিবতের এ আয়াত অবতীর্ণ করার কারণ হলো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনেক বেশি ভালোবাসেন। সুতরাং ভালোবাসার মানুষগুলো শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ভুল করে ফেলেছে। তার দোষচর্চা করার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? যদি দোষ চর্চিত হয়, তাহলে মনে রাখতে হবে, যেন মৃত্যু ভাইয়ের গোশত খেল। আর এটা নিশ্চয়ই নিকৃষ্ট ও খারাপ কাজ। এটা বান্দার হক। ওই বান্দা মাফ না করা পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মাফ করবেন না। অন্য পাপের ক্ষেত্রে যে পাপ করেছে, সে তো তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এমনকি কেউ যদি দিনে সত্তরবারও অপরাধ করে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কে-ই বা আছেন, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে?’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৫)।

ইলম অর্জন করতে হবে

কোনটা নেকির আর কোনটা গোনাহের কাজ, আমাদের জানতে হবে। সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। যে আমল ফরজ, তার ইলম অর্জন করাও ফরজ। আর যা ওয়াজিব, সে সম্পর্কে জানাও ওয়াজিব। যা আমাদের জন্য সুন্নত, তা জানাও সুন্নত। যা মুস্তাহাব, সে সম্পর্কে জানাও মুস্তাহাব। জায়েজ-নাজায়েজের ইলম অর্জন করা, কোন কাজে আল্লাহ খুশি হবেন আর কোন কাজে নারাজ হবেন, তা জানাও সবার ওপর ফরজ। বিশেষ করে, আমি যে পেশা অবলম্বন করেছি, সে কাজ সম্পর্কে ইলম অর্জন করা আমার জন্য ফরজ। তাই যখন যে বিষয় প্রয়োজন হয়, কোনো অভিজ্ঞ মুফতি সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করে সে অনুযায়ী আমল করা চাই। প্রত্যেকটা গ্রামে একেকজন করে অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব থাকা জরুরি। যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সরকার বা এলাকাবাসী নেবে। যাতে দ্বীনি যে কোনো বিষয়ে তার কাছ থেকে জেনে আমল করা যায়।

জেনে বুঝে আমল করতে হবে

কেয়ামতের দিন আমরা ঈমান, ইবাদত, লেনদেন, সামাজিক আচরণবিধি ও চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হব। এ পাঁচ বিষয়েই আমাদের যত্নবান হতে হবে?। সাধ্য অনুযায়ী আমল করতে হবে। এগুলোর ওপর আমল করে কেউ উচ্চমানের, কেউ মধ্যম ধরনের, আবার কেউ নিম্নমানের মর্যাদা অর্জন করবে। এ ক্ষেত্রে যে যতটুকু ইখলাসের সঙ্গে শরিয়তের যথাযথ নিয়ম মেনে আমল করবে, সে তত বেশি মর্যাদা হাসিল করবে। এ জন্যই রাসুল (সা.) সাহাবিদের প্রতিটি আমলের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সেভাবেই আমাদের বেশি বেশি আমল করতে হবে। তবে কোনো আমলের ওপর নির্ভর করা যাবে না যে, আমি এ আমলের মাধ্যমেই নাজাত পেয়ে যাব; বরং নাজাত পেতে অবশ্যই আল্লাহর রহমত ও দয়া প্রয়োজন। তবে এ আমলের মাধ্যমে তা সহজে লাভ হয়।

৮ আশ্বিন ১৪২৯ (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) তারিখে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রদত্ত জুমার বয়ানের সংক্ষেপিত শ্রুতলিখন করেছেন মুফতি মাহবুবুর রহমান

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত