মরুর বুকে তিনি ছিলেন অনন্য। তার সুরভিতে বিমোহিত হলো পৃথিবীর এপিঠ-ওপিঠ। সভ্যতার পুরোনো পাণ্ডুলিপি উন্মোচিত হলো নতুন মোড়কে। আসমানি হরফে যার নাম রাখা হলো, মুহাম্মদ। তিনি সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেন আদর্শের সৌরভ। রচনা করলেন মহান চরিত্রের উপাখ্যান। আল্লাহতায়ালা তাঁর এ প্রিয় হাবিবকে সম্বোধন করে বলেন, ‘আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম : ৪)। তার মহান চরিত্রের ব্যাখ্যায় আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তার চরিত্র মাধুরী যেন কোরআনেরই প্রতিচ্ছবি।’
কোরআনের প্রতিটি বিধিনিষেধ মিশেছিল তার রক্তে-মাংসে, হৃদয়ের সর্বাঙ্গে। কোরআন মাফিক সব করতেন। রবের ইশারায় সব বলতেন। তিনি চরিত্র দিয়ে মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার ছবি এঁকেছেন। মোমিন হৃদয় ছাপিয়েও তার চরিত্রে অভিভূত হয়েছে মুশরিক হৃদয়। সহসা ছায়া নিয়েছে ইসলামের শীতল তলায়। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা না বলার। একবারের কথা। গ্রীষ্মের ভরদুপুর। মরু দাপিয়ে জিহাদ থেকে ফিরছেন নবীজি (সা.)। সঙ্গে সাহাবিরাও। খানিকটা ক্লান্তিবোধ হচ্ছিল। বিশ্রামের জন্য সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লেন বাবলার ছায়ায়। নবীজি (সা.)-ও বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়লেন। বাবলার ডালে তরবারিটি টাঙিয়ে চোখ বুজলেন।
একজন মুশরিক ঠিক তখন সুযোগ নিল। হাতে তরবারিটি তুলল। ঘুম ভেঙে গেল নবীজি (সা.)-এর। তরবারি উঁচিয়ে লোকটি বলল, ‘হে মুহাম্মদ! আমার থেকে কে বাঁচাবে তোমায়?’ তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘আল্লাহ’। আচানক তরবারিটি তার হাত ফসকে পড়ে গেল। নবীজি (সা.) এবার তরবারিটি হাতে তুলে নিলেন। বললেন, ‘এবার বলো, তোমাকে কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে?’ লোকটি নিরুপায়। অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইল। বলল, ‘আপনি উত্তম চরিত্রের ধারক।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘মুসলমান হবে?’ লোকটি বলল, ‘না। তবে কথা দিচ্ছি, আপনার বিরুদ্ধে কখনও লড়াই করব না।’ নবীজি (সা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। এমনই ছিল নবীজি (সা.)-এর উত্তম চরিত্র। আল্লাহতায়ালা তার আদর্শকে মানবজীবনের প্রতীকরূপে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও পরকালকে চায়, তাদের জন্য রাসুলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা মুমতাহিনা : ৬)।