মোস্তফা চরিত : নির্ভুল সিরাত চর্চায় নির্ভরযোগ্য সংযোজন

নূর আহমাদ

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলা ভাষায় সিরাত চর্চায় মাওলানা আকরম খাঁর ‘মোস্তফা চরিত’ একটি বিশ্বমানের গ্রন্থ। ১৯৩২ সালে গ্রন্থটি প্রকাশের পর পাঠকমহলে বেশ হইচই পড়ে যায়। গ্রন্থটির পঞ্চম সংস্করণ বাজারে সহজলভ্য। প্রায় হাজার পৃষ্ঠার সিরাত গ্রন্থটির আদ্যোপান্তই ব্যতিক্রমী মেজাজে লেখা। বাংলা ভাষার সিরাত পাঠকদের সামনে নবীজীবনের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন আকরম খাঁ। মোস্তফা চরিতে প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠাজুড়ে সিরাত পাঠ সম্পর্কে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিয়ে একটি অভূতপূর্ব ভূমিকা লিখেছেন আকরম খাঁ। এ ভূমিকার উদ্দেশ্য খোলাসা করে আকরম খাঁ বলেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, নবীদের নবী, মুসলমানদের নয়নের মণি মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর সিরাত চর্চার দীর্ঘ ইতিহাসে একটি মারাত্মক ভুল হয়ে আসছে। ভুলটি হলো, সিরাত চর্চায় আমরা শুধু ঐতিহাসিক গ্রন্থ যেমন তাবারি, তাবাকাত, ইবনে হিশাম ও ওয়াকেদির লেখার ওপর নির্ভর করেছি। ঐতিহাসিক বর্ণনার সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, এগুলো হাদিসের মতো শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্ণয় করা হয়নি। ফলে সিরাত চর্চায় ঐতিহাসিকদের লেখা বিনা বিচারে গ্রহণ করা আমি নিরাপদ মনে করিনি।’

এখানে ভুল বোঝার সুযোগ নেই যে, আকরম খাঁ ইসলামের ইতিহাসকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বা অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন! আসলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়েছে পরের কথায়। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলোতে শুদ্ধ-ভুল সব ধরনের কথাই সংকলিত হয়েছে। মাওলানার এ কথা অবশ্য মহান ঐতিহাসিকদের আমনতদারিতা বা ইসলামের ইতিহাসের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না; বরং ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন রকম। তাদের লক্ষ্য ছিল, মাঠ পর্যায়ে যা পাব, তাণ্ডই নথিভুক্ত করব। পরবর্তী সময়ে যাচাই বাছাই করে কোনটি সত্য, কোনটি ভুল; তা নির্ণয় করা যাবে। একই চর্চা দেখা যায় হাদিসের ক্ষেত্রেও। মুহাদ্দিসরা প্রথমে হাদিস সংগ্রহ করেন। সেখানে ভালোমন্দ সব হাদিসই ঢুকে যায়। যখন হাদিসের নামে জালিয়াতি ব্যাপক আকারে বেড়ে যায়, তখন তারা হাদিসের সত্যতা নির্ণয়ে কঠোর মনোযোগী হন।’

মাওলানা আকরম খাঁ বলেন, ‘সিরাতের নির্ভরযোগ্য উৎস হলো কোরআন, তারপর হাদিস; তৃতীয় উৎস হলো ইতিহাস। দেখা গেছে, সিরাত চর্চায় কিছু কিছু ঐতিহাসিক বর্ণনা এমনভাবে ঢুকে গেছে, যার গ্রহণযোগ্যতা কোরআন-হাদিসের মতোই নিরেট সত্য হিসেবে মুসলানদের কাছে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়।’ এটাও কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, নবীজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন সব ঐতিহাসিক বর্ণনা ‘খাঁটি সত্য’র পোশাক পরে মুসলামানদের সামনে প্রতিদিন সকাল-বিকেল ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেগুলো কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। সিরাতের এসব বিষয় মাওলানা আকরম খাঁ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ ‘স্যাটানিক ভার্সেসে’র বিষয়টি বলা যায়। সংক্ষেপে ঘটনা হলো, নবুয়তের কয়েক বছরের মাথায় রাসুল (সা.)-এর ওপর যখন জুলুমণ্ডনির্যাতনের খ—গ নেমে আসে, তখন রাসুল (সা.) একদিন কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করতে গিয়ে সুরা নাজমের কয়েকটি আয়াতে মক্কার বড় দুই দেবতা লাত ও উজ্জার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বসেন। রাসুল (সা.)-এর উদ্দেশ্য ছিল, কাফেররা যেন এতে সন্তুষ্ট হয় এবং নির্যাতনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ইবনে ইসহাক, ইবনে সাআদ ও তাবারির মতো ইসলামের মৌলিক তিনটি ইতিহাস গ্রন্থসহ বহু তাফসিরে এ ঘটনাটি ‘জাল আয়াতসহ’ বিস্তারিত এসেছে। সৈয়দ আমীর আলী ও মাওলানা শিবলি নোমানির মতো বিদগ্ধ গবেষক আলেমরাও এ বিষয়ে খুব একটা প্রতিবাদ করেননি। মাওলানা আকরাম খাঁর ভাষায়, ‘সৈয়দ আমীর আলী ঘটনাটি মেনে নিলেন আর শিবলি নোমানি ঘটানার নানাবিধ ব্যাখ্যা দিয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা করলেন।’

একদল সিরাত গবেষক দেবদেবীর প্রশংসাসূচক আয়াতের ঘটনাকে সত্য মেনে নিয়ে এভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, ‘আসলে কথাগুলো নবীজি (সা.)-এর মুখ দিয়ে শয়তান বলিয়েছে। নাউজুবিল্লাহ।’ অথচ হাদিস এবং খোদ সুরা নাজমের আলোকেই ঘটনাটি জাল। এর বড় প্রমাণ হলো, সুরা নাজমেই মিথ্যা দেবদেবীদের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। আবার বোখারির বর্ণনায় প্রত্যক্ষদর্শী সাহাবিরা এ ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে স্যাটানিক ভর্সেস বা দেবদেবীর প্রশংসাসূচক কোনো আয়াতের উল্লেখ নেই। বোখারির হাদিস উল্লেখ করা ছাড়াও এ ঘটনাটি যে পুরোপুরি মিথ্যা, তা প্রমাণের জন্য পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসদের বিভিন্ন যুক্তিতর্ক তুলে ধরে মাওলানা বলেন, ‘মুহাদ্দিস ইবনে খুজাইমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ লিখে এর অসারতা প্রমাণ করেন।’

মাওলানা আকরম খাঁ দেখান, ঐতিহাসিকদের বর্ণনা নির্বিচারে গ্রহণ করার ফলে মুসলমানদের হৃদয়ে যেমন নবীজি (সা.) সম্পর্কে ভুল ধারণা গেঁথে গেছে, একইভাবে পাশ্চাত্যের নবীবিদ্বেষী গবেষকরা এসব বর্ণনা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে নবীচরিত্রকে কলুষিত করার সুযোগ পেয়েছে। যে কারণে সিরাত চর্চায় ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো কোরআন-হাদিসের কষ্টিপাথরে পুনরায় যাচাই-বাছাই করার মৌলিক কাজটির আঞ্জাম দিয়েছেন তিনি। মুখবন্ধে তিনি বলেন, ‘এ গ্রন্থ লিখতে কোরআন, তাফসির, হাদিস, উসুলে হাদিস, ইতিহাস সম্পর্কে দীর্ঘ অধ্যায় করতে হয়েছে আমাকে।’ এত মোটা বই পড়তে পাঠকের কষ্ট হবে সত্যি; কিন্তু যিনি লিখেছেন, তার পরিশ্রমের কথাও পাঠকের মাথায় থাকা দরকার। শুধু ঐতিহাসিক ঘটনার বিশ্লেষণই মোস্তফা চরিতের আসল বিশেষত্ব নয়; নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবে সহিহ সূত্রে বর্ণিত নবীজীবনের ঘটনাকে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস ও কোরআন-সুন্নাহর কষ্টিপাথরে যাচাই করাই ছিল মাওলানা আকরাম খাঁর যুগান্তরকারী কৃতিত্ব। এ ক্ষেত্রেও তার উদ্দেশ্য ছিল সহিহ হাদিসে বর্ণিত ভুল তথ্যের কারণে মুসলমানদের মনে নবীজীবনের ভুল শিক্ষা এবং বিধর্মীদের কলমে নবীজীবন নিয়ে উপহাসের দ্বার বন্ধ করা।

বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত নবীজীবনের ঘটনার ঐতিহাসিক ভিত্তি নিয়ে বেশ কিছু আলোচনার মধ্যে শিশু জীবনে নবীজি (সা.)-এর ‘শাক্কে সদর’ বা বুক ফেঁড়ে ওপেন হার্ট সার্জারির হাদিসটি সম্পর্কে মাওলানা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) যখন মা হালিমার ঘরে ছিলেন, তখন একদিন ফেরেশতা এসে শিশু নবীর বুক ফেঁড়ে অপারেশন করেন। সহিহ মুসলিমে আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর বুক ফেঁড়ে হার্ট বের করে বললেন, এই কালো রক্ত হলো শয়তানের অংশ। এরপর জমজমের পানি দিয়ে রাসুল (সা.)-এর হার্ট ধুয়ে পরিষ্কার করে তা প্রতিস্থাপন করলেন। একইভাবে বোখারি ও মুসলিমের বর্ণনা থেকে জানা যায়, মেরাজে যাওয়ার সময়ও জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর ওপেন হার্ট সার্জারি করে সেখানে ঈমান ঢুকিয়ে দেন।’

মাওলানা বলেন, ‘এসব বর্ণনা সহিহ সূত্রে বর্ণিত হলেও এগুলোর বাস্তবিক এবং ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। এসব আজগুবি ঘটনার কারণে ধর্ম সম্পর্কে তরুণরা আস্থা হারিয়ে ফেলে।’ রাসুল (সা.)-এর বুক ফাঁড়ার হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি ধরে নেওয়া হয়, রাসুল (সা.)-এর বুক ফেঁড়ে তার থেকে শয়তানি অংশ বের করা হয়েছে কিংবা তার ভেতর ঈমান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে এ কথা বিশ্বাস করতে হবে, রাসুল (সা.) জন্মগতভাবে নিষ্পাপ বা শয়তানি আসর থেকে মুক্ত ছিলেন না; বরং হৃদয়ে শয়তানি অংশ নিয়েই রাসুল (সা.) দুনিয়ায় আগমন করেন। একইভাবে মেরাজের রাতের আগ পর্যন্ত রাসুল (সা.)-এর হৃদয়ে ঈমান ছিল না বা থাকলেও তার কমতি ছিল। নাউজুবিল্লাহ।’

ওই হাদিসের অগ্রহণযোগ্যতার দলিল হিসেবে মাওলানা বলেন, ‘ইমাম মুসলিম (রহ.) নিজেই বলেন, আনাস (রা.)-এর পরবর্তী বর্ণনাকারী হাদিসগুলো আগের অংশ পরে আর পরের অংশ আগে যোগ করে ফেলেন। ফলে দেখা যায়, বুক ফাঁড়ার বর্ণনায় ব্যাপক গরমিল দেখা যায়। আনাস (রা.)-এর বর্ণনা থেকেই জানা যায়, বুক ফাঁড়ার বর্ণনা একবার শৈশবে, আবার মেরাজের সময় ঘটেছে। আবার দেখা যায়, মেরাজের সময় ফেরেশতারা স্বপ্নে রাসুল (সা.)-এর বুক ফেঁড়ে ঈমান ঢুকিয়ে দেন। একবার তিনি হাদিসটি নিজে বর্ণনা করেছেন, অন্যবার আবু যর (রা.) থেকে শুনেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এসব গরমিল বর্ণনায় কোনো সমাধান করতে না পেরে মুহাদ্দিসরা বলেন, রাসুল (সা.)-এর জীবনে শাক্কে সদর মোট চারবার ঘটে।’

এ হাদিস গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে মাওলানা বলেন, ‘এটি রাসুল (সা.)-এর কোনো উক্তি নয়; বরং আনাস (রা.)-এর উক্তি। তাই এটি হাদিসে রাসুল নয়।’ আর আনাস (রা.) নিজে এ ঘটনা দেখেননি; বরং তিনি ওই সময় জন্মগ্রহণই করেননি। রাসুল (সা.)-এর শৈশব ও মেরাজের ঘটনা ছিল মক্কায়, আর আনাস (রা.) জন্ম নিয়েছেন মদিনায়। রাসুল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন আনাস (রা.) ছিলেন ১০ বছরের শিশু। হাদিস থেকে জানা যায়, আনাস (রা.) এ ঘটনা আবু যর (রা.)-এর কাছ থেকে শুনছেন। আর আবু যর (রা.) শুনেছেন রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে। অথচ আবু যর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর বুক ফাঁড়ার ঘটনা ঘটেছে মেরাজের রাতে স্বপ্নে।’ সুতরাং শৈশবে যে বুক ফাঁড়ার ঘটনা আনাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তার সঙ্গে আবু যর (রা.)-এর বর্ণনার মিল পাওয়া যায় না। আবার আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি নিজে রাসুল (সা.)-এর বুকে সেলাইয়ের চিহ্ন দেখেছি।’ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই সেলাইয়ের চিহ্ন আর কোনো সাহাবি দেখেননি এবং বর্ণনাও করেননি; এটা কীভাবে সম্ভব! ফলে ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর কথা অনুযায়ী, এখানে আনাস (রা.)-এর কোনো ভুল হয়নি; বরং পরবর্তী বর্ণনাকারীরা গ-গোল পাকিয়ে ফেলেছেন।

বোখারি-মুসলিমসহ সহিহ হাদিস নিয়ে আপত্তি করাটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অন্য সহিহ হাদিস বা কোরআনের আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে এক বা একাধিক সহিহ হাদিস নিয়ে আপত্তি তোলা হাদিস বিজ্ঞানে খুব সাধারণ ঘটনা। যেমন মুসলিম শরিফের বর্ণনায় আছে, রাসুল (সা.) এক সাহাবিকে বলেছেন, ‘তোমার বাবা জাহান্নামি।’ এ কথা শুনে ওই সাহাবি ঘাবড়ে যান। তাকে সান্ত¡না দিতে গিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ঘাবড়িও না! আমার বাবাও জাহান্নামে আছেন।’ এটি সহিহ মুসলিমের হাদিস হওয়া সত্তেও মুহাদ্দিসরা এ হাদিসটি গ্রহণ করেননি। সমকালীন ইসলামি পণ্ডিত ড. ইউসুফ আল কারজাভি (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর পিতা ছিলেন জাহেলি যুগের একত্ববাদী ধর্মের অনুসারী। তা ছাড়া তার সময় রাসুল (সা.) নাজিল হননি। কোরআনে আল্লাহতায়ালা একাধিক আয়াতে বলেছেন, ‘রাসুল নাজিল না করে আমি কোনো সম্প্রদায়কে শাস্তি দিই না।’ তাহলে এ হাদিসটি সহি হলেও মানসুখ বা রহিত। ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.)-ও এ ব্যাপারে চারটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ লিখে রাসুল (সা.)-এর পিতামাতা জান্নাতি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করেছেন। বোখারির এক হাদিসে এসেছে, ইবরাহিম (আ.) তিনবার মিথ্যা বলেছেন। এ হাদিসের ব্যাপারে ইমাম রাজি (রহ.) তাফসিরে কাবিরে লেখেন, ইবরাহিম নবীকে মিথ্যাবাদী বলার চেয়ে হাদিসের কোনো বর্ণনাকারীকে মিথ্যাবাদী মনে করা বেশি নিরাপদ।

তবে মাওলানা আকরম খাঁ একটি বিষয় খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘বোখারি বা মুসলিমের কোনো হাদিস যদি পরস্পর বিপরীত হয় কিংবা প্রতিষ্ঠিত সত্যের বিপরীত হয়, তাহলে এ জন্য ইমাম বোখারি বা মুসলিমের আমনতদারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বোখারির কিতাবুল মাগাজিতে এসেছে, বদর যুদে খোবাইব (রা.) আমেরকে হত্যা করেছেন। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হলো, বদর যুদ্ধের অনেক আগেই খোবাইব (রা.) মারা যান। তার মানে হাদিসের তথ্য সঠিক নয়। তবে এটা মনে করা ভুল হবে, ইমাম বোখারি (রহ.) বিষয়টি জানতেন না। তিনি অবশ্যই জানতেন। তাহলে ভুল তথ্য লিখলেন কেন? এখানেই ইমাম বোখারি (রহ.)-এর আমানতদারিতার চরম পরিচয় ফুটে উঠেছে। তিনি সূত্র বা বর্ণনাকারীর কাছ থেকে যা যেভাবে শুনেছেন, তা সেভাবেই উল্লেখ করেছেন। নিজ থেকে বাড়াননি বা কমাননি। আমানতাদরিতার এমন অনন্য উদাহরণের কারণেই মুসলিম উম্মাহ তাকে মুহাদ্দিসদের মাথার মুকুট করে রেখেছেন।