সংসার ভাঙলে শয়তান খুশি হয়
* যে পরিবারে ধৈর্যের চর্চা থাকবে, সে পরিবারে শান্তি ও সুখের দেখা মিলবে। কারণ ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আল্লাহ থাকেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মাজিদুর রহমান
মানুষের আশা ও ভরসার আশ্রয়স্থল পরিবার। একটি পরিবার মানে ছোটখাটো একটি সমাজ বা রাষ্ট্র। পরিবারে কয়েকজন মানুষের একান্ত জীবন একসঙ্গে অতিবাহিত হয় বছরের পর বছর। তাই এখানে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে প্রয়োজন ছাড় দেওয়ার মানসিকতা, যা ধৈর্যচর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়।
দাম্পত্য জীবন নিয়ে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যেখানে ভালোবাসার সম্পর্ক নড়বড়ে হয় সেখানে ভুল বেশি খোঁজা হয়। ছোট ছোট বিষয়ে বিশাল মতপার্থক্য তৈরি হয়ে যায়। এজন্য শরিয়ত নির্দেশ দিয়েছে, সবুর ও ধৈর্যের। এর ফল মানুষ দুনিয়াতেও ভোগ করবে, পরকালেও লাভ করবে। সবার কর্তব্য, সাহস ও সহিষ্ণুতা দিয়ে পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করা। এটা কত দোষের কথা, স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে জড়ায়, যে স্ত্রী তার জন্য নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত! আর স্ত্রী-ই বা কীভাবে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে, অথচ স্বামীর কারণে তার বিশেষ মর্যাদা অর্জিত হয়। পরস্পরকে সহিষ্ণুতা দিয়ে বরণ করতে না পারা থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
ভুল বা দোষ সব মানুষেরই থাকে। তাই প্রথমে ভুল বা দোষ চিহ্নিত করে ধৈর্যের সঙ্গে অন্যকে বোঝানো যায়। কিন্তু স্বামী যদি ওঁতপেতে থাকে স্ত্রীর ভুলভ্রান্তি কীভাবে ধরা যায়, আর স্ত্রী যদি লেগে থাকে স্বামীকে কীভাবে ঘায়েল করা যায় তা হলে খুশি হয় শয়তান।
কারণ হাদিসে এসেছে, শয়তান খুশি হয় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারলে। অনেক সময় এই ঝগড়া তৃতীয় কোনো কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় হয়তো স্বামী-স্ত্রী নিজেদের কারণে ঝগড়ায় জড়ায় না, তৃতীয় কারও উসকানিতে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। এটাও ঘটে ধীরে-সুস্থে ঠান্ডা মাথায় ধৈর্যের সঙ্গে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে না পারায়।
পরিবারে স্ত্রীর কর্তব্য, স্বামীর পরিবারের সবাইকে খুশি রাখা আর স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর বাড়ির সবাইকে খুশি রাখা। যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনই এমন ত্যাগের মানসিকতা রাখে, সেখানে সচরাচর বিবাদ বা অসন্তোষ দেখা দেয় না। কখনও একজন রাগ হলে অন্যজনের উচিত হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে তা সামাল দেওয়া। একই সঙ্গে দুজন রাগ করলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ে।
যে পরিবারে ধৈর্যের চর্চা থাকবে, সে পরিবারে শান্তি ও সুখের দেখা মিলবে। কারণ ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আল্লাহ থাকেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা : ১৫৩)।
ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সফলতার সুসংবাদ। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আমরা তো আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)।
লেখক : ইসলামি গবেষক
