ঢাকা শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নিজের বা অন্যের ক্ষতি করা যাবে না

নিজের বা অন্যের ক্ষতি করা যাবে না

ইসলামের একটি মূলনীতি হলো, ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতে যেসব বিষয়ে কল্যাণ রয়েছে সেসব বিষয় সুনিশ্চিত করা এবং যেসব বিষয়ে দ্বীন ও দুনিয়ার অকল্যাণ রয়েছে, তা প্রতিহত করা। এ নীতির ফলে মানুষের সুখ-শান্তি, সফলতা ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা নেক কাজ এবং আল্লাহভীরুতা অর্জনে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। পক্ষান্তরে অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।’ (সুরা মায়েদা : ২)।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং মুসলিম জনসাধারণের উপকারী বিষয়গুলো (যেমনÑ রাস্তাঘাট, উদ্যান, বিনোদনকেন্দ্র ইত্যাদি) যা সামগ্রিকভাবে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য এবং উন্নয়নকল্পে সরকার নির্মাণ করেছে, সেগুলোর প্রতি আন্তরিক হতে হবে। মুসলিম জনসাধারণের জনকল্যাণমূলক কাজে ইসলাম উৎসাহ দিয়ে থাকে। যা তাদের ক্ষতি এবং অনিষ্ট বয়ে আনে, তা প্রতিহত করতে উদ্বুদ্ধ করে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা সৎকাজ করো, যেন সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা হজ : ৭৭)।

রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। সে দুনিয়াতে কোনো একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছিল।’ (মুসলিম : ৮৫৭)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘এক লোক রাস্তা থেকে কাঁটাযুক্ত একটি ডাল (যা মানুষের ক্ষতি করছিল) সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার একাজ অনেক পছন্দ করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ (বোখারি : ৫৫২ ও মুসলিম : ১৯১৪)। অতি সাধারণ এ একটি আমলের কারণে আল্লাহতায়ালা তাকে অনেক বড় প্রতিদান দিয়েছেন।

জনগণের অকল্যাণ অথবা অনিষ্ট হয়, এমন জিনিসকে রাস্তা-ঘাট থেকে অপসারণ করা সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত। যা আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)। এমন পন্থা অবলম্বন করে কাজ করা মূলত ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। যেমন রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বিষয় হলো, এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আর সর্বনিম্ন বিষয় হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। (মুসলিম : ৩৫)।

জনগণের কল্যাণার্থে রাস্তা থেকে সব কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা সদকায়ে জারিয়া। যা ব্যক্তি মূলত তার নিজের মঙ্গলের জন্য করে থাকে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘রাস্তা থেকে ক্ষতিকর বস্তু সরিয়ে ফেলাও একটি সদকার কাজ।’ (মুসলিম : ৩৫)। রাসুল (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের সব ভালো এবং মন্দ কাজগুলো আমার সামনে উপস্থাপন করা হলো এবং তাতে আমি সব উত্তম কাজের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও দেখতে পেলাম।’ (মুসলিম : ৫৫৩)। কাজেই ছোট এ আমল করে অনেক নেকি অর্জন করার সুযোগ রয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারি।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘রাস্তা থেকে মানুষের জন্য কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করো।’ ছোট এ আমল করে দ্রুত জান্নাত লাভের সুযোগ কাজে লাগানো যায়। শরিয়তের এ উদ্ধৃতি মানুষের জন্য সব ক্ষতিকর বস্তু দূরীকরণকেই শামিল করে। তাই আমাদের উচিত, পূর্ণ সহযোগিতা করা এবং মানুষের জন্য সব ক্ষতিকর জিনিস অপসারণ করা; পাশাপাশি সার্বিক মঙ্গলের জন্য কাজ করা।

ইমাম আহমাদ তার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রাস্তা থেকে এমন বস্তু অপসারণ করবে, যা সাধারণ মানুষের চলাচলকে বিঘœ ঘটায়, তার জন্য আল্লাহ নেকি দান করেন। আর যার জন্য আল্লাহ নেকি লিপিবদ্ধ করেন, তাকে আল্লাহ জান্নাত নসিব করেন।’ (তাবারানি : ১/১৪)। মুসলিমদের মধ্যে যেকোনো ধরনের অনিষ্টকর এবং দুর্ঘটনা ঘটানো সম্পূর্ণ হারাম। এরশাদ হচ্ছে, ‘যারা মোমিন নর-নারীকে কষ্ট দেয়, যা তারা করেনি, তার জন্য নিশ্চয়ই তারা অপবাদ এবং স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করল।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)। তাছাড়া রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাকে রাসুল (সা.) রাস্তার হকগুলো থেকে অন্যতম একটি হক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

শরিয়তের অনেকগুলো মূলনীতির মধ্য থেকে একটি মূলনীতি হলো, নিজের বা অন্যের ক্ষতি কোনোটাই করা যাবে না। এটি রাসুল (সা.)-এর মুখনিসৃত অন্যতম একটি মূলনীতি। এর মাধ্যমে জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট স্থানগুলো যথাক্রমে রাস্তা, মাঠ-ঘাট এবং পাবলিকপ্লেসে অনিষ্ট সাধন কিংবা দুর্ঘটনা ঘটা থেকে প্রতিহত করে। গাড়ি ড্রাইভকালীন সময়ে এমনভাবে ড্রাইভ করতে হবে, যেন নিজের এবং অন্য কারও ক্ষতির কারণ না হয়। পাশাপাশি জনগণের কল্যাণের স্বার্থে তৈরিকৃত সরকার কর্তৃক আইন-কানুন তথা আমাদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে তৈরিকৃত নিয়মকানুন মেনে চলা। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা নিজেদের স্বহস্তে অনিষ্টের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)।

সহানুভূতি ও নর্মতা প্রদর্শন করা চাই। বিপজ্জনক কর্মকা- (যার দ্বারা সব ধরনের অনিষ্ট কাজ সংগঠিত হয়) পরিহার করা কর্তব্য। উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি চালানোর সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করা। এ কারণে কতো ক্ষতি এবং মারাত্মক দুর্ঘটনাই না ঘটছে। ড্রাইভ আইন লঙ্ঘন করে বেখেয়ালি ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকা চাই। মনে রাখতে হবে, যে কাজে সহানুভূতি এবং নম্রতা থাকে, তার ফলাফল প্রশংসনীয় হয়। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নম্র আচরণ করা থেকে বঞ্চিত, সেসব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সুনানে আবি দাউদ)।

এগুলো পালনের মধ্যমেই সবার নিরাপত্তা অর্জন হতে পারে। কোনো কাজে তাড়াহুড়া করা যাবে না। কেননা, তা আক্ষেপের কারণ। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (মুসলিম)। চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা পবিত্র কোরআনের শিক্ষা। রাসুল (সা.) যখন হজরত আলী (রা.)-কে খয়বার পাঠালেন, তখন তাকে বললেন, ‘তুমি ধীরে-সুস্থে তাদের আঙিনায় প্রবেশ করো।’ (বোখারি)। কথা বা কাজ যা দ্বারা মুসলমানরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অথবা বিপদগ্রস্ত হতে পারে, তা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। রাসুল (সা.) এরশাদ, ‘তীর নিয়ে মসজিদ অথবা বাজারে এলে সে যেন তীরের ফলাগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। যাতে তা কোনো মুসলমানের গায়ে না লাগে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা লানতকারীর দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো।’ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কাজ দুটি কি হে আল্লাহর রাসুল (সা.)?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘মানুষের বিশ্রাম অথবা চলাফেরার রাস্তায় প্রস্রাব-পায়খানা করা।’ (মুসলিম)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের চলাচলের রাস্তায় তাদের কষ্ট দেয়, তার ওপর তাদের অভিশাপ অনিবার্য হয়ে পড়ে।’ (মুজাম তাবারানি)।

৩১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মদিনা শরিফে প্রদত্ত জুমার খুতবাটির অনুবাদ করেছেন আল মামুন নূর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত