এক ‘প্রধান’ কোচে ফিরছে বিসিবি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

২০২৩ সালটা বেশ ব্যস্ত সময়ই কাটবে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের। এ আবার হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে হেড কোচ শূন্য জাতীয় দল! ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষ করে পদত্যাগ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তার জায়গায় নতুন কোচ খোঁচার কাজ চলছে। তালিকায় বড় কিছু নামও আছে। আবার কোচিং নীতি নিয়েও আছে নানান কথা। ঠাসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এফটিপি প্রকাশের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, তারা ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন কোচ আনার কথা ভাবছেন। কারণ এতো বেশি খেলা যে, একজন হেড কোচের পক্ষে সব সিরিজে থাকা সম্ভব হবে না। কিন্তু বিসিবি এখনই কোচিং প্যানেলে ওই বিভক্তি চায় না। দলে একাধিক হেড কোচ নীতিও নিতে চায় না।

বিসিবি কর্তারা মনে করছেন, একজন হেড কোচ নিয়োগ দিয়ে তার একজন ডেপুটি কোচ রাখা যেতে পারে। যিনি হেড কোচের ছুটিতে দল সামলানোর দায়িত্ব পালন করবেন। কিংবা সিরিজের মাঝে যেকোন একটা ফরম্যাটে হেড কোচের ভূমিকা পালন করবেন। বোর্ড কর্তাদের মনে হয়েছে, সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপে শ্রীধরন শ্রীরাম হেড কোচের দায়িত্বে ভালো কাজ করলেও তা অতটা কার্যকর ছিল না। রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার হঠাৎ বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘প্রথমে আমাদের একজন হেড কোচ নিয়োগ দিতে হবে। এরপর তার সঙ্গে পরিকল্পনা নিয়ে আলাপে বসতে হবে। তার দাবি-দাওয়া শুনতে হবে। কোচেও নানান পরিকল্পনা থাকতে পারে। হেড কোচের সঙ্গে আলাপ করেই আমরা সবকিছু চূড়ান্ত করতে চাই।’

চলতি বিপিএলের পরেই বাংলাদেশের ইংল্যান্ড সিরিজ। বিসিবি সিইও জানান, ওই সিরিজের আগে তারা হেড কোচ ও কোচিং প্যানেল চূড়ান্ত করে ফেলতে চান। বিপিএল চলাকালে বাংলাদেশে এসেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দায়িত্ব পালন করা শ্রীধরন শ্রীরাম। তাকে টি টোয়েন্টি দলের স্থায়ী হেড কোচ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে তাকে নিয়োগ দিলে সহকারী কোচ করা হতে পারে। শ্রীরামকে নিয়ে বিসিবির এক কর্মকর্তা ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ক্রিকবাজকে বলেছেন, ‘শ্রীরামকে দ্বিতীয় হেড কোচ করা হবে বিষয়টা এমন নয়। আমরা একজন হেড কোচ নিয়োগ দিতে চাই। যেহেতু সামনে অনেক খেলা। সেজন্য তার ডেপুটি রাখতে চাই একজনকে। যিনি কোন না কোন পর্যায়ে দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।’

বাংলাদেশ দলের পরবর্তী হেড কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক কোচ শ্রীলঙ্কার চান্ডিকা হাথুরুসিংহে। এছাড়া মাইক হাসি, মোহাম্মদ কাইফ, রবিন সিং, ল্যান্স ক্লুজনাররা আছেন আলোচনায়। এর বাইরে বিসিবি হেড অব প্রোগ্রাম (ডিরেক্টর অব কোচিং) পদ সৃষ্টির কথা ভাবছে। ওই তালিকায় অভিজ্ঞ টম মুডি এবং রিচার্ড পাইবাসের নাম আছে। বিসিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ধরুন, জাতীয় দলের একজন বাঁ-হাতি স্পিনার দরকার। হেড কোচের পক্ষে ঠাসা সূচির ফাঁকে এইচপি প্রোগ্রাম বা বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রামে চোখ রেখে সেখান থেকে একজনকে খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য। ওই কাজটা করবেন হেড অব প্রোগ্রাম। কারণ জাতীয় দলের পাইপলাইন সম্পর্কে তিনি অবগত থাকবেন।’ দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। মাঠ ও মাঠের বাইরেও বিতর্কিত হয়ে পড়ছে বিপিএল। ডিআরএস না থাকায় টুর্নামেন্টের আগেই মুখ খুলেছেন মাশরাফী-সাকিব। খেলা মাঠে গড়ানোর পর বিসিবির নিজস্ব উদ্ভাবন এডিআরএস বাড়াচ্ছে সংশয়। ভুল-ত্রুটি সামলে সফলভাবে বিপিএল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিসিবি নাকি বদ্ধপরিকর।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে হঠাৎ সভায় বসার উদ্দেশ্য, বিপিএলে শৃঙ্খলা ফেরানো। বিপিএলে মাঠে খেলোয়াড়দের বারবার অশোভন আচরণ, আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারিদের ভূমিকা এবং টেলিভিশন ও অনলাইন সম্প্রচারে অবৈধভাবে বেটিং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে। যেসব কারণে বিপিএল বিতর্কিত হচ্ছে, আলোচনা হয়েছে সে রকম বিষয় নিয়ে, সমাধানের পথও খোঁজা হয়েছে। এসব বিষয়ে শিগগিরই অনুষ্ঠেয় বোর্ড সভায় কিছু সিদ্ধান্তও নিতে পারে বিসিবি। তবে ফিক্সিং ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা নাকি হয়নি।

বিপিএলে আরেক বিতর্ক দেখা দিয়েছে সম্প্রচার নিয়ে। দেশে-বিদেশে টেলিভিশন ও অনলাইনে বিপিএলের খেলা চলাকালে বেটিং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে, যাতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি। অথচ বিপিএলের টেলিভিশন সম্প্রচারস্বত্ব বিক্রির শর্তেই উল্লেখ আছে, এর সঙ্গে কোনো বেটিং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জড়িত হতে পারবে না, যা দেশের আইনেরও পরিপন্থী। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে বলা হয়েছে সম্প্রচার স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে বিপিএলের ম্যাচ সম্প্রচারে সব ধরনের বেটিংয়ের বিজ্ঞাপন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে। এ ব্যাপারে বরাবরের মতোই ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান রাখতে চায় বিসিবি।