আজ জ্বলে উঠবেন কে?
আরেকটি হোয়াইটওয়াশ নাকি প্রথম জয়
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিউজিল্যান্ড সফর বরাবরই বিষাদময় হয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। ২০০৭ থেকে তাসমান সাগর পাড়ের দেশে সফরে গিয়ে শুধু হারই সঙ্গী বাংলাদেশের। ব্যতিক্রম শুধু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মাউন্ট মাঙ্গানুয়ে একমাত্র টেস্ট জয়ের স্মৃতি।
তবে রঙিন পোশাকে জয় এখনও অধরা। যথারীতি এবারও টানা দুই ওয়ানডে হেরেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের টানা ওয়ানডে হারের বিব্রতকর রেকর্ড বেড়ে হয়েছে এখন হয়েছে ১৮। কিউইদের মাঠে আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ হেরে বসে আছে বাংলাদেশ। এবারো হারের বড় কারণ ব্যাটারদের জ্বলে উঠতে না পারা। শুরুতে উইকেট হারিয়ে দুই ম্যাচেই ব্যাটিং ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।
দলীয় বাজে পারফরম্যান্সের মাঝে নিষ্প্রভ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটও। তবে নিজের রান না পাওয়া নিয়ে তিনি এতটা চিন্তিত নন। আজ ভোরে নেপিয়ারে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সিরিজ হার আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচ থেকে সান্তনা পাওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশ। জিততে পারলে নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথম ওয়ানডে জেতার ইতিহাস হবে, এড়ানো যাবে হোয়াইটওয়াশ। গতকাল শুক্রবার নেপিয়ারে অনুশীলনে নামার আগে শান্ত জানান স্রেফ নেতিবাচক দিক না দেখে ইতিবাচক দিকে চোখ তাদের, ‘আমার মনে হয় পরের ম্যাচ জেতার জন্য খেলব। আমরা শুরুতে একটা লক্ষ্য ঠিক করে এসেছিলাম, যেটা হয়নি। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির কারণে কিছুটা আনলাকি ছিলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে সৌম্য দারুণ এক ইনিংস খেলেছে, রিশাদ ভালো বল করেছে। এখানেও ইতিবাচক অনেক কিছু ছিল। শুধু নেতিবাচক না দেখেই এই বছর আমরা কোন কোন বিভাগে ভালো করলাম এই জিনিসগুলো দেখার দরকার আছে। রিশাদের বোলিং স্পেল দারুণ ছিল, সৌম্যের কামব্যাক অসাধারণ ছিলো। শরিফুলের নতুন বলের বোলিং ভালো ছিল। দল হিসেবে খেলতে পারলে ম্যাচ জেতা সম্ভব।’ নেলসনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল ওপেনার সৌম্যের ফিরে আসা। অনেকদিন ধরে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা ব্যাটার খেলেন ১৫১ বলে ১৬৯ রানের ইনিংস। এশিয়ান কোন ব্যাটারের কিউইদের মাঠে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এটাই। সৌম্যের একার ঝলকে বাংলাদেশ করে ২৯১। নিউজিল্যান্ডের মাঠে ওয়ানডেতে এর আগে এত রান করেনি বাংলাদেশের কোনো দল। কিন্তু দল হিসেবে জ্বলে উঠতে না পারায় জয় ধরা দেয়নি। শান্ত ঘাটতি দেখছেন এখানে। শেষ ম্যাচে তাই দল হিসেবে জ্বলে উঠে অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়াতে চান তারা, কিউইদের মাঠে পেতে চান প্রথম জয়, ‘এই দলটা আগের দলের থেকে একটু নতুন। সেই তুলনায় বেশ কিছু ভালো জিনিস ছিল। ব্যক্তিগত দু’একটা পারফরম্যান্স হচ্ছে; কিন্তু দল হিসেবে আমাদের পারফরম্যান্স আসে নাই। যেমন ধরেন সৌম্য একা ইনিংস ক্যারি করল, শুরুর দিকে ওরকম কেউ রান করেনি। এই ধরনের কন্ডিশনে বড় জুটি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই কাল করার চেষ্টা করব। আর যেটা বললেন হোয়াইট ওয়াশের সামনে, দোয়া করেন যেন সেটা না হয়।’
দলের অধিনায়ক শান্তকে গুরুত্বপূর্ণ টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। এই সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে শান্ত আউট হন ১৫ ও ৬ করে। প্রথম ম্যাচে ১৫ রান করে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় হন বোল্ড। পরের ম্যাচে থিতু হওয়ার আগে বাউন্সের হেরফের টের না পেয়ে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। এ সিরিজের বাংলাদেশ অধিনায়ক মনে করছেন কন্ডিশনের অনভ্যস্ততা নয়, তার পরিকল্পনায় কিছুটা ঘাটতি ছিল, ‘এই কন্ডিশনে এর আগেও খেলেছি। পরিকল্পনা আরেকটু ভালো হতে পারত। আমার ব্যাটিং যদি বলি। কিন্তু দুটো ইনিংস গিয়েছে এটা নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। কারণ ব্যাটার হিসেবে প্রতিদিন রান করব এমন না, তবে যেদিন রান করব সেদিন যেন ইম্পেক্টফুল হয়।’ এই দুই ইনিংসের আগে বিশ্বকাপে শেষ দুই ম্যাচে ৪৫ ও ৯০ আছে তার। তার আগে ছয় ইনিংসে শান্ত আউট হন দুই অঙ্কে যাওয়ার আগে। সর্বশেষ দশ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে এক ফিফটি, আরেকটি ৪৫। বাকি সবই বিশের নিচে। নিউজিল্যান্ডে প্রথম ম্যাচে শরিফুল ইসলামের ভালো বোলিং ছাড়া গোটা ম্যাচ ছিলো হতাশার। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৫১ বলে ১৬৯ রানের রেকর্ডময় ইনিংসে আলো ছড়ান সৌম্য সরকার। অভিষিক্ত রিশাদ হোসেন জুতসই বল করে। শান্ত মনে করে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স এলেও দল হিসেবে তারা কিছু করতে পারছেন না। হোয়াটওয়াশ এড়ানোর মিশনে দল হিসেবে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা, সেজন্য টপ অর্ডারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, ‘এই কন্ডিশনে অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং টপ অর্ডার ব্যাটারের জন্য এটা মানতেই হবে। চ্যালেঞ্জ আমরা কীভাবে নেই সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা টপ অর্ডারে ব্যাট করি এটা নিয়ে কাজ করছি।
এখন থেকে বের হওয়ার উপায় আসলে যার যার ইন্ডিভিজ্যাল জায়গা থেকে বের করতে হবে। সবাই প্রস্তুতি নিয়ে সেটা করে দেখাবে।’ এদিকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এফটিপিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আর কোনো সিরিজ না থাকায় তৃতীয় ওয়ানডেই হবে কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারের বৃত্ত ভাঙার শেষ সুযোগ। সেটি করতে পারলে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর পাশাপাশি টানা পঞ্চম হারের লজ্জা থেকে রক্ষা পাবে টাইগাররা। ওয়ানডের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড।
