শান্তদের দীর্ঘ সময় ব্যাটিংয়ে দেখতে চান হাথুরু

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

পাকিস্তানে পাওয়া ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ে ফুরফুরে ছিল গোটা বাংলাদেশ দল। সেই অনুপ্রেরনা নিয়েই ভারত সফরে গিয়েছে টাইগাররা। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের ভারত সফরে লাল সবুজের সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল বেশি। তবে ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য এক প্রতিপক্ষ ভারত। তাই স্বভাবতই চেন্নাইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচ হেরেছে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে। চেন্নাই টেস্ট এখন অতীত। নজর সামনের দিকে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে কানপুরে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। সিরিজ হার এড়াতে বাংলাদেশের কাছে জয়ের বিকল্প নেই। সেই প্রত্যাশা নিয়ে গতকাল বুধবার কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেছে সফরকারীরা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অনুশীলন শুরু হয়ে শেষ হয় সাড়ে ১২টার দিকে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং অনুশীলনে নিজেদের ঝালিয়ে নেয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন হাথুরুসিংহে, চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে ওঠে প্রশ্ন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য সফল এক সিরিজে বাংলাদেশ সব বিভাগেই লেটার মার্ক পেয়েছিল। বোলিং ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে রোগ সেরে গেছে। এক সিরিজ পরই ভুল ভেঙেছে। ভারতের বিপক্ষে আবারো পুরোনো রোগ দুশ্চিন্তা হয়ে সামনে এসেছে। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ব্যাটিং ভরাডুবিতে সহজেই হেরেছে বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৯ রানে অলআউট হয় দল। ২৩৪ রানের দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইয়ের আভাষ থাকলেও ব্যাটাররা ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। কানপুরে দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে এই ভাবনা। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত যে ক্রিকেটাররা ইনিংসের শুরু পাচ্ছে কিন্তা তা বড় করতে পারছে না। ওরা নিজেরাও এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। কারণ ওরা সবসময়ই ভালো করতে চায়। ব্যাটারদের সবারই সামর্থ্য আছে কিন্তু মাঠে ওরা তা দেখাতে পারছে না।’

চেন্নাইতে শুরুর চার ব্যাটারের সবাই ব্যর্থ ছিলেন। চার বাঁহাতির দুর্বলতা ভালোভাবেই ধরে ফেলেছিলেন ভারতীয় বোলাররা এমনটাও বলা হচ্ছে। দ্বিতীয় টেস্টে তাই দাবি উঠছে ব্যাটিংয়ে লেফট-রাইট কম্বিনেশন আনার। তাতে ভারত বোলারদের লাইন-লেন্থ-এ মানিয়ে নিতে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হচ্ছে। একাদশে পরিবর্তন বা আগের টেস্টের ব্যাটিং অর্ডারে কোনো পরিবর্তন আনা হবে কিনা তা নির্ভর করছে উইকেটের ওপর। হাথুরু বলেছেন, ‘এমনিতে ব্যাটারদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই।

বেশি বাঁহাতি হোক বা ডানহাতি এটাই আমাদের সেরা ব্যাটিং লাইন। তবে এখানে যদি কোন পরিবর্তন আনতে হয়, তা নির্ভর করবে পিচের ওপর। আমরা যেমন পিচ দেখেছি, ওরা দুটো পিচ তৈরি করছে। কোনটায় খেলা হবে তা নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা একাদশ ঠিক করবো।’ দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলা হলে স্পিন নির্ভর উইকেট তৈরি করে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা পেস নির্ভর উইকেট তৈরি করেছে। এর কারণ সামনেই নিউজল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই সিরিজে মোট ৮ টেস্ট খেলতে হবে রোহিত শর্মাদের। পেস নির্ভর উইকেট বানিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। হাথুরু এ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত নন। নিজেদেরকে কন্ডিশন অনুযায়ী তৈরি করার দিকেই নজর তার, ‘ভারত কেন পেস উইকেট বানিয়েছে তা আমরা জানি। ঘরের মাঠেও আমরাও বিপক্ষ অনুযায়ী নিজেদের শক্তি মতো উইকেট তৈরি করি। তো এটা নিয়ে আমরা বিস্মিত নই, আমাদের অনুপ্রাণিত থাকতে হবে অন্য ভাবে। কন্ডিশন থেকে এবং সবশেষ ম্যাচ থেকে আমরা কি শিখছি সেটা সামনে রাখতে হবে।’ প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে যায়। ৪০ রানে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো শুরু এলেও ধারবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। এটা নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছেন হাথুরুসিংহে, ‘ভালো শুরুর পর ওরা আউট হয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে আমরা একটু চিন্তিত। তারা ভালো করতে মুখিয়ে আছে। গত ম্যাচে আমাদের মেধা ও সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারিনি।’ টপ অর্ডারদের ব্যর্থতা নয় শুধু, থিতু হওয়ার পর আউট হওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন কোচ। প্রথম ইনিংসে সাকিব-লিটন দাস, দ্বিতীয় ইনিংসে জাকির হাসান-সাদমান ইসলামরা ভালো শুরু পেলেও কাজে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ‘ভালো শুরু পেলে ইনিংস বড় করতে হবে। এটাই দুশ্চিন্তার বিষয়। ক্রিকেটে কেউ ৩০ বল খেলে ফেললে উইকেটে থিতু হওয়া জরুরি। কীভাবে প্রতিরোধ গড়তে হবে ভারতের এই দল তা ভালো করেই জানে। তাই আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে ভালো ব্যাট করে যেতে হবে’-আরো যোগ করেন হাথুরুসিংহে। চেন্নাইয়ে হারের পর সাকিবের চোট-বিতর্ক নিয়ে বাংলাদেশ দলের নির্বাচক হান্নান সরকার জানিয়েছিলেন, ফিট হয়ে চেন্নাই টেস্ট খেলতে নামলেও বোলিংয়ের সময় আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন সাকিব। পরে ব্যাটিংয়ের সময় বলের আঘাতও পেয়েছেন। সাকিব এখন বাংলাদেশ দলের ফিজিও বায়েজেদুল ইসলামের পর্যবেক্ষণে আছেন। কানপুরে দলের অনুশীলনের পর সাকিবকে এই টেস্টে দলে রাখা না রাখা নিয়ে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট। সংবাদ সম্মেলনে তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, কানপুর টেস্টে সাকিবের খেলা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি না? হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘সাকিবকে নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। আমি ফিজিও কিংবা কারো কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শুনিনি।’ প্রথম টেস্টে সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে এরপর হাথুরু বলেন, ‘আমি তার পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ নই, গোটা দলের পারফরম্যান্স আরো ভালো হতে পারত। আমি নিশ্চিত সেও এটা জানে যে, আরো ভালো পারফর্ম করতে পারে। তার সামর্থ্য আমরা সবাই জানি। আমার মতে দ্বিতীয় ইনিংসে সে সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছে।’