কখনো জাতীয় দল, কখনো বয়সভিত্তিক দল, এভাবেই বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। লম্বা এই সময়ে কখনো তার বিরুদ্ধে কোনোা অভিযোগ উঠেনি। গত বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের চাকরি ছাড়েন তিনি। এবার সেই ছোটনের বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন সাবিনাদের প্রধান কোচ পিটার জেমস বাটলার। এই ব্রিটিশ কোচ এমন এক সময় বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন, যার ২৪ ঘণ্টা পর সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। আগামীকাল রোববার বাংলাদেশ সময় পৌনে দুইটায় কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালের ওঠার লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ ও ভুটান।
তার আগে গতকাল শনিবার কাঠমান্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টার মাঠে অনুশীলন শেষে বাংলাদেশের কোচ পিটার বাটলার বলেন, ‘এই দলের মেয়েদের কেউ (ভালো না খেলতে) প্ররোচিত করছে। টেকনিকালি টেকটিকালি আমরা ভালোই খেলছি ভারত ও নেপালের চেয়ে। এটা খুব বাজে ব্যাপার যখন বাইরের লোক বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই দলের সাবেক কোচ (গোলাম রব্বানী ছোটন) মেয়েদের বিরক্ত করে। তাদেরকে প্ররোচিত করে। এবং এরপর সেটার প্রতিক্রিয়া মেয়েদের কাছ থেকে পাই।’
এদিন দুপুরে অনুশীলনের জন্য বাটালের পেছন পেছন মাঠে প্রবেশ করেন সবাই। তবে তাদের মধ্যে ছিলেন না অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। কোচ জানিয়েছেন, সাবিনার জ্বর এসেছে। যার কারণে অনুশীলনে আসেননি। গুঞ্জন রয়েছে, আগের দিন সাবিনা অবশ্য বলেছিলেন, ‘আমি ম্যাচের আগের দিন (ভারতের বিপক্ষে) স্যারের (গোলাম রব্বানী) সঙ্গে কথা বলেছি। ১৪ বছরের একটি বন্ডিং রয়েছে উনার সঙ্গে। আমার মনে হয়, নিজেকে যতটা না জানি, এর চেয়েও বেশি উনি আমাকে জানেন।’ অভিযোগ রয়েছে সাবিনার এই কথাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে হয়তো।
তাই কাল সরাসরি মিডিয়ার কাছে সাবেক কোচের বিরুদ্ধে কথা বললেন পিটার। আর জ্বরের অযুহাতে অনুশীলনে আনলেন না সাবিনাকে। গত সাফে বাংলাদেশকে ৮-০ গোলে হারানোর ম্যাচে সাবিনা করেন হ্যাটট্রিক। একই দলের বিপক্ষে এবারের আসরে ম্যাচের আগে অধিনায়কের জ্বরের মাত্রা কেমন, কেনই বা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগের দিন তাকে অনুশীলনে আনেননি কোচ পিটার বাটলার, এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বাটলার যোগ করেন, ‘দেখুন আমি ইংল্যান্ড থেকে এখানে এসেছি। আমি বাংলাদেশের ফুটবলের ভালো চাই। কিন্তু কিছু লোক এদেশের ফুটবল ভালো হোক সেটা চায় না। তাদের ষড়যন্ত্র ফুটবলারদের মনোযোগ ও মানসিকতা বিপর্যস্ত করছে। এই দলে বাইরের কোনো ভুল মানুষ খারাপ বার্তা দিচ্ছে। এটা ঠিক না। এটা কোনো পেশাদারিত্ব হতে পারে না।’ অধিনায়ক সাবিনাকে ছাড়াই হয়তো ভুটানের একাদশ সাজাতে পারেন কোচ।
সেই আভাসও দিয়ে বাটলার, ‘সাবিনা পরের ম্যাচ মিস করতে পারে। তবে শুধু সে না যে কোনো ফুটবলারই মিস করতে পারে। আমার জায়গা থেকে বিষয়টা দেখব। আমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। আমার ‘এ’ ও ‘বি’ দুটি প্লান রয়েছে। সে (সাবিনা) না খেললে মুনকি আক্তার, মনিকা, সাগরিকা খেলবে। আমার হাতে বিকল্পও আছে।’
এদিকে বাটলারের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ ও অভিমান ঝড়ে পড়ল জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানীর কণ্ঠে। ঢাকা থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘উনার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এসব কথা বলছেন। উনার এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমি। আমার সঙ্গে এই দলের কোনো মেয়ের যোগাযোগ নেই। যাও সালাম বা দোয়া নেয়ার জন্য ফোন করতো আগে, এখন সেই ফোনও ধরব না।’