ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এক যুগ পর ঘরের মাঠে ভারতের হার

ইতিহাস গড়লো নিউজিল্যান্ড

ইতিহাস গড়লো নিউজিল্যান্ড

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ঘরের মাঠকে দুর্গই বানিয়ে ফেলেছিল ভারত। টানা একযুগ ধরে কোহলি-রোহিতদের দেশে টেস্ট সিরিজ জিততে পারছিল না কোনো দল। নিজেদের ডেরায় সর্বশেষ তারা সিরিজ হেরেছিল ২০১২ সালে। তাদের সেই রাজত্বে হানা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। যাদের ভারতের মাঠে টেস্ট সিরিজ জেতার কোন নজির ছিল না। দুই কঠিন সমীকরণই মিলে গেল। নিজ ভূমে পরাক্রমশালী সেই ভারতকেই এবার মাটিতে নামিয়ে আনলো কিউইরা। মিচেল স্যান্টনারের ঘূর্ণিতে ভারতকে গুঁড়িয়ে অবিস্মরণীয় জয় তুলে নিল সফরকারি ব্ল্যাক ক্যাপসরা। গতকাল শনিবার পুনেতে দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ড জিতেছে ১১৩ রানে। এর আগে বেঙ্গালুরু টেস্টেও ভারতকে হারিয়েছিলো তারা। ফলে এক ম্যাচ বাকি থাকতে তিন টেস্টের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে সফরকারীরা। ভারতের মাটিতে ত্রয়োদশ টেস্ট সিরিজে এসে জয়ের স্বাদ পেল কিউইরা। এর আগে এখানে দুটি সিরিজ ড্র করেছিল তাসমান সাগর পাড়ের দলটি। ঘরের মাঠে এক যুগ পর টেস্ট সিরিজ হারল ভারত। নিজ আঙিনায় তাদের সবশেষ সিরিজ হার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১২ সালে চার টেস্টের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে। এরপর থেকে ঘরের মাঠে টানা ১৮টি টেস্ট সিরিজ জিতেছিল উপমহাদেশের দলটি। কিউইদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের নায়ক মিচেল স্যান্টনার। পুনের টার্নিং উইকেটে তার বাঁহাতি স্পিনের ধ্রুপদি প্রদর্শনীতে দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ধসে পড়ে ভারত। প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানে ৭ উইকেট নেয়া স্যান্টনার দ্বিতীয়ভাগে নেন আরো ৬টি। এমন পারফরম্যান্সের পর ম্যাচ সেরা তিনি ছাড়া আর কে! ম্যাচে ১৫৭ রান খরচায় মোট ১৩ উইকেট নেন স্যান্টনার। টেস্টে নিউ জিল্যান্ড বোলারদের মধ্যে যা তৃতীয় সেরা। ১৫ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। ১৪ উইকেট আছে বাঁহাতি স্পিনার এজাজের। টেস্টের দুই ইনিংসেই অন্তত পাঁচটি করে উইকেট নেয়া নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় স্পিনার স্যান্টনার। এর আগে দুই দফায় এই কীর্তি গড়েছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। দিনের শুরুটা অবশ্য ভারতের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। ৫ উইকেটে ১৯৮ রান নিয়ে খেলতে নামা নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম ঘণ্টায়ই গুটিয়ে দেয় তারা। স্রেফ ২৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রানে থামে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস। টম ব্লান্ডেলকে (৩ চারে ৪১) বোল্ড করে ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট নেন জাদেজা। স্যান্টনার ও এজাজকেও দ্রুত বিদায় করেন তিনি। মাঝে রাভিচান্দ্রান অশ্বিনের শিকার টিম সাউদি। নিউ জিল্যান্ডের শেষ জুটি ভাঙে উইল ও’রোক রান আউট হলে। ২ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন গ্লেন ফিলিপস। প্রথম ইনিংসে আলো ছড়ানো স্যান্টনার এবার শুরুতেই উজ্জ্বল। তার বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে শর্ট লেগে ধরা পড়েন রোহিত শার্মা। ইয়াসাসভি জয়সওয়াল ও শুবমান গিলের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় ভারত। গিলকে ফিরিয়ে জমে যাওয়া ৬২ রানের জুটি ভাঙেন স্যান্টনারই। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। আর কোনো পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি পায়নি স্বাগতিকরা। ইনিংসে একমাত্র ফিফটি করা জয়সওয়ালের আগ্রাসন থামান স্যান্টনার। ৩ ছক্কা ও ৯ চারে ৬৫ বলে ৭৭ রান করেন ভারত ওপেনার। রান আউটে কাটা পড়ে শূন্য রান ড্রেসিং রুমে ফেরেন রিশাভ পান্ত। প্রথম ইনিংসে স্যান্টনারের ফুল টসে বোল্ড হওয়া ভিরাট কোহলি এবার এই স্পিনারের বলে হন এলবিডব্লিউ। দুই ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটিং গ্রেট করেন ১ ও ১৭ রান। সরফারাজ খানের স্টাম্প ভেঙে স্যান্টনার পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি ওয়াশিংটন সুন্দার ও অশ্বিন। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান জাদেজা। তাকে ফিরিয়েই জয়ের আনন্দে মাতে নিউ জিল্যান্ড। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু আগামী শুক্রবার, ওয়াংখেড়েতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত