ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই শুরু আজ

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই শুরু আজ

পাকিস্তানের মাঠে টেস্ট সিরিজ জয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের সমর্থকরা। কিন্তু সে স্বপ্ন ভাঙতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ভারতে নাকানি চুবানি খেয়ে শূন্যহাতে দেশে ফিরেছে নাজমুল হাসান শান্তর দল। তারপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য স্থির করেছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে সে লক্ষ্য পুরণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি হেরে এরই মধ্যে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। মাঠের ক্রিকেটে ন্যূনতম লড়াই করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ফলে সাত উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছে প্রোটিয়ারা। তাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জয় ছাড়া অন্যকিছু ভাবার সুযোগ নেই টাইগারদের সামনে। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আজ সকাল ১০টায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ।

প্রথম টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্তর দল হেরেছিল মূলত বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, প্রথম ইনিংসের জঘন্য ব্যাটিংয়ে। দ্বিতীয় টেস্টে একটি স্বস্তি অবশ্য চট্টগ্রামের উইকেট যে বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক! কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা তো ব্যাটিংটাই ঠিকমত করতে পারছে না। ভারত সফরে চরম ব্যর্থতার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও দিতে হয়েছে এর মাশুল। চট্টগ্রামে এসে তাই ব্যাটিং উন্নতির দিকেই যেন বাড়তি মনোযোগ। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা তো বটেই, ম্যাচের আগের দুই দিন প্রায় আধঘণ্টা করে নেট সেশন করেছেন তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, সৈয়দ খালেদ আহমেদের মতো লেজের ব্যাটসম্যানরাও। লম্বা সময় বোলিং শেষে নেটে ঢোকার আগে নাঈম বলেন, ৪০ মিনিট ব্যাটিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন কোচ। নিচের দিকের ব্যাটসম্যানরা কিছু রান করলে সেটি ‘বোনাস’ হিসেবেই যোগ হবে স্কোর বোর্ডে। মূল কাজটা করতে হবে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের। মিরপুরে বোলিং সহায়ক উইকেটে ব্যর্থতার পর চট্টগ্রামে অবশ্য কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাসরা। হালকা সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটে চিরায়ত ব্যাটিং সহায়ক আচরণই হয়তো দেখা যাবে দ্বিতীয় ম্যাচে। ঘাস অনেকটা ছেঁটে ফেললেও উৎপাটন করা হয়নি শেকড়। ম্যাচ চলাকালে তাই উইকেট খুব বেশি ভাঙার সম্ভাবনাও নেই।

যা বাড়তি সুবিধাই দিতে পারে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। চট্টগ্রামের মাঠ অবশ্য সবসময়ই থাকে ব্যাটিং সহায়ক। গত চার বছরে এই মাঠে পাঁচ টেস্টের ৯ ইনিংসের মধ্যে পাঁচটিতে তিনশ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। এই সময়ে দেশের মাঠে তিনবার চারশ ছোঁয়া স্কোরের দুটিই চট্টগ্রামে। গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দলে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা তাইজুল ইসলামও বাড়তি জোর দেন দল হিসেবে ব্যাটিংয়ে ভালো করার দিকে। ‘প্রত্যেকটা ম্যাচই একটা সুযোগ। আমার মনে হয়, এখনো একটা সুযোগ ব্যাটারদের সামনে আছে। সত্যি বলতে, আমাদের দল হিসেবে যে পারফরম্যান্স হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে একেকজন একেক ম্যাচে ভালো করছে।’ তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা যদি দুই-তিনটি জুটি গড়তে পারি, দুয়েকজন যদি ফিফটি বা সেঞ্চুরি করতে পারি; তাহলে হয়তো আমাদের স্কোরটা বড় হবে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করছে, মন থেকে (ভালো করতে) চাচ্ছে। কিন্তু হচ্ছে না। হয়তো এই ম্যাচে আমরা ভালো কিছু করব।’

ম্যাচের আগের দিন তাইজুল কেন সংবাদ সম্মেলনে, এই প্রশ্ন অবশ্য উঠতে পারে। চট্টগ্রাম টেস্টের পর অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাওয়ার কথা বোর্ডকে জানিয়েছেন শান্ত, এমন খবর এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। কোনো পক্ষ থেকেই যদিও এটা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে শান্তর সংবাদ সম্মেলনে না আসার সঙ্গে ওই গুঞ্জনের সংযোগ খোঁজাটা অস্বাভাবিক হবে না খুব একটা। মিরপুর টেস্টের আগে সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা নিয়ে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরেই ছিল বেশি উত্তেজনা। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে দলের অবস্থা ছাপিয়ে এখন তার অধিনায়কত্বই মূল আলোচনায়। এসব ছাপিয়ে সবার মনোযোগ ক্রিকেটে ফেরাতে পারে কেবল মাঠের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই।

সংবাদ সম্মেলনে কোচ বা অধিনায়ক না থাকায় একাদশের সমন্বয় বা দলের পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। মিরপুরে অভিষেক টেস্টে ফিফটি করা জাকের আলি ছিটকে গেছেন অনুশীলনে কনকাশনের কারণে। একটি পরিবর্তন তাই অবধারিতই। জাকের আলির জায়গায় দলে যোগ করা হয়েছে আরেক কিপার-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে। তবে একজন ব্যাটসম্যানই খেলানো হবে নাকি বোলার, সেই কৌতূহল থাকছে। জাকেরের পরিবর্তে কোনো বোলারকে নেয়া হলে সেটি হতে পারেন ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা। মিরপুরে ভালো বোলিং করতে না পারা নাঈম হাসানের জায়গায় হাসান মুরাদের টেস্ট অভিষেকের সম্ভাবনও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

দলীয় সমন্বয় যেমনই হোক, চট্টগ্রামে জয়টা জরুরি বাংলাদেশের জন্য। পাকিস্তানের মাঠ থেকে সিরিজ জিতে ফেরার পর ভারতে গিয়ে হতাশা; এরপর ঘরের মাঠেও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে অসহায় আত্মসমপর্ণে দল কোণঠাসা। এই মাঠে বাংলাদেশের ব্যাটিং পরিসংখ্যান আশা জাগানিয়া হলেও, সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা শঙ্কারও। সব মিলিয়ে ২৪ টেস্টে জয় মাত্র দুটি। সবশেষ ছয় ম্যাচে পরাজয় পাঁচটি, নেই কোনো জয়। তাই এই পরিসংখ্যান কিছুটা উন্নত করার চ্যালেঞ্জও জিততে হবে শান্ত, লিটনদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত