গেল কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের ফুটবলাঙ্গন। জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে পিটার বাটলারের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করায় বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন সিনিয়র খেলোয়াড়রা। তারা ঘোষণা দিয়ে অনুশীলন বর্জন করে চলেছেন। ১৮ জন খেলোয়াড় সম্প্রতি বাফুফেকে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছেন, বাটলার দায়িত্বে থাকলে অনুশীলন ক্যাম্পে অংশ নেয়া তো দূরে থাক, প্রয়োজনে তারা গণঅবসরে যাবেন। তাদের এই অনড় অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে ফুটবলারদের অনেককে। এক পর্যায়ে সেটি হত্যা ও ধর্ষণের হুমকির পর্যায় পর্যন্তও গড়িয়েছে। সাফজয়ী দলের অন্যতম খেলোয়াড় জাপানি বংশোদ্ভূত মাতসুশিমা সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে এক ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি। সুমাইয়া লিখেছেন, গত কয়েক দিনে অসংখ্যবার হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছেন। সুমাইয়ার এই স্ট্যাটাসের পর ক্রীড়াঙ্গনে ঝড় উঠেছে। অনেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সুমাইয়ার স্ট্যাটাসের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তীব্র নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে ফুটবলের অবিভাবক সংস্থাটি। এরপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে জানিয়েছে, হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা, ‘বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় মাতসুশিমা সুমাইয়াকে উদ্দেশ্য করে হুমকি ও হয়রানির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাফুফে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোনো ক্রীড়াবিদ তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নিগ্রহের সম্মুখীন হতে পারে না। বাফুফে তার খেলোয়াড়দের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তারই ধারাবাহিকতায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন জাতীয় নারী ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়া। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল থানায় জিডি করেন তিনি। জিডি করার সময় সুমাইয়ার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমি। জাপানে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা সুমাইয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ফুটবল খেলার জন্য আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে লড়াই করেছি, শুধু এই বিশ্বাসে যে, আমার দেশ আমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সত্যিই কেউ একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে না। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেটা সম্পর্কে আমার ও সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম সামর্থ্য আমার আছে। গত কয়েক দিন ধরে আমি অসংখ্যবার হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। (আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা) শব্দগুলো আমাকে এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে, যা আমি কল্পনাও করিনি।’ তিনি যোগ করেছেন, ‘আমি জানি না এই মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে আমি বলতে চাই যে, শুধু স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আর কাউকেই যেন এসবের মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।’
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে জাপানে জন্ম নেয়া সুমাইয়ার বাবা বাংলাদেশি এবং মা জাপানিজ। দুই বছর বয়সেই জাপান থেকে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন তিনি। শৈশব থেকেই ফুটবলকে ধ্যান-জ্ঞান করা সুমাইয়া ২০২৩ সাল থেকে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ।