অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব

তিমুর লেস্তের জালে বাংলাদেশের ৮ গোল

তৃষ্ণার হ্যাটট্রিক

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

দেশের ক্রীড়াঙ্গণে এই মুহূর্তে আলোচনায় নারী ফুটবল দল। একের পর এক সাফল্য বয়ে আনছে লাল সবুজের ফুটবল কন্যারা। গত মাসে মিয়ানমারে ইতিহাস গড়েছে আফঈদা খন্দকাররা।

প্রথমবার এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বের টিকিট নিশ্চিত করেছে তারা। তারপর ঘরের মাঠে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাইয়েও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক লাওসকে ৩-১ গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে আরও বড় ব্যাবধানে জিতেছে পিটার বাটলারের শিষ্যরা। তিমুর লেস্তেকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। হ্যাটট্রিক করেছেন তৃষ্ণা রানী। একটি করে গোল করেন সিনহা জাহান শিখা, শান্তি মার্ডি, নবীরণ খাতুন, মুনকি আক্তার ও মোসাম্মত সাগরিকা। কর্ণার থেকে কোন ফুটবলারের স্পর্শ ছাড়া সরাসরি গোল করতে পারলে তাকেই ‘অলিম্পিক গোল’ বলে। সেটাই করলেন বাংলাদেশের শান্তি মার্ডি। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিক করে আলোচনায় এসেছিলেন শান্তি। এএফসি’র আসরেও আলো ছড়াচ্ছেন এই ফুটবলার। গতকাল শুক্রবার ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর দিকে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে গড়ে ওঠা একাধিক ভালো আক্রমণ নষ্ট করেছেন ফরোয়ার্ডরা।

অষ্টম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। গোলমুখ থেকে নবীরন দরকারি টোকা দিতে ব্যর্থ হন। এরপরই পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিল তিমুর লেস্তে। এমিলি রুটকোভস্কির শট কোনোমতে হাত ছুঁইয়ে কর্নার করে দেন স্বর্ণা রানী মন্ডল। দুই মিনিট পর প্রতিপক্ষর আরেকটি আক্রমণে স্বর্ণা পরাস্ত হলেও, গোললাইন থেকে হেডে বল ক্লিয়ার করেন জয়নব বিবি রিতা। ২০তম মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে স্বপ্না রাণীর কর্ণারে শিখা হেডে বল জালে জড়ান (১-০)। ৩২ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গোলটি করেন শান্তি। ডান প্রান্ত থেকে তার নেওয়া কর্ণার কিক সরাসরি জালে জড়ায় (২-০)। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ও সতীর্থ ফরোয়ার্ড বক্সে লাফিয়ে উঠলেও কেউই স্পর্শ করতে পারেননি। গোলকিপার হালিনা মার্চিও বলের ফ্লাইট মিস করেন। বল সবাইকে ফাঁকি দিয়ে সাইড পোস্টের ভেতরে গেলে জালে প্রবেশ করে।

কখনো সাগরিকা, কখনো শান্তি মার্ডি। আবার কখনো তৃষ্ণা রানী। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড লাইনে দুর্দান্ত এক কম্বিনেশন। মিনিট তিনেক পরে একই প্রান্তে বাংলাদেশ আবার কর্ণার পেয়ে আরেকটি গোল করে। এবার গোলের যোগানদাতা শান্তি। তার নেয়া কর্ণারে বক্সের মধ্যে নবিরুন খাতুন হেড করে গোল করেন (৩-০)। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের চারটি গোলের তিনটিই কর্ণার থেকে। বাঁ প্রান্তে স্বপ্না আর ডান প্রান্তের কর্ণার কিকগুলো শান্তি নিয়েছেন। বাংলাদেশ এই পরিকল্পনায় তিন গোল আদায় করেছে। বিরতিতে যাওয়ার আগে সংঘবদ্ধ এক আক্রমণে তৃষ্ণা বক্সের মধ্যে এক প্লেসিংয়ে গোল করেন (৪-০)। বিরতি থেকে ফিরেই চেনা রুপে বাংলাদেশ। তিমুরের বিপদ সীমানায় এক জটলা থেকে গোল করেন তৃষ্ণা রানী (৫-০)। ৭৩ মিনিটে তিমুরলেস্তের গোলকিপার সামনে এগিয়ে আসেন। সেই সুযোগে ফাকা বার পেয়ে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে গোল করেন সাগরিকা (৬-০)। এরপরই দ্বিতীয়বারের মতো কুলিং ব্রেক দেওয়া হয়। ৮৩ মিনিটে বারের বাঁ প্রান্ত দিয়ে সাগরিকার কাছ থেকে বল পেয়ে বল জালে জড়ান তৃষ্ণা রানী (৭-০)। ম্যাচের অন্তিম সময়ে মুনকি আক্তারের গোলে ব্যবধান ৮-০ করে বাংলাদেশ। শেষে এই ব্যবধানে তিমুরলেস্তেকে বিধ্বস্ত করে মাঠ ছাড়ে আফঈদা খন্দকার বাহিনী।

গত মাসে মিয়ানমারে এশিয়ান বাছাইয়ে নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। লাওসে চলমান অনূর্ধ্ব ২০ এশিয়ান বাছাই উতরাতে পারলে ছোটরাও লিখবে ইতিহাস। ‘এইচ’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকতে পারলেই মূল পর্বের টিকিট কাটবে। দ্বিতীয় হলেও বেঁচে থাকবে আশা। আট গ্রুপের সেরা আট দলের সঙ্গে সেরা তিন গ্রুপ রানার্সআপ দলও পাবে আগামী বছর থাইল্যান্ডে মূল পর্বে খেলার সুযোগ।

পরপর দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট তুলে নিয়ে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ সেই সুযোগটা দারুণভাবে জিইয়ে রেখেছে। গ্রুপে বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে পূর্ব তিমুরকে হারিয়েছে ৯-০ গোলে। আগামীকাল রোববার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারলেও যেন গোল ব্যবধানে বাংলাদেশ অন্য গ্রুপের রানার্সআপ দলের চেয়ে খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে সেই চেষ্টাই করবে। কারণ গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশি তিন সেরা রানার্স আপ দলও আগামী বছর মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।