হেমিংয়ের ছোঁয়ায় দুর্নাম ঘুচবে শেরে বাংলার পিচের

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পিচের পাশে পেঁপে গাছ, পুঁইশাকের বাগান। এমন বিরল দৃশ্য সম্ববত বিশ্বের আর কোনো স্টেডিয়ামে খুঁজে পাওয়া যাবে না। হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এমন দৃশ্য দেখে অবাক! বিব্রত নতুন কিউরেটর। দুই বছরের জন্য বিসিবির টার্ফ ম্যানেজমেন্ট উইংয়ের প্রধান হিসেবে যোগ দেওয়া টনি হেমিং মিরপুরে এসেই আবিষ্কার করেন এটি। পিচের পাশে দেখেন পেঁপে গাছসহ সবজির চাষাবাদও। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটগুলো ঘুরে দেখার পর আউটারের পিচ দেখার সময় তার চোখ পড়ে পাশে থাকা একটি পুঁইশাকের বাগানে। প্রধান মাঠকর্মী রকির কাছে তিনি মজা করেই জানতে চান বিশ্বের অন্য কোনো স্টেডিয়ামে পিচের পাশে সবজির চাষ হয় কি না? এমন প্রশ্নের উত্তর ছিল না কারও কাছে।

তবে শাক যেটাই হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের পাশে এমন কিছু আছে তা আগে শোনা যায়নি কখনোই। এদিকে বিসিবির একাডেমি মাঠের পূর্ব পাশে শেষ দুইটি উইকেট একেবারে অকেজো। সেখানে পেপে, কলা গাছ মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। যা ভালোভাবে নেননি হেমিং। মিরপুর মাঠ নিয়ে হেমিংয়ের মূল্যায়ন অনেকটা এমন, ‘এখানে সবটাই পাল্টে ফেলতে হবে।’ তার সঙ্গে গত দুদিন যারা মাঠ ঘুরেছেন তাদেরকেই বলেছেন এমন কথা। তবে রাতারাতি তো পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়। এজন?্য বিসিবির কাছে সময় চেয়েছেন। মিরপুরে সামনে খেলা দিতেও মানা করেছেন। মাঠের মাটি, ঘাস, বীজ, যতটা পারছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। গ্রাউন্ডের পানি নিষ্কাষণে কোনো সমস্যা নেই। বৃষ্টি হলে পানি জমলেও দ্রুতই মাঠ খেলার উপযোগী করা যায়। যতটুকু জানা গেছে, হেমিং এখনই আউটফিল্ডের কাজ ধরবেন না। তার মূল চাওয়া, মিরপুরের ২২ গজে রান ফেরানো। অন্তত স্পোর্টিং উইকেটের ব্যবস্থা করা। এজন্য উইকেটে শুরুর সময়টা দিতে চান। গামিনি ডি সিলভা ২০১০ সাল থেকে মিরপুরের দায়িত্বে। বাংলাদেশের অনেক সাফল্যর জন?্য তার বানানো উইকেট প্রশংসিত হলেও সেসব আড়াল হয়ে গেছে ব?্যর্থতার স্তুপে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের জন?্য এই উইকেট বিশেষ কিছু কখনোই উপহার দিতে পারেননি। তাইতো সে-কালের সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস বলতে বাধ?্য হন, মিরপুরের উইকেটে লাগাতার খেললে ক্যারিয়ার আগেই শেষ হয়ে যেত।

গত রোববারের মতো গতকাল সোমবারও হেমিং ব?্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মিরপুরে। মূল মাঠ, একাডেমি মাঠ, আউটডোর মাঠ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করেছেন। মাঠ, আউটফিল্ড, মাঠের সীমানা পেরিয়ে দেয়াল পর্যন্ত যেসব খালি জায়গা পরে থাকে সেসব দেখেছেন। মাঠের পাশে থাকা পিচ কাভার, উইকেট কাভারগুলো সরিয়ে পানি ফেলেছেন। যেগুলোতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। হেমিংয়ের প্রোফাইল তার পক্ষে কথা বলছে। ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান পিচ কিউরেটরদের একজন এই হেমিং। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন টার্ফ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। তিনি একজন মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকও। তার কাজের অভিজ্ঞতা ব্যাপক ও বিস্তৃত। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি দীর্ঘদিন। পার্থের এখনকার মূল টেস্ট ভেন্যু অপ্টাস স্টেডিয়ামে তিনি ছিলেন অ্যারেনা ম্যানেজার। দুবাইয়ে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি ও দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি ছিলেন প্রধান কিউরেটর। ওমান ক্রিকেট একাডেমিতে ছিলেন আইসিসি পিচ পরামর্শক। আইসিসি ক্রিকেট একাডেমিতে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক প্রেজেন্টার ও এডুকেটর হিসেবেও। এমনকি ফুটবলের মাঠ নিয়েও কাজ করার অভিজ্ঞতা তার আছে সৌদি আরবের রিয়াদে কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়ামের অ্যারেনা ম্যানেজার হিসেবে।

বিশেষজ্ঞ এই কিউরেটরকে বিসিবি এবার হেড অব টার্ফ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মিরপুর মাঠ দিয়ে কাজ শুরু করা হেমিংয়ের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দেশের সব ক্রিকেট মাঠকে আরো সুন্দর করে তোলা। ২০২৪ সালে পূর্বাচলের স্টেডিয়ামে নতুন পিচ ও আউটফিল্ড তৈরির জন্য প্রথমবার বিসিবির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তিতে যোগ দিয়েছিলেন টনি হেমিং। তখন তার মাসিক বেতন ছিল ৬,০০০ ডলার। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এবার নতুন দায়িত্বে তার বেতন হবে মাসে ৮০০০ ডলার। বছরে বাংলাদেশি মুদ্রায় হেমিং বেতন পাবেন প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পাশাপাশি হুট করে চাকরি ছাড়তে পারবেন না তিনি। এজন্য বিসিবিকে জানাতে হবে দুই মাস আগে। বছরে ছুটি পাবেন ৩০ দিন। আকাশপথে ভ্রমণের জন্য পাবেন ৫ হাজার ডলার।