ফিফা প্রীতি ম্যাচ

নেপালের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু বাংলাদেশের ক্যাম্পে ১২ জন

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফিফা উইন্ডোতে নেপালের বিপক্ষে দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আগামী সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে ম্যাচ দু’টি হওয়ার কথা রয়েছে। ম্যাচ সামনে রেখে এরইমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি শুরু করেছে নেপাল। ৩০ জন ফুটবলার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোচ ম্যাট রসের অধীনে কাঠমান্ডুতে পুরোদমে অনুশীলন চলছে। কিন্তু বেকায়দায় রয়েছে বাংলাদেশ। অনুশীলনের জন্য সব খেলোয়াড়কে একসঙ্গে পাচ্ছেন না কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। লাল সবুজ দল দুই দিন আগে জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু করলেও গতকাল শুক্রবার মাঠে মাত্র ১২ জন নিয়ে অনুশীলন হয়েছে। বসুন্ধরা কিংস ১০ জন ফুটবলার ছাড়েনি। এরপরও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্পেনিশ কোচ। প্রথম অনুশীলনে খুব কম সংখ্যক খেলোয়াড়, তাই গণমাধ্যমকে ছবি-ভিডিও গ্রহণের সুযোগ না দিয়ে ক্লোজড ডোর সেশন করেছেন তিনি।

এ নিয়ে কিংস ও বাফুফের কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও মিডিয়ার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খানকেই এগিয়ে আসছে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের জন্য। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ (শুক্রবার) দুপুরের পর জানতে পারি বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড় ছাড়ছে না। এটা অবশ্যই কোচের জন্য কঠিন। এরপরও অনুশীলন চলছে।’ ১২-১৩ জন দিয়ে ফুটবলে অনুশীলন অসম্ভব।

বসুন্ধরা কিংস কবে নাগাদ খেলোয়াড় ছাড়বে সেই নিশ্চয়তাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে ম্যানেজারের কণ্ঠে তরুণ খেলোয়াড়দের ডাক পাওয়ার আভাস, ‘আমাদের ম্যানেজমেন্টকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশনা দেবেন। তরুণ কয়েকজনকে ডেকে অনুশীলন চলতে পারে।

বসুন্ধরা কিংস এখন খেলোয়াড় না ছাড়লেও সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে খেলার সময় ছাড়বে। এখন প্রাক মৌসুমের প্রস্তুতি ও ইনজুরির জন্য তারা অপরাগতা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে।’ ঢাকা আবাহনী অনূর্ধ্ব-২৩ ও জাতীয় দলের জন্য মোট ১০ জন খেলোয়াড় ছেড়েছে। অন্য ক্লাবগুলোও খেলোয়াড় ছেড়েছে দেশের স্বার্থে, সেখানে বসুন্ধরা কিংসের এমন আচরণ বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে গতকাল কিংসের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক বাফুফের সাধারণ সম্পাদককে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন। খেলোয়াড় না ছাড়ার পেছনে বসুন্ধরা কিংস উল্লেখ করেছে, ‘দীর্ঘদিন খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা, খেলোয়াড়দের ভবিষ্যত বিবেচনা ও ইনজুরি প্রবণতা কমানোর জন্য বাফুফের ২০২৫-২৬ ফুটবল মৌসুম সামনে রেখে আমাদের প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বিধায় আমাদের খেলোয়াড়দের ছাড়করণ সম্ভব হচ্ছে না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ চিঠিতে তারা ইনজুরি সংক্রান্ত রেফারেন্স হিসেবে গত বছর বিশ্বনাথ ঘোষের ঘটনা উল্লেখ করেছে। খেলোয়াড় ইনজুরি প্রবণতা কমিয়ে আনতে তারা খেলোয়াড় ছাড়ছে না এমনটাই চিঠিতে জানিয়েছে।

বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলারদের আজ জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এদিনই তারা বাফুফেকে চিঠি দিয়ে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি আবার জাতীয় দল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যানও। জাতীয় দলের ক্যাম্প ১৩ আগস্ট শুরু, এই সংক্রান্ত একটি চিঠিতে তারও স্বাক্ষর রয়েছে। এরপরও তার ক্লাব খেলোয়াড় না ছেড়ে ফেডারেশনকে সংকটে ফেলেছে। জাতীয় দল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে ইমরুল হাসান ১৩ আগস্ট জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু নিয়ে এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ৩০ জুলাই। অথচ দুই সপ্তাহ পর তার ক্লাবের খেলোয়াড়ই জাতীয় দলে ক্যাম্পে আসার অনুমতি পাচ্ছে না

১২ সেপ্টেম্বর থেকে ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম শুরু হবে। সেই মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নিতেই কিংস আপাতত খেলোয়াড় ছাড়তে চাইছে না। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী ফিফা উইন্ডোর ৭২ ঘণ্টা আগেই ক্লাব শুধু খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য, এর আগে নয়। আইনত বসুন্ধরা কিংসের অবস্থান ভুল নয়; কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং কিংসের সভাপতি সবকিছু অবহিত হওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে খেলোয়াড় না ছাড়ার এমন আচরণের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। খেলোয়াড় ছাড়ার বিষয়ে কিংসের দ্বিচারী আচরণও স্পষ্ট।

কিংস ছাড়াও ঢাকা আবাহনী ও অন্য ক্লাবের ফুটবলারও রয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। কিংসের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ জন ঢাকা আবাহনীর ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন। ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন আবাহনীর মিতুল মারমা, কাজেম, শাকিল, ইব্রাহিম ও পাপন। আবাহনী ও অন্য ক্লাবগুলো খেলোয়াড় ছাড়তে পারলে কিংস কেন পারছে না এখানেই প্রশ্ন আসছে। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয় দল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান হয়েও ক্লাবের স্বার্থ অগ্রাধিকার দিয়েছেন এটা স্পষ্টই। সেই ইমরুল হাসানই আবার বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান। আজকের ঘটনার পর লিগের ফিকশ্চার ও নানা বিষয়ে ইমরুল হাসানের ওপর আস্থার সংকট ফুটবলাঙ্গনে আরও বহুগুণে বাড়বে।

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল আরও দুই সপ্তাহ আগে থেকে অনুশীলন শুরু করে। নেপালের আটজন ফুটবলার এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবে ডাকে পেয়েছে। তারা ৯ সেপ্টেম্বর ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলে ঢাকা আসবে নাকি আগে আনা হবে এটা নির্ভর করছে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর ওপর। আগে আনলেও ফিফা উইন্ডোর সময় সেই ফুটবলারদের ছাড়তেই হবে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোকে। নেপালের ফুটবলারদের বাংলাদেশের লিগ বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে নেপালের সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক প্রঞ্জল অলি বলেন, ‘গত দুই বছর নেপালের লিগ হচ্ছে না। রুটি-রুজির জন্য ফুটবলাররা বিভিন্ন প্রাদেশিক পর্যায়ের ৭-৮ দিনের টুর্নামেন্ট খেলছেন। বাংলাদেশের প্রস্তাব তাদের কাছে ভালো বিবেচনায় হওয়ায় যোগ দিয়েছেন।’