এশিয়া কাপে দল গঠনের ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচক

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দীর্ঘদিন পর ফিরেছেন নুরুল হাসান সোহান ও সাইফ হাসানরা। আবার ১৫ জনের স্কোয়াডে জায়গা পাননি মেহেদী হাসান মিরাজ। সোহানকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই আলোচনা ছিল। কিন্তু সাইফ তেমন আলোচনায় ছিলেন না। অন্যদিকে মিরাজ তিন ফরম্যাটেই টানা খেলে যাচ্ছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে তার জায়গা দোদুল্যমান ছিল। এবার সেই জায়গাটাও হারালেন। কদিন ধরেই এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। অবশেষে দল নির্বাচনের ব্যাখ্যা নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হলেন- প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দীর্ঘ ৩০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে আলাদা করে প্রতিটি ক্রিকেটারকে নিয়ে কথা বলেন গাজী আশরাফ হোসেন। মিরাজ কেন বাদ সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘সাদা ও লাল বলে খেলার ইমপ্যাক্ট, আবেদন ভিন্ন। মানুষ খেলেও ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ আমাদের টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। পুরো বিশ্বই তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণে তাকে চেনে। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রভাব কিছুটা পড়ে। সেটা ব্যাটিংয়েও পড়ে। বোলিংয়েও বেশি পড়ে। তবুও সে এই ফরম্যাটটা খেলতে ভালোবাসে। পাশাপাশি সেও চিন্তা করে এই খেলার প্রভাব কতোটা। আমরা খোলামেলা কথা বলি এখন। দলের ক্রাইসিস হলে অবশ্যই তাকে খেলতে হবে। একাদশের চাহিদা এবং দলের সিরিয়াস ক্রাইসিসে যদি পড়ে যায় অবশ্যই তাকে আসতে হবে এবং খেলতে হবে।’ ‘এছাড়া, আমরাও কিছুটা স্বস্তিতে থাকি সে খেলতে থাকুক, বাকি দুই ফরম্যাট থেকে টি-টোয়েন্টিতে খেলতে আসা কঠিন কিছু না। ক্ষুরধার, মেধাসম্পন্ন খেলোয়াড়। যেকোনো মুহূর্তে অ্যাটাক করার মতো সক্ষমতা তিনি রাখেন। টানা তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং। শারীরিক অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার। একটা ফর্ম ধরে রাখা এবং তিন ফরম্যাটে অনেক কিছুর ব্যাপার থাকে এখানে। এসব কিছু বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। আমাদের ওই বিলাসিতা করার সুযোগ নেই যে, ফরম্যাট অনুযায়ী স্পেশাল ক্রিকেটারকে স্থির করে রাখতে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে আমরা ওই অবস্থানে যেতে পারবো।’ যোগ করেন তিনি।

পরে প্রধান নির্বাচক যদিও বলেছেন, এশিয়া কাপে যদি ১৭ জনের স্কোয়াড হতো, তাহলে দলে থাকতেন মিরাজ। তার জায়গায় আরেক স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানও এখন টি-টোয়েন্টিতে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।

২০২২ সালের নভেম্বরের পর প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেন সোহান। তাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশি। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করেন তিনি। যেখানে জাকের আলী রয়েছেন। আছেন তাওহীদ হৃদয়ও। সোহান একাদশে সুযোগ পাবেন কি না সেটাই বিরাট প্রশ্নের। যেই উত্তরটা গাজী আশরাফ হোসেন সরাসরি দিয়ে দিয়েছেন, ‘সোহানকে নিয়ে অনেক আলোচনা ছিল শ্রীলঙ্কা সফরের সময় টি-টোয়েন্টি দলে। আমরা তখন ভেবেছি দলের যে ফরমেশন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রথম একাদশে খেলার সম্ভাবনা খুব কম। খুব খুব কম। ওই সময় আমাদের কাছে যেটা মনে হয়েছে, সে যদি প্রস্তুতির জন্য গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে আমরা জানতাম সে এ দলের হয়ে ডারউইনে খেলতে যাবে। তো তারও একটা প্রস্তুতি হয়ে যায়। ১০ ম্যাচের মতো খেলা হয়ে যায় এশিয়া কাপের মতো প্ল্যাটফর্মে আসার আগে। সেজন্য আমরা বলেছিলাম তিনি আমাদের খুব কাছের নজরে আছে। আমরা হয়তো তাকে আন্তর্জাতিক লেভেলের এক্সপোজার দিতে পারিনি। কিন্তু পরেই যে ধাপ, তার সঙ্গে আরও অনেকে সুযোগ পেয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার, প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ, চ্যালেঞ্জ, পারফর্ম কীভাবে ভালো করবে। কেউ ভালো না করলে কী করলে পারফরম্যান্সটা আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিতে পারে।’ ‘ইনফ্যাক্ট, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের লাইক টু লাইক রিপ্লেসমেন্টের জায়গায় হিউজ চ্যালেঞ্জেস কিংবা পারফরমার নাই। আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং আস্থার যে জায়গাটা, তার এপ্রোচ অফ ক্রিকেট, প্যাটার্ন অব ক্রিকেট স্পেশালি পাঁচ ছয়ের জায়গায়, আমরা মনে করি একটা খুব ভালো চয়েজ, জাকের আলীর ব্যাকআপের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তাকে সেরা মনে করছি।’ ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় সাইফের। সেবার দুই ম্যাচ খেলে করেন ১ ও শূন্য। দুই বছর বিরতিতে এশিয়ান গেমসের টি-টোয়েন্টি দল দিয়ে এই সংস্করণে ফেরেন তিনি। এবার তার ঠিকানা এশিয়া কাপে। তাকে নিয়ে বড় আশা নির্বাচকের। ‘উপরের দিকে একটা ক্রুশাল শর্ট অব বোলার দরকার ছিল। এক ওভার-দুই ওভারের একটা পারপাস তিনি এড্রেস করতে পারবেন। নম্বর তিন-চার এবং যদি ওপেনার দরকার হয়, সে আলোকে সাইফের দিকে চোখ ছিল। এবার তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নম্বর চারে খেলার মতো ভালো ব্যাটসম্যান, একই সঙ্গে প্রয়োজনে তিনি উপরেও যদি কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ওপেন করার সক্ষমতা রাখেন। আমরা এরকম মাল্টিপল প্লেসে এড্রেস করার মতো প্লেয়ার খুঁজছি।’ ‘সাইফের ব্যাপারটা উপরে এবং মাঝখানে, তাওহীদ হৃদয়েরও যদি কোনো সমস্যা হয়, এই দুইটা জায়গাতেই কাভার করতে পারবেন। লিটন দাস আছেন, তিনিও যেকোনো সময় ওপেনিং করে দলের চাহিদা মেটাতে পারেন’- বলেছেন গাজী আশরাফ হোসেন।