ইংল্যান্ড দলে প্রথম মুসলিম ফুটবলার
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া ডেস্ক

ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলে অনেক মুসলিম খেলোয়াড়ই খেলেছেন। এখনও খেলে চলেছেন। কিন্তু ইংলিশ জাতীয় ফুটবল দলে কখনও মুসলিম ফুটবলার দেখা যায়নি। এবার সে আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে। ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলে প্রথমবার দেখা যাবে কোনো মুসলিম খেলোয়াড়কে। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আগামী ৬ ও ১০ সেপ্টেম্বর অ্যান্ডোরা ও সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। আসন্ন এই দুই ম্যাচের জন্য প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড দলে ডাক পেয়েছেন জেড স্পেন্স। একজন মুসলিম ফুটবলার হিসেবে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন তিনি। দলের হয়ে ম্যাচ খেলতে নামলেই ইংল্যান্ডের প্রথম প্র্যাকটিসিং মুসলিম ফুটবলার হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন টটেনহাম হটস্পারের এই ফুলব্যাক।
ইংল্যান্ড দলে প্রথমবার ডাক পেয়ে একইসঙ্গে গর্বিত ও বিস্মিত স্পেন্স। ২৫ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডার জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড কোচ থমাস টুখেলের সঙ্গে তিনি আগে কখনও কথা বলেননি। আর এ কারণে এমন ডাক পাওয়ার খবরে নিজেই অবাক হয়েছেন। এর পাশাপাশি তার কাছে আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, ইংল্যান্ডের সিনিয়র পুরুষ দলে প্রথম মুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে ইতিহাস তৈরি করার পথে তিনি। জেড স্পেন্সের জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। তবে তার মা কেনিয়ান, বাবা জ্যামাইকান। তার বড় বোন কার্লা-সিমোন স্পেন্স বেশ জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহ্যামের একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন এই ডিফেন্ডার। ২০১৮ সালে মিডলসব্রোর হয়ে তার পেশাদার ফুটবলে বিচরণ শুরু। উত্তর ইয়র্কশায়ারের ক্লাবটির হয়ে ওই বছর তার অভিষেক হলেও দলে লম্বা সময়ে জায়গা পাকা করতে পারেননি। ২০২১ সালে ধারে নটিংহ্যাম ফরেস্টে যোগ দেন স্পেন্স। সেখানে দ্বিতীয় স্তরে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নটিংহ্যামের প্রিমিয়ার লিগে উঠে উন্নীত হওয়ার পথে বড় ভূমিকা রাখেন। সেই মৌসুমের পারফরম্যান্সে বেশ কয়েকটি বড় ক্লাবের নজরে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে ২ কোটি পাউন্ডে তাকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে দলে নেয় টটেনহ্যাম হটস্পার। এই ডিফেন্ডার একই বছর ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলেও ডাক পান।
বদলি হিসেবে টুকটাক সুযোগ পেলেও টটেনহ্যামের স্কোয়াডে নিয়মিত জায়গা পাননি স্পেন্স। এর পরিবর্তে ফরাসি ক্লাব রেনে, ইংলিশ ক্লাব লিডস ইউনাইটেড ও স্পেনের ক্লাব জেনোয়ায় ধারে বিভিন্ন সময় খেলেছেন। অবশেষে গত বছরের আগস্টে টটেনহ্যামের হয়ে আবার মাঠে নামার সুযোগ পান। বদলি নেমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে প্রথম একাদশেও জায়গা করে নেন তিনি। টটেনহ্যামে নাম লেখানোর আড়াই বছরের বেশি সময় পর গত ডিসেম্বরে তিনি প্রথমবার শুরুর একাদশে ঠাঁই পান। তার ফর্ম আর দলের বেশ কয়েকজনের চোট মিলিয়ে একাদশে নিয়মিত সুযোগ পেতে থাকেন তিনি। পারফরম্যান্স ভালো থাকার স্বীকৃতিস্বরূপ গত ফেব্রুয়ারিতে মাস-সেরার স্বীকৃতিও পান। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম গোলের স্বাদ পান ওই মাসেই। পরে ইউরোপা লিগের ফাইনালে বদলি হিসেবে নেমে দলের শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন। সবমিলিয়ে স্পেন্সের এই যাত্রাটা বলা যায় রোলার কোস্টার রাইডের মতো ছিল। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর এখন ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। সেখান থেকে কতদূর যেতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে হার না মানা দৃঢ়তায় যেভাবে ক্যারিয়ারটা এগিয়ে নিয়েছেন, তাতে তাকে নিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারেন সমর্থকরা।
