আবেগঘন রাতে আলো ছড়ালেন মেসি

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

লিওনেল মেসি আর আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের এক অমলিন প্রতীক। বিশ্ব ফুটবলের রূপকথার চরিত্র। নিজ দেশের মাঠে শেষবারের মতো নেমেছিলেন সাদা-আকাশি জার্সি গায়ে। এ লক্ষ্যে বুয়েনস আইরেসের মোনুমেন্টাল স্টেডিয়াম যেন ভাসছিল আবেগে আর উদযাপনে। আর আবেগঘন রাতে আলো ছড়ালেন মেসি। জোড়া গোল করে দলকে ৩-০ ব্যবধানে জয় এনে দিলেন আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ তারকা। এ ম্যাচটি ছিল ঘরের মাঠে তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ৮০ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে সন্তানদের হাত ধরে মাঠে নামেন মেসি। গ্যালারির গর্জনে ভেসে যাচ্ছিল আকাশ, সমর্থকদের চোখেমুখে বিদায়ের আবেগ। ২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেশের মাটিতে মেসির প্রথম ম্যাচ ছিল এস্তাদিও মনুমেন্তালে। একই স্টেডিয়ামে খেললেন শেষ ম্যাচও। দেশের মাঠে শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামার সময় চোখের পানি আটকাতে কষ্টই হচ্ছিল মেসির। এএফএ প্রীতি ম্যাচ আয়োজন না করলে নিজের মাটিতে আর কখনো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা হবে না তার। ম্যাচ শেষে আবেগি মেসি বললেন, শেষটা করতে চেয়েছিলেন এভাবেই, ‘এখানে এভাবে শেষ করতে পারাটাই আমার সবসময় স্বপ্ন ছিল।

আমার জনগণের সাথে থাকতে পারা- বহু বছর ধরে আমি বার্সেলোনায় স্নেহ অনুভব করেছি, এখনও করিৃ আমার স্বপ্ন ছিল আমার দেশে, আমার জনগণের সাথে তা পাওয়ার।’ মেসি আরও যোগ করেন, ‘অনেক আবেগ, এটা জেনে যে এটা এখানে শেষ ম্যাচ। এই মাঠে আমি অনেক কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, ভালো আবার খুব একটা ভালো না, কিন্তু আমাদের ভক্তদের সামনে খেলা সবসময়ই আনন্দের। বিশেষ করে জয়ের পর। আমরা বহু বছর ধরে একের পর এক ম্যাচ উপভোগ করে আসছি। খুব খুশি।’ মেসিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে। উত্তরটাও দিলেন আগে যেভাবে দিয়েছেন একইভাবে, এখনও সিদ্ধান্ত নেননি তিনি, ‘আগেও বলেছি আরেকটি বিশ্বকাপ খেলার কথা ভাবতাম না। আমার বয়স এর সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ। তবে আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। আর তো ৯ মাস। আমি রোমাঞ্চিত আর অনুপ্রাণিত করছি নিজেকে। নিজের প্রতি সৎ থাকব আমি। যখন ফিট থাকি তখন উপভোগ করি। তবে ভালো অনুভব না করলে আমি যাব না (বিশ্বকাপে)। বিশ্বকাপ নিয়ে এখনও আসলে সিদ্ধান্ত নেইনি।’

ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা দলের জাতীয় সংগীতের সময় তিন সন্তানকে নিয়ে সতীর্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি। আর্জেন্টাইন গায়িকা ইউজেনি কুয়েভেদো জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় মেসি স্বাভাবিকই ছিলেন। কিক অফের আগে অবশ্য দেখা গেছে ছলছল চোখ। গ্যালারিতে ছিল মেসির পরিবার। স্ত্রী রোকুজ্জোকে দেখা গেল কয়েকবার। শুরুতে হাসিখুশি থাকলেও ম্যাচের শেষ দিকে মুখটা শুকনা ছিল তারও। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) আগামী জুনে বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘লা নাসিওন’। সেটা না হলে এই ম্যাচই হয়ে যাবে জাতীয় দলের জার্সিতে দেশের মাটিতে মেসির শেষ ম্যাচ!

৭৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১৭টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখতে পারে আর্জেন্টিনা। যেখানে ভেনেজুয়েলা নিতে পারে মাত্র পাঁচটি শট, এর কোনোটিই ছিল না লক্ষ্যে। মেসি গোল করেন ৩৯ ও ৮০ মিনিটে। মার্তিনেজের গোলটি ৭৬ মিনিটে। ৩৯ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেস মাঝমাঠ থেকে লম্বা পাস দেন হুলিয়ান আলভারেসকে। তিনি ভেনেজুয়েলার এক ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে নিজে শট না নিয়ে আলতো করে পাস দেন বক্সের মাঝে দাঁড়ানো মেসিকে। তার বাম পায়ের চিপ বাতাসে ভাসতে ভাসতে জড়ায় জালে। ৭৬ মিনিটে থ্রু পাস বাড়ান মেসি। বলের পেছনে ছুটে বাইলাইনের কাছ থেকে কাটব্যাক করেন গনসালেস আর ডাইভিং হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মার্তিনেস।