এশিয়া কাপের ট্রফি উন্মোচন
নতুন প্রজন্মের ভরসায় বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

এবারের এশিয়া কাপে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারী আট দলের অধিনায়করা। বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব, শ্রীলঙ্কার চারিথ আসালাঙ্কা, আফগানিস্তানের রশিদ খান, পাকিস্তানের সালমান আলি আগা, হংকংয়ের ইয়াসিম মোর্তাজা এবং নবাগত ওমানের অধিনায়ক যতিন্দর সিং। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এএসসি) প্রেসিডেন্ট মহসিন নকভীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ট্রফি উন্মোচনের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়করাও তাদের দলীয় প্রস্তুতি, প্রত্যাশা ও লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের সিরিজেগুলোতে আমরা ভালো করেছি, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। এশিয়া কাপে সবাইকে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে।’
এদিকে, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে (এএসসি) অনেক দিক থেকে সমালোচনা করা যায়; যেমন আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে একই ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ রাখা বা নেপালে ক্রিকেটের উত্থানের সুযোগ কাজে না লাগানো। তবে একটা জায়গায় তারা বরাবরই সফল টুর্নামেন্টকে ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ওয়ানডে সংস্করণের পর এশিয়া কাপ ফিরছে ২০২৫ সালে, তবে এবার টি২০ ফরম্যাটে, আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (ভারত ও শ্রীলঙ্কা) পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে। আনুষ্ঠানিক আয়োজক ভারত হলেও ভেন্যু আবারও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সেপ্টেম্বরের গরম আবহাওয়ার মাঝেই হবে টুর্নামেন্ট, অনেকটা কোভিড সময়ে আইপিএল ও টি২০ বিশ্বকাপের মতো। অন্য আসরগুলোর মতোই এবারও এশিয়া কাপের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। সেপ্টেম্বর ১৪ ও ২১ তারিখের দুই লড়াইয়ের টিকিটের দাম (শুরু ১৪০০ দিরহাম) সত্ত্বেও সব বিক্রি হয়ে গেছে। কর্পোরেট বক্সগুলোও ভরে গেছে, এমনকি যাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে বয়কটের ডাক দিয়েছিল তারাও এবার কিনেছে আসন। খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই সৌহার্দ্যপূর্ণ থেকেছে। শাহীন আফ্রিদির নবজাতক সন্তানের জন্য জাসপ্রিত বুমরাহকে উপহার দেওয়া কিংবা বাবর আজমের কোহলিকে সমর্থন জানানোর ঘটনাগুলো তার প্রমাণ। তবে সোশ্যাল মিডিয়া যুগে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব মাঠের বাইরেও পড়ছে। দেখা যাক দলগুলোর কার কী অবস্থা?
বাংলাদেশ : সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যুগ পেরিয়ে নতুন প্রজন্মের শক্তিনির্ভর ক্রিকেটে ভর করছে। তাদের ছক্কার ঝড় তোলার মানসিকতা এ টুর্নামেন্টে বড় পরীক্ষার মুখে। লিটন দাসের নেতৃত্বে দলটি তুলনামূলক নবীনদের দিয়ে গঠিত। অভিজ্ঞদের মধ্যে লিটন ছাড়া আছেন মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নুরুল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।
তবে তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেন, তানজিদ তামিম, শামীম হোসেন, তাওহিদ হৃদয় কিংবা জাকের আলিদের মতো তরুণদের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা বেশি। আসরে নামার আগে তারা এক মাস পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের নেতৃত্বে ছক্কা মারার অনুশীলন করেছেন। এখন দেখার বিষয় মাঠের লড়াইয়ে সেটি কতটা ফলপ্রসূ হয়।
ভারত: বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা নেই, দল নতুন করে গড়ছে। জানুয়ারিতে ইংল্যান্ড সিরিজের পর এটি বড় পরীক্ষা। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন দলটিতে শুবমান গিল, রিংকু সিং, তিলক ভার্মা, সঞ্জু স্যামসনদের মতো তরুণের ছড়াছড়ি। তাদের ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটার সম্ভাবনাই বেশি। আর বোলিংয়ে আছেন জসপ্রিত বুমরাহ, হর্শিত রানা, কুলদিপ যাদবের মতো অভিজ্ঞরা আর তেমনটা হলে শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভারত।
পাকিস্তান : বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়াই তরুণদের সুযোগ দিচ্ছে। সালমান আগার অধিনায়কত্বে নতুন দল গড়ে তোলার চেষ্টায় আছে তারা। দুয়েকজন ছাড়া দলটির প্রায় সবাই নতুন। শাহিন আফ্রিদি, ফখর জামান, হাসান আলী, হারিস রউফদের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে আছেন হুসেইন তালাত, সালমান মির্জাদের মতো তরুণরা।
আফগানিস্তান : ঘরের মাঠের মতোই আত্মবিশ্বাসী। রশিদ খান, গুরবাজ, নবী, নাভিন-উল-হক- তাদের স্পিন আক্রমণ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কন্ডিশনে সবচেয়ে বড় শক্তি।
শ্রীলঙ্কা : ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন হলেও দলটি পুরোপুরি বদলে গেছে। ব্যাটিং ভরসা নিসাঙ্কা, বোলিংয়ে রহস্যময় থিকশানা ও গতি-স্লিং অ্যাকশনের পাথিরানা। তবে সাম্প্রতিক ব্যর্থতা তাদের জন্য সতর্কবার্তা।
সমর্থকদের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
আফগানিস্তান কি এবার ট্রফি ছুঁতে পারবে? পাকিস্তান কি বিশৃঙ্খলার মাঝেও ছন্দ খুঁজে পাবে? ভারত কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে, নাকি পূর্ণশক্তির দল নামাবে? বাংলাদেশ কি নতুন মানসিকতা দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করবে? রাজনীতি ও গরম আবহাওয়া পাশে থাকলেও, বক্স-অফিস ক্রিকেটে সবার চোখ থাকবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে- তারপর হয়তো পাকিস্তান-আফগানিস্তান, কিংবা শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের লড়াইয়েও। এশিয়া কাপ আবারও হয়ে উঠছে উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ মঞ্চ।
