বাংলাদেশ ২.০ চ্যালেঞ্জ কাপ

মোহামেডানকে উড়িয়ে মৌসুম শুরু বসুন্ধরা কিংসের

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

গত বছর ঘরোয়া ফুটবলে নতুন সংযোজন হয়েছে ‘বাংলাদেশ ২.০ চ্যালেঞ্জ কাপ’। এক ম্যাচের এই টুর্নামেন্ট দিয়ে সূচনা হয় মৌসুমের। উদ্বোধনী আসরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বসুন্ধরা কিংস। এবার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এসেছিল সাদা কালোদের সামনে। কিন্তু দশ জনের দল পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না তারা। গতকাল শুক্রবার বিকালে কুমিল্লার শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডানকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে মৌসুম শুরু করল বসুন্ধরা কিংস। গত বছর কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত প্রথম আসরেও তারা শিরোপা জিতেছিল সাদা কালোদের ৩-১ গোলে হারিয়ে। এদিন ঘটনাবহুল এক ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েলট গোমেজ দুটি ও আরেক ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল আগস্ত একটি এবং নাইজেরিয়ান এমানুয়েল সানডেও একটি গোল করেন। মোহামেডানের হয়ে এক গোল শোধ দেন উজবেকিস্তানের মোজাফফরভ।

এক ম্যাচে কত কিছুই না ঘটল। মাঠ প্রস্তুত না থাকায় ১১ মিনিট দেরিতে খেলা শুরু হয়। এক ম্যাচে দুটি পেনাল্টি পায় দুই দল। কিংসের সোহেল রানার লালকার্ড দেখেন। মাঠে দর্শকদের সেই স্মোক ফ্লোয়ার ছোঁড়ায় খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। শেষ ১৮ মিনিটে কিংসের তিন গোল। কুমিল্লার দর্শকরা এমন ঘটনাবহুল এক ম্যাচই দেখলেন। প্রতিশোধের আগুনে জ্বেলেছিলেন মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ কাপের গত আসরে দর্শক উচ্ছঙ্খলায় দলটি হেরেছিল কিংসের কাছে। এবার মোহামেডানের লক্ষ্য ছিল, সেই হারের প্রতিশোধ নিয়ে নিজেদের ঘরের শোকেজে এই ট্রফিটি যোগ করার। কিন্তা তারা পারলেন না। এ ম্যাচ দিয়ে কিংসের ডাগআউটে অভিষেক হয়ে আর্জেন্টাইন কোচ মারিও কার্লোস গোমেজের। প্রথম ম্যাচেই প্রথম ট্রফি জেতার সুবাদে দারুণ অভিষেকই হলো এই আর্জেন্টাইন কোচের।

গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালানো ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ছবি সংবলিত পোস্টারে ‘অ্যারেস্ট দিস ক্রিমিনাল’ লিখে গ্যালারিতে এলেন কিছু দর্শক। আর মাঠের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ম্যাচ শুরু হতে হলো বিলম্ব। এমন সব আবহে শুরু ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে বল দখলের লড়াইয়ে বক্সের ঠিক ওপরে আর্নেস্ট বোয়াটেংকে ফাউল করে বসেন কাজী তারিক রায়হান। মোজাফফরভের ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে প্রতিহত হয়। চার মিনিট পর সোহেল রানার থ্রু পাস ধরতে বক্সে ঢুকে পড়া দোরিয়েলতনকে বক্সের ভেতরে পেছন ফাউল করেন মেহেদী হাসান মিঠু। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সুজন হোসেনকে বিপরীত দিকে ছিটকে দিয়ে কিংসকে এগিয়ে নেন দোরিয়েলতন।

একটু পর মিঠুর লম্বা থ্রোয়ে বক্সের জটলার ভেতর থেকে পা চালালেও বলের নাগাল পাননি স্যামুয়েল বোয়াটেং। বলের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারলে সমতায় ফিরতে পারত মোহামেডান। সাদাকালো জার্সিধারীদের অপেক্ষা ফুরোয় ত্রয়োদশ মিনিটে। সফল স্পট কিকে সমতার স্বস্তি এনে দেন মোজাফফরভ। মিঠুর থ্রো ইনে বক্সে তারিক প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মোহামেডান।

৩৫তম মিনিটে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে মাথায় কিছুটা আঘাত পান সোহেল রানা। সাইডলাইনে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে এই মিডফিল্ডার দ্রুতই মাঠে ফিরলে স্বস্তি ফেরে কিংস সমর্থকদের মনেও। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ভালো সুযোগ নষ্ট করেন দোরিয়েলতন। ডান দিক দিয়ে দ্রুত আক্রমণে ওঠা রাফায়েলের কাটব্যাক খুঁজে পায় তাকে। কিন্তু এই ব্রাজিলিয়ানের শট সোজাসুজি যায় সুজনের কাছে। ৬২তম মিনিটে বড় ধাক্কাটা খায় কিংস। মোহামেডানের মিনহাজুর আবেদিন রাকিবকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন মিডফিল্ডার সোহেল। তিন মিনিট পর ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ক্রসে দোরিয়েলতনের হেড দারুণ ক্ষিপ্রতায় আটকান সুজন। ৭২তম মিনিটে পরাস্ত হন সুজন। সোহেল রানা জুনিয়রের কর্নার ডিফেন্ডাররা ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হওয়ার পর রাফায়েলের অভাবনীয় ভলি খুঁজে পায় ঠিকানা। এই গোলের রেশ থাকতেই ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় কিংস। দোরিয়েলতনের বুদ্ধিদ্বীপ্ত পাস ধরে ইমানুয়েল সানডে নিখুঁত শটে সুজনের পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন বল। গত মৌসুমে সানডে খেলেছিলেন মোহামেডানে। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোলটি তিনি উদযাপন করেছেন সাদামাটাভাবে।

সব অনিশ্চয়তার ইতি দোরিয়েলতন টেনে দেন ৮৬তম মিনিটে।

সতীর্থের পাস ধরে মিঠুকে বডি ডজে ছিটকে দিয়ে, সুজনকে ডামি শটে বোকা বানিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এরপরই মোহামেডান সমর্থকরা গ্যালারি থেকে মাঠে ফ্লেয়ারসহ নানা কিছু ছুঁড়তে থাকেন। তাতে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। গত বছর একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিংস অ্যারেনায়। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে ফের শুরু হয় খেলা, কিন্তু মোহামেডান পারেনি ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো ইঙ্গিত দিতে। হারের হতাশা নিয়ে নতুন মৌসুম শুরু হলো আলফাজ আহমেদের দলের।