বিসিবির নির্বাচন

কাউন্সিলরশিপ বাতিলের শঙ্কায় তামিম ইকবাল

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন নিয়ে এর আগে এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি আগে কখনও হয়েছে বলে শোনা যায় না। দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের ভোটগ্রহণের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তাপ। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শুরু হয়েছে দুই প্রার্থী বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের মধ্যে। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে একজন পরিচ্ছন্ন খেলোয়াড় হিসেবে জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। ব্যাটসম্যান হিসেবে ভয়ডরহীন ক্রিকেটই খেলেছেন সব সময়। কিন্তু বিসিবির নির্বাচন করতে এসে কি সেরকম ভয়ডরহীনই থাকতে পারছেন তামিম ইকবাল?

প্রশ্নটা উঠছে কারণ, শোনা যাচ্ছে বিসিবির নির্বাচন যতই কাছে আসছে, ওল্ড ডিওএইচএস কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের ওপর চাপও তত বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে আপত্তির শুনানিতে অংশ নেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে তামিম নিজেও বলেছেন, ‘আমি ভয়ডরহীন (ফিয়ারলেস) ভাবেই চেষ্টা করছি। চাপ আমার ওপরে অনেক আছে। কালকে আমার কাউন্সিলরশিপও বাতিল হয়ে যেতে পারে। এখন কেন হবে, এটা আপনারা খুব ভালো করে বোঝেন।’

তামিম এখনও আশাবাদী ৬ অক্টোবর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে একই সঙ্গে তার প্রশ্ন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন কেন হবে না? আমাদের এই মুহূর্তে যে সরকার আছে, এই সরকারের দায়িত্বের মধ্যে কি এটা নেই যে সংস্কার করা? সরকারের একটা অংশ যদি এভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তাহলে ভাইয়া এটা কি একটা ভালো উদাহরণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?’ ওল্ড ডিওএইচএস কাউন্সিলর হলেও তামিম শুনানিতে এসেছিলেন মূলত গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের সহসভাপতি হিসেবে। দুদকের পর্যবেক্ষণের কারণে যে ১৫টি ক্লাবকে খসড়া ভোটার তালিকায় রাখা হয়নি, তার একটি এই গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তামিম বলেন, ‘আমি ওনাদের স্পষ্টভাবে একটা জিনিস বলেছি যে দেখেন, এখানে ১৫টা ক্লাবের চেয়ে বড় বিষয় হলো আপনারা যে সিদ্ধান্তটা নিতে যাচ্ছেন, আপনার ৩০০ ক্রিকেটারের কথা মাথায় রাখতে হবে। এই ১৫টা ক্লাব বিভিন্ন বিভাগে নিয়মিত ক্রিকেট খেলে, খেলোয়াড়দের পেমেন্ট করে। ওই টাকা দিয়েই কিন্তু তাদের একটা বছরের ৭০-৮০% আয় হয়। তাদের সঙ্গে তাদের পরিবারও জড়িত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এই জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’

তামিম উল্টো প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই ১৫টা ক্লাব নিয়ে যে ইস্যু ছিল, ইস্যুটা তো গত ছয়-সাত মাস ধরে চলমান ইস্যু। এখনই আপনাদের এই কাজটা কেন করতে হলো? দ্বিতীয়ত, আপনাদের যদি কোনো অবজেকশন থাকত, তাহলে আপনারা কাউন্সিলর ফর্মটা দিলেন কেন?’ বিসিবির এবারের নির্বাচন নিয়ে ‘নোংরামি’র অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন তামিম। গতকাল আবারও বললেন সে কথা, ‘জিনিসগুলো কেন করা হচ্ছে, এটা নির্বাচনে একটা পক্ষকে দুর্বল করার জন্য করা হচ্ছে, এটা সবাই জানে। এত খারাপ সময় এসে গেল যে জেতার জন্য বা নিজের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আপনারা ৩০০ জন ক্রিকেটারের জীবনের সঙ্গে খেলা শুরু করলেন! আমি ক্রিকেটের সিনিয়রদের থেকে শুনেছি, ক্রিকেট বোর্ডের ইতিহাসে কোনোদিন এত নোংরামি তারা দেখেননি। যে জিনিসটা আপনারা করে যাচ্ছেন, এটা কিন্তু একটা ইতিহাস হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতেও কিন্তু এই জিনিসগুলোই অনুসরণ করা হবে।’ তামিমের ‘বিনীত অনুরোধ’, ‘এই জিনিসগুলো আপনারা কইরেন না। সৎভাবে নির্বাচনটা করেন।’

সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আপনারা প্লিজ গঠনতন্ত্রটা বের করে দেখেন সাবেক ক্রিকেটার লেখা আছে। কিন্তু সাবেক ক্রিকেটারের কোনো ব্যাখ্যা আছে কিনা যে আমার অফিশিয়ালি রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করতে হবে?’ তামিম সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন ৫ মাস আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। ফলে তাকে সাবেক ক্রিকেটার ধরতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তামিম নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে সর্বশেষ ৫ মাসে একটা ম্যাচও খেলিনি, আমি যদি নিজের মনের মধ্যেই চিন্তা করে রাখি আমি আর ক্রিকেট খেলব না। আমি তো সাবেক হয়েই গেলাম।’

যদিও নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তালিকায় সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে রয়েছেন। তাদের অনেকেই অবসর নেননি। তামিম বিশেষভাবে বললেন মোহাম্মদ আশরাফুলের কথা। তিনি বলেন, ‘বিসিবি যে ১৫ জনের তালিকা দিয়েছে মোহাম্মদ আশরাফুলতো সম্প্রতি ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলে এসেছে। আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাই আমাদের প্রেসিডেন্ট, উনিও অফিশিয়ালি কোনো জায়গায় রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করেননি। আপনি যদি এভাবে আমাকে ধরতে চান। আপনারাও ধরা পড়বেন।’

এদিকে তামিম ইকবালের কাউন্সিলরশিপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেছিলেন যিনি, তাকেই পাওয়া যায়নি নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে। শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। ফলে বিসিবি নির্বাচনে সাবেক এই অধিনায়কের অংশ নেওয়া নিয়ে তাই আপাতত কোনো সংশয় নেই। বিসিবি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর গত বুধবার একটি আপত্তিপত্র জমা পড়ে ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কাউন্সিলর তামিমের বিরুদ্ধে।

কানাডাপ্রবাসী সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর স্বাক্ষরিত অভিযোগে দাবি করা হয়, আইসিসি স্বীকৃত ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নেওয়ায় বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তামিম কাউন্সিলর হতে পারেন না। তিনি ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কেউ নন এবং তাকে ক্লাবের কাউন্সিলর করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানানো হয় অভিযোগপত্রে। তবে এ দিনই হালিম শাহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানান, এই ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি করেননি এবং তিনি এসবের কিছুই জানেন না।